শীতকাল এলেই বাঙালির প্লেটে ভাত ছেড়ে রুটির আনাগোনা। বিশেষ করে রাতের খাবারে। তা বাঙালি কি স্বাস্থ্যসচেতন, নাকি স্রেফ শীতকাতুরে?
বাঙালি নাকি ভেতো। ভাতের সঙ্গেই তার বরাবরের দোস্তি। তা নদীমাতৃক দেশের জলহাওয়ায় ভাত মাছের সুখী গেরস্থালি তো হওয়ারই কথা। গম-জোয়ার-বাজরা চাষ করতে হবে, যে চাষে জলের প্রয়োজন কম, এমন রুক্ষ ভূমি তো বাংলার নয়। তাই বাঙালির পাতেও রুটি নয়, অন্নের আনাগোনা। বড়জোর লুচির মতো শৌখিন সুখাদ্য। তবে দিনে দিনে সময় বদলেছে। কাজের রুটিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বদলে নেওয়া হয়েছে চিরকেলে খাদ্যাভ্যাসও। বাঙালিও তার ব্যতিক্রম নয়। তার নয়া রুটিনে কবে থেকেই রুটি ঢুকে পড়েছে তাই। জলখাবারে কি রাতের খাবারে। ডায়েটের কথা ভাবলে ডাল রুটি ছাড়া তার চলছে না আর। আর সেসব হিসেব না কষলেও, শীত পড়লেই অধিকাংশ বাঙালি বাড়িতে দেখা যায়, রাত্রিবেলার খাবারে ভাত নয়, ভোট যায় রুটির পক্ষে। কিন্তু কেন? শীতের সঙ্গে রুটির এমন বং কানেকশনের কারণ কী! বাঙালি কি স্বাস্থ্যসচেতন, নাকি স্রেফ শীতকাতুরে?
এমনিতে ভাত বেশি স্বাস্থ্যকর না রুটি, সে প্রশ্ন তো পুরনো হয়েও তামাদি হয় না। ভাত খেলেই নাকি মোটা হয়ে যেতে হবে! সুতরাং ভুঁড়ির অপবাদ দূর করতে বাঙালি ভাতকেই দূরে রাখছে আজকাল। আবার ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যত বাড়ছে, তত রুটির কদরও বাড়ছে। ২০১৯ সালে ‘Nutrition Metabolism and Cardiovascular Diseases’ জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়ায় তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ছিল। রুটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে বলেও মনে করা হয়। তবে পুষ্টিবিদেরা কিন্তু সাফ জানাচ্ছেন, ভাত ও রুটি দুটিই পুষ্টিগুণে ঠাসা। ভাত খাওয়ার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার, বা সুগার বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক নেই, যদি পরিমাপ ঠিক থাকে। আর যদি আপনার শরীরে তেমন কোনও বড় সমস্যা হয় যাতে ভাত কিংবা রুটি কোনও একটিকে বর্জন করতে হবে, সে কথা চিকিৎসকই বলে দেবেন। তবে নিজে নিজে বা কারও কথা শুনে প্রভাবিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সাধারণত রুটির পরিবর্তে ভাতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে ভাত খেলে তাড়াতাড়ি পেট ভরে যায়। আবার আটায় থাকে গ্লুটেন নামক একটি উপাদান, যা সকলের পক্ষে সহজপাচ্য নয়। তাই রুটি খেয়ে বদহজমের সমস্যায় ভোগেন অনেকে।
এ তো গেল স্বাস্থ্যের কথা। এর বাইরেও একটি দিক আছে। গরমের দাবদাহে যে বাঙালি রুটির নাম মুখে আনে না, সে-ই আবার শীতের রাতে রুটির দিকে ঝোঁকে। যদিও পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাত খেলে শরীর ঠান্ডা হয়, আর রুটি খেলে গরম, এই ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। আসলে ভাতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে মানুষের মনে হয় ভাত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। আর সেই কারণেই শীতের রাতে ভাত সরিয়ে রুটিকেই কাছে টানেন বাঙালিদের বড় অংশ। মাঘের শীত বাঘের গায়ে, এহেন প্রবাদ যে বাঙালি বানিয়েছে, শীত যে তাকে কাবু করবেই, সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না! সুতরাং রুটি খেয়েই যদি ভরা শীতে সে ওম খুঁজে পায়, তবে ক্ষতি কী!