শাড়ি পরেন পুরুষরা। সাজও একেবারে মহিলাদের মতো। ওইভাবে গরবায় অংশ নেন সকলে। দীর্ঘদিন ধরে এমনই নিয়ম। যা নিষ্ঠাভরে পালন করে আসছেন এলাকার পুরুষরা। নারী শক্তির আরাধনায় এমন অভিনবত্ব কোথায় দেখা যায়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শাড়ি পরে মা’কে বরণ করছেন পুরুষরা। চন্দননগরের এক বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজোয় এমনি নিয়ম। তবে পুরুষদের মহিলা সেজে মাতৃ আরাধনায় চল বাংলার বাইরেও রয়েছে। শাড়ি পরে মহিলাদের মতো সেজে পুরুষরাই দেবীর আরাধনা করেন। এমনটা চলে আসছে দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে।
বাংলার বাইরে দুর্গাপুজোর চাইতে নবরাত্রি অধিক জনপ্রিয়। আরাধনা সেই মহামায়া দেবী দুর্গার। তবে চারদিনের বদলে নয়দিন ধরে পুজো চলে। উত্তরভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই নবরাত্রি ঘটা করা উদযাপিত হয়। এদিকে গুজরাটও কম যায় না। সেখানকার বিখ্যাত গরবা অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকতে বিদেশ থেকে অতিথিরা হাজির হন। আসলে, এই গরবা হল বিশেষ এক লোকনৃত্য যা দেবীর আরাধনার সঙ্গে অঙ্গাগীভাবে যুক্ত। ভক্তিমূলক গানের তালে দুটি লাঠি নিয়ে বিশেষ ছন্দে এই নাচ অনুষ্ঠিত হয়। তাতে লেহেঙ্গা পরে অংশ নেন মহিলারা। পুরুষরাও সঙ্গী হিসেবে গরবায় যুক্ত থাকেন। তাঁদের পোশাক খানিক আলাদা। ব্যতিক্রম আহমেদাবাদের বারোত সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের পুরুষরা গরবায় অংশ নেন মহিলা সেজে। লেহেঙ্গা,চোলি কিংবা শাড়ি পরেই হাজির হন উৎসব প্রাঙ্গণে। ওইভাবে গরবায় অংশ নেন। নাচে গানে হৈ হৈ করে দেবীর আরাধনায় মাতেন সকলে। সাজ আরও নিখুঁত করতে কেউ কেউ চুড়ি, টিপ এমনকি সিঁদুর অবধি পরেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এমনটা করার নেপথ্যে কারণ কী?
সেক্ষেত্রে পিছিয়ে যেতে হয় কয়েকশো বছর। আসলে এই নিয়মের নেপথ্যে রয়েছে এক অভিশাপ। স্থানীয়দের বিশ্বাস সেই অভিশাপের জেরেই এমন অদ্ভুত নিয়ম মানতে হয় তাঁদের। আহমেদাবাদের যে অঞ্চলে এই নিয়ম দেখা যায়, স্থানীয়দের কাছে তা ‘সাদো মাতা নি পোল’ নামে পরিচিত। এখানেই নবরাত্রি উৎসব পালিত হয় ঘটা করে। তবে শাড়ি পরার নিয়ম স্রেফ বারোত সম্প্রদায়ের পুরুষদের মানতে হয়। এঁরা সংখ্যায় খুব বেশি হলে হাজার খানেক। প্রত্যেকেই শাড়ি পরেন তা নয়। তবে মাঝ বয়সীরা অন্তত নিয়ম মানার চেষ্টা করেন। শোনা যায়, এই সাদো মাতা নামে বাস্তবেই এক মহিলা ছিলেন। কেউ বলেন তাঁর আসল নাম ছিল সাদোবেন। মহিলা যেমন রূপসী, তেমনই মেধাবী ছিলেন। এলাকার মানুষ তাঁকে সম্মান করত। কিন্তু এই সম্মান সহ্য হয়নি এলাকা দখল করতে আসা এক মুঘল ব্যক্তির। সরাসরি সাদোবেনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। প্রথমে নিজেই সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন মহিলা। তাতে আরও চটে যান ওই ব্যক্তি। তাঁর বল ও ক্ষমতা অনেকটা বেশি ছিল। বাধ্য হয়ে স্থানীয় বারোত সম্প্রদায়ের সাহায্য চান সাদোবেন। পুরুষরা এগিয়ে আসেন ঠিকই কিন্তু কেউ ওই মুঘলকে আটকাতে পারেনি। কাজেই সাদোবেনের সামনে তাঁর সন্তানকে মেরে ফেলেন ব্যক্তি। এই দুঃখ সহ্য করতে পারেননি মহিলা। সবার অভিশাপ দেন, বারোত সম্প্রদায়ের আগামী প্রজন্ম পুরুষরা ভীতু হয়েই জন্মাবেন। তাঁদের স্বভাব হবে মহিলাদের মতো। বাস্তবে সেই অভিশাপ ফলেছিল কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এই ঘটনাকে মনে করে এলাকার পুরুষরা মহিলা সাজেন। মনে করা হয়, সাদোবেন-এর অতৃপ্ত আত্মা এখনও ওই এলাকায় রয়েছে। তাই তাঁকে সম্মান জানাতেই এলাকার পুরুষরা মহিলা সাজেন। অনেকে মনে করেন এমনটা করলে পরিবারের সবাই ভালো থাকবে। তাই ভয়ের চাইতেও ভক্তির জোরে এই কাজ করেন এলাকার পুরুষরা।