বাড়ি ভাড়ার কথা জানেন, কিন্তু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়ার কথা শুনেছেন কি? জানেন কি, এই সুযোগেই আপনার ব্যাঙ্ক ফাঁকা করার ছক কষছে প্রতারকেরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ডিজিটাল যুগে অপরাধও চলে ডিজিটাল সুযোগসুবিধাকে হাতিয়ার করেই। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনি ভাবছেন জামানত সুরক্ষিত করলেন, তো প্রতারকেরাও সেই ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই আপনার জামানত হাতিয়ে নেওয়ার ছক কষছে। উপরন্তু সেই ছক আরও নিখুঁত। তাই বারেবারেই সাইবার ক্রাইম নিয়ে সতর্কবাণী শোনা যায় আজকাল। সেই তালিকাতেই এবার নয়া সংযোজন। অন্য কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে আপনার টাকা হাতানোর ফাঁদ পাতছে জালিয়াতরা, সতর্ক করল কেন্দ্র সরকার।
সম্প্রতি সাইবার ক্রাইমের নয়া ধরন ডিজিটাল হাউস অ্যারেস্ট নিয়ে চিন্তিত সরকার। বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে যত প্রতারণার খবর সামনে এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং ভয় ধরানো এই বিশেষ ধরনের প্রতারণাটিই। এই ধরনের প্রতারণায় সাইবার জালিয়াতেরা ইডি, সিবিআই, কি আয়কর দপ্তরের আধিকারিক- এমন কোনও পরিচয়ে ফোন করে, এবং বেআইনি কাজের প্রমাণ মিলেছে বলে ভয় দেখিয়ে তাদের শিকারকে বাড়িতে আটকে রাখে। তাদের ব্যাঙ্কের তথ্য চাওয়া হয়, আর সমস্ত কিছু হ্যাক করে লুঠ করে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার নতুন করে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানাল, ডিজিটাল অ্যারেস্টের জন্য অনেকসময়ই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিচ্ছে প্রতারকেরা। এমনিতেই অনলাইন প্রতারণার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় প্রতারকেরা নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে না। কারণ এতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দেখা যাচ্ছে, এই ভাড়ায় নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বেআইনি ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’ তৈরি করেই টাকা হাতাচ্ছে প্রতারকেরা। ভয়ের কথা হল, সাধারণ মানুষের থেকেই ভাড়া নেওয়া হয় অ্যাকাউন্টগুলি। জানা যাচ্ছে, যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাড়িভাড়া চাওয়া হয় আজকাল, একইভাবে মূলত টেলিগ্রাম ও ফেসবুক ব্যবহার করে ভাড়া নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোঁজে অপরাধীরা। শর্তসাপেক্ষে মূল মালিকের থেকে অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে লেনদেন চালায় তারা, বিনিময়ে ভাড়া হিসেবে টাকা দেওয়া হয়। এদিকে এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই চলে বেআইনি লেনদেন। লগ্নির ভুয়ো ওয়েবসাইট, কিংবা কোনও অনলাইন জুয়ার ভুয়ো ওয়েবসাইট, আবার কখনও শেয়ার কেনাবেচার ভুয়ো মাধ্যমে এই ‘পেমেন্ট গেটওয়ে’ ব্যবহার করে অপরাধীরা। একবার কেউ এই ফাঁদে পা দিয়ে টাকা ঢাললেই, নিমেষে তা পৌঁছে যায় সাইবার জালিয়াতদের ভাড়া নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া অপরাধের টাকার অঙ্ক দেশের মোট জিডিপির প্রায় ০.৭ শতাংশ।
আজকের দিনে ডিজিটাল লেনদেনের ছড়াছড়ি সর্বত্র। ক্যাশলেস ভারতে অনেকেই আর সঙ্গে নগদ টাকা রাখছেন না। অনলাইন সাইট থেকে নিত্যদিনের বাজারহাট, সব জায়গাতেই নানা ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে টাকা মেটাচ্ছেন। সেখানে এহেন সাইবার প্রতারণার জাল ছড়ানো থাকলে বিপাকে পড়তে পারেন যে কেউই। অন্যদিকে, কেউ না বুঝে যদি এই অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়ার চক্করে জড়িয়ে যান, সেখানেও বিপদ বাড়বে বই কমবে না। সুতরাং, এই নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ নিয়ে আগেভাগেই হুঁশিয়ারি শোনাল কেন্দ্র।