বলা হয়, পরধর্ম যত উন্নতই হোক না কেন, স্বধর্ম পালনই শ্রেয়। এমনকি স্বধর্ম যদি কিঞ্চিৎ দোষবিশিষ্ট হয়, তাও স্বধর্মেই স্থিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের জানতে হবে, কী এই স্বধর্ম? যা পালন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
কুরুক্ষেত্রের প্রাঙ্গনে অর্জুন আক্রান্ত হলেন বিষাদে। সেইসময় একবার তিনি বলে ফেললেন, যদি ভিক্ষা করতে হয়, তাও সই। তবু, গুরুজনদের হত্যা করে সুখভোগ করতে চাই না। চাই না রাজ্যজয় করতে। অর্জুনের এই বিষাদ দূর করতেই আবির্ভাব জগৎগুরু শ্রী কৃষ্ণের। একের পর এক উপদেশ তিনি দিতে শুরু করলেন অর্জুনকে। আসলে এই মানবজাতির উদ্দেশেই যেন ধারার মতো নেমে এসেছিল সেই জ্ঞানরাশি।
সেখানেই ভগবান এক জায়গায় বলছেন,
শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ।
স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ।।
অর্থাৎ, স্বধর্ম যদি কিঞ্চিৎ দোষবিশিষ্টও হয়ে থাকে, তথাপি তা উত্তমরূপে পালিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বধর্মে নিধন কল্যাণকর, কিন্তু পরধর্ম বিপজ্জনক।
আরও শুনুন: Spiritual: হিন্দু ধর্মে কি সত্যিই আছে ৩৩ কোটি দেবতা?
এই স্বধর্মের প্রকৃত অর্থ আমাদের অনুধাবন করতে হবে। অনেকেই একে রিলিজিয়ন অর্থে যে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বোঝায়, তার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। তখন অর্থটা এমন দাঁড়ায় যে, আমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ। অন্যের ধর্ম ভয়াবহ। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, যিনি ঈশ্বর, যিনি মানব জাতির কল্যাণের কথা উচ্চারণ করছেন, তিনি এমন বিভাজনের কথা বলবেন কেন?
আসলে, তিনি বিভাজনের কথা বলেনওনি। আমাদের অর্থ উপলব্ধির ভুলের কারণেই এই ব্যাখ্যার বিকৃতি দেখা দেয়।
এখানে তাই স্বধর্ম অর্থে আমাদের বুঝতে হবে, নিজের ধর্ম বা কর্তব্য কর্ম। গীতা এবং মহাভারতে স্বধর্ম শব্দটি বা সহজ কর্ম বা স্বভাবনিয়ত কর্ম শব্দগুলি এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
আরও শুনুন – Spiritual: উপবাসেই কি প্রার্থনায় সাড়া দেন ভগবান?
আমাদের সমাজে চতুর্বর্ণের জন্য যার যে কাজ নির্দিষ্ট আছে, এখানে সেইদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্জুনের ক্ষাত্রধর্মে তো ভিক্ষাবৃত্তি নেই। এটি তাই তাঁর কাছে পরধর্ম। তিনি যদি ভিক্ষা করেন অর্থাৎ পরধর্ম পালন করেন, তাহলে তাঁর নিজের ধর্ম পালন ব্যাহত হবে। ব্যাহত হবে দেশরক্ষা। এই জন্যেই বলা হয়েছে, স্বধর্ম সর্বত্র শ্রেয়।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।