দশেরা মানেই রাবণ দহন। অশুভের বিনাশ আর শুভর জয়ের প্রতীকী উদযাপন। কিন্তু এ দেশেই আছে এমন জায়গা, যেখানে রাবণ দহন করা হয় বটে, আবার সেই রাবণকেই মনে করা হয় জামাই বলে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এক দিকে বিসর্জনের বিষাদ, অন্য দিকে অশুভ শক্তির দমন উপলক্ষে শুভর জয়ের আনন্দ, এই নিয়েই বিজয়া। রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় পেতেই অকালবোধনে দেবী দুর্গার আবাহন করেছিলেন রাম। দশমীতে সেই রাবণের বিনাশ। তাই রাবণের কুশপুতুল পুড়িয়ে উদযাপন হয় দশেরা। শুভ শক্তির জয়ের উৎসবে মেতে ওঠেন মানুষ। কিন্তু এই চেনা গল্পই বদলে যায় উত্তরপ্রদেশের মিরাটে। সেখানে রাবণের কুশপুতুল পোড়ে বটে, একইসঙ্গে রাবণ সেখানে কেবলমাত্র খলনায়ক নন। বরং তাঁকে সম্মানই করেন এই অঞ্চলের মানুষজন।
আসলে, মিরাটের মানুষের বিশ্বাস, রাবণ হলেন তাঁদের জামাতা। হিন্দুদের দুই প্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতেই মিরাটের উল্লেখ পাওয়া যায়। আর দু’ক্ষেত্রেই দানবদের রাজা ময়-এর সঙ্গে মিরাটের সংযোগ টানা হয়। ময় দানবের তৈরি এই অঞ্চলের নাম ময়রাষ্ট্র থেকে মিরাটের রূপ নিয়েছে, এমনটাই মনে করেন এখানকার মানুষ। রামায়ণ মতে, এই ময়ের কন্যাই মন্দোদরী, রাবণের প্রিয়তমা পত্নী। সেই সূত্রেই মিরাট হল রাবণের শ্বশুরঘর। আর সে কথা মনে রেখেই রাবণকে একেবারে দূরে ঠেলে দিতে পারেনি মিরাট। উত্তর ভারতের অন্য এলাকার মতো এখানেও দশেরা উদযাপন হয়, রাবণের কুশপুতুল পোড়ে, তবে রাবণের জামাই আদরও মিলে যায় খানিক খানিক।
কেবল মিরাটেই নয়, দেশের আরও একাধিক স্থানে রাবণের আদর রয়েছে জামাই হওয়ার সূত্রেই। যেমন মধ্যপ্রদেশের মন্দসওর এবং বিদিশা জেলার বাসিন্দারা রাবণকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন, কারণ নামদেও বৈষ্ণব সমাজের মতে মন্দোদরী আসলে মন্দসওর-এর মেয়ে। তাই ‘রাবণ দহন’ পালন করেন না এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। আবার রাজস্থানের যোধপুরে ‘রাবণ কি চানওয়াড়ি’ নামের এক স্থানে মন্দোদরীর সঙ্গে রাবণের বিয়ে হয়, এমনও জনশ্রুতি রয়েছে। তাই যোধপুরও রাবণ দহনে নারাজ।
আসলে ভারতবর্ষ এমনই এক বিচিত্র দেশ। ক্ষমা আর ভালোবাসাই তার ধর্ম। সকলকে আপন করে নেওয়াই তার স্বভাব। খলনায়ককেও তাই সে ভালোবাসায় ভোলাতে পারে। সংস্কৃতির এমন নানা গল্পগুজবে দেশের সেই আত্মাকেই চিনে নেওয়া যায়।