উদারনৈতিক অর্থনীতির ডেকে আনছে দুর্ভিক্ষকে। সেই সংকট এতটাই গভীর যে আগামী ৬ মাসের মধ্যেই বিশ্বের ২২টি দেশে দেখা যেতে পারে খাদ্যসংকটের অশনি সংকেত। জানাচ্ছে দেখছে রাষ্ট্রসংঘ।
একদিকে ক্ষুধার অন্ন জোগাতেই মুখ থুবড়ে পড়ে জীবন। অনাহার অপুষ্টি সাদরে বরণ করে আনে মৃত্যুকে। অন্যদিকে খাবারের, টাকাপয়সার ছড়াছড়ি। কিচ্ছু না-থাকার পাশেই উপচে পড়া বাহুল্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈষম্যই নিও-লিবারাল বা উদারনৈতিক অর্থনীতির দান। সেই পরিস্থিতিই ডাক পাঠাচ্ছে দুর্ভিক্ষকে। সংকট এতটাই গভীর যে আগামী ৬ মাসের মধ্যেই বিশ্বের ২২টি দেশে খাদ্যসংকটের অশনি সংকেত দেখছে রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘের সমীক্ষা বলছে, প্যালেস্তাইন, লেবানন, নাইজেরিয়া, সুদান, মায়ানমার, জিম্বাবোয়ে, কেনিয়া, সোমালিয়া- এমন অনেকগুলি দেশই দুর্ভিক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে। তা বলে ভারত কি খুব নিরাপদ? না, আদৌ নয়। অদূর ভবিষ্যতেই খাবার মেলা না-মেলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে আমাদেরও, সাফ জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা।
আরও শুনুন :
সিদ্ধিবিনায়কের গাঁদাফুলে শাড়ি, মাটির ব্লাউজ! পরিবেশকে ভালো রেখেই সাজ আলিয়া-সোনমদের
ধনধান্যপুষ্পে ভরা এই বসুন্ধরার মাঝে আমাদের দেশ ভারত একসময় পেয়েছে ‘সকল দেশের সেরা’র খেতাব। বিশ্বের দরবারে এখনও এ দেশ সগৌরবে মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়ে। কিন্তু খুব শীঘ্রই অনাহার এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে এ দেশেও, তেমনটাই জানিয়েছেন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ উৎসা পট্টনায়েক। সম্প্রতি তিনি বলেন যে, নব্য উদারনীতির যুগে খিদে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। আরও পাওয়ার খিদে। আর সেই পাওয়ার দাম চুকিয়ে দিতে হচ্ছে গোটা দেশের বড় অংশের মানুষকে। সেই যে নাগরিক কবিয়াল তাঁর গানে বলেছিলেন, ‘কেউ যদি বেশি খাও/ খাওয়ার হিসেব নাও/ কেননা অনেক লোক ভালো করে খায় না’; আসলে তো সেটাই আসল কথা। কেউ বেশি পেলে অন্য কারও ভাগে পাওয়ার ভাগ তো কমে যাবেই। তাই আম্বানিদের বিপুল বিলাসবহুল বিয়ের বাসরের আড়ালেই দাঁড়িয়ে আছে আরও একটা বিস্তৃত ভারতবর্ষ, যার মুখ খিদেয় শুকনো, যার চোখে জলের দাগ। সরকারি তথ্যই বলছে, জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ তাদের খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অর্থাৎ গণহারে দারিদ্র্য কমেছে, এই দাবি করার অবস্থানেই নেই ভারত সরকার। সমীক্ষা বলছে, ২০২০-তে বিশ্ব খাদ্য সূচকে ভারতের স্থান ছিল ৯৪তম। আর এখন? ১১৬ দেশের বিশ্ব খাদ্য সূচকের মধ্যে সেই ভারত নেমে এসেছে ১০১তম স্থানে।
আরও শুনুন :
খিদের ভারতবর্ষের কী হবে! স্বাধীনতার এত বছর পরেও ক্ষুধা সূচকে ফিরল গান্ধীর উদ্বেগই
সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জে জমা-পড়া সমীক্ষায় বিশ্ব জুড়ে খাদ্যসঙ্কটের এক ভয়াবহ ছবি সামনে এসেছে। ওই সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে যে সমগ্র বিশ্বে প্রতি চার সেকেন্ডে একটি করে প্রাণ চলে যাচ্ছে কেবল না খেতে পেয়ে। এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩৪.৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন। পৃথিবীতে প্রতি ন-জনে এক জন ভুগছেন খাদ্য এবং পুষ্টির অভাবে। আর ভারতও এই হাহাকারের বাইরে নয়। অথচ বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৪০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয়ে যায়, এমনটাই বলছে রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। আর এরই মধ্যে আমাদের দেশ ভারতসহ আরও ৪৫টি দেশের কোটি কোটি মানুষের দিন কাটে অনাহারে, অর্ধাহারে। কেন জানেন? বিলাসিতা ও আধুনিকতার পাল্লায় পড়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, বেহিসেবি খরচ এমনকি রেস্তরাঁতে অথবা বিভিন্ন দূরপাল্লার যানবাহনগুলিতেও প্রচুর খাবারের অপচয় রোজকার ছবি। শুধু কি তাই? বাড়িতে ফ্রিজবন্দি প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। এখানেই শেষ নয়। যথার্থ সংরক্ষণ পদ্ধতির অবলম্বনের অভাবে খাদ্যশস্য পচে নষ্ট হয়। আর এত সব নষ্ট হওয়া খাবার সোজা পৌঁছে যায় ডাস্টবিনে! এরই মধ্যে শুধু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে, এক শ্রেণির মানুষ আবর্জনার স্তূপের মধ্যে খুঁটে খায় বাসি-পচা খাবার। এক দিকে অপচয়ের ধ্বংসলীলা, আর ঠিক তার উল্টোদিকে অন্য দিকে অনাহার। শুধু তো দারিদ্র্যই নয়, পরিবেশগত সমস্যার প্রভাবে সৃষ্ট নানান বিপর্যয় খাদ্যের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলেছে আরও অনেকখানি। এর পাশাপাশি এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের যুদ্ধ আর সেই যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার খেলাও চলছে। সবকিছুর মধ্যে থেকে কিছু মানুষের হাতে জমে উঠছে প্রভূত ক্ষমতা আর প্রচুর পুঁজি। আর উলটোদিকে দাঁড়িয়ে আছে অগণিত মানুষ, যাদের পেটে রোজকার খাবারটুকুও জোটে না। মানুষের চাঁদে যাওয়ার যুগেও যে পূর্ণিমা চাঁদকে ঝলসানো রুটি বলার দিন শেষ হল না, এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়!