ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়োচ্ছে জীবন। সুতরাং আবেগের সময়ও বাঁধাধরা। সে কথাই যেন বুঝিয়ে দিল বিমানবন্দরের নিয়ম। যেখানে আলিঙ্গনের জন্যেও সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন, শুনেই নেওয়া যাক।
বিদায়ের আগে আবেগের আলিঙ্গন? নৈব নৈব চ। অন্তত এই বিমানবন্দরে তো বাড়তি আবেগের জায়গাই নেই। আলিঙ্গনের জন্যও সেখানে বেঁধে দেওয়া হয়েছে সময়। ব্যস্ত দুনিয়াকেই যেন চেনাচ্ছে এই বিমানবন্দরের নিয়ম।
ব্যাপারটা ঠিক কী?
বিমানবন্দর মানেই অফুরান যাওয়া আসার স্রোত। কাউকে ছেড়ে যাওয়া, কাউকে ফিরে পাওয়া। ফলে যে কোনও বিমানবন্দরের চেনা ছবি আবেগী ফেয়ারওয়েল। প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা। তার আঘ্রাণ মেখে নেওয়া প্রাণ ভরে। আবার কবে দেখা হবে তার নিশ্চয়তা থাকে না যেখানে, সেখানে কি ওই সাময়িক আলিঙ্গন ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ? আবেগের কাছে ঘড়ির কাঁটা বরাবরই দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু সেই পিছিয়ে পড়াতেই আপত্তি এই বিশেষ বিমানবন্দরের। সময়কে জিতিয়ে দিতেই তাই আবেগে রাশ টেনেছে বিমানবন্দরটি। বিমানবন্দরের গায়ের বিজ্ঞপ্তি বলছে, আলিঙ্গনের জন্য পাওয়া যাবে সর্বাধিক ৩ মিনিট সময়। কেউ যদি তার চেয়ে বেশি সময় ধরে আলিঙ্গনে থাকতে চান? তবে তিনি পার্কিং লটে যেতে পারেন বড়জোর। তবে বিমানবন্দরের ড্রপ অফ এলাকা, অর্থাৎ যেখানে গাড়িগুলি যাত্রীদের নামিয়ে দেয়, সেখানে আবেগ প্রকাশের জন্য বেশিক্ষণ থেমে থাকতে পারবেন না কেউ।
এ ঘটনা ঘটেছে নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিন বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরের যুক্তি, যাত্রীদের সুবিধার জন্যই এই নিয়ম লাগু করেছেন কর্তৃপক্ষ। যাতে ওই জায়গাটিতে ভিড় না হয়ে যায়, আর তার ফলে কেউ অসুবিধায় না পড়েন। কিন্তু সে কথা মানতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, এহেন নিয়ম জারি করে মানুষের স্বাভাবিক আবেগেই রাশ টানা হচ্ছে। একে মানবাধিকারে হস্তক্ষেপ বলেও মনে করছেন তাঁরা। যদিও বিজ্ঞানের হিসেব টেনেই কর্তৃপক্ষের পালটা যুক্তি, ২০ সেকেন্ডের আলিঙ্গনেই মানুষের হ্যাপি হরমোন ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। অতএব তার চেয়ে বেশি সময় ধরে আলিঙ্গনে থাকার যুক্তি দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা।
আজকের ব্যস্ত দুনিয়াতে সবকিছুই চলে নিয়ম মেনে। হিসেবের নিক্তি মেপে। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, তার বেশি খরচ করতে মানুষ স্বভাবতই পিছপা এখন। সে ব্যয় আর্থিক অঙ্কেই হোক কি আবেগের মূল্যে। সেই প্রবণতাকেই যেন পরোক্ষে চিনিয়ে দিল বিমানবন্দরের এই নিয়ম ও তার সপক্ষের যুক্তি। সেই যুক্তির সাপেক্ষেই আপাতত দ্বিধাবিভক্ত নেটিজেনরা।