স্বামীর কাছে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ স্ত্রী। দাবি করেছেন খোরপোশেরও। এমনটা তো হয়েই থাকে হামেশাই। কিন্তু ঘটনা হল, এখানে স্বামীর বয়স ৮০ আর স্ত্রী ৭৫-এর বৃদ্ধা। বার্ধক্যে এসেই দাম্পত্যের লড়াই গড়াল আদালতে। কী হল তারপর?
বিয়ে যত ঘটছে, বিয়ে ভাঙার ঘটনাও তার চেয়ে কম নয়। ডিভোর্সের মামলার ঘনঘটা প্রতিটি আদালতেই। শুধু বিচ্ছেদ তো নয়, তার সঙ্গে খোরপোশ দেওয়া-নেওয়া নিয়েও আইনি তর্ক জুড়ে যায়। তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় আর নতুন করে অবাক হওয়ার কী আছে? কিন্তু বার্ধক্যের প্রান্তে এসে দাঁড়ানো কোনও দম্পতি বিচ্ছেদ চাইছেন, এমনটা তো চট করে ঘটে না। তাই ৭৫ বছরের বৃদ্ধা, ৮০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স চাইছেন দেখে খোদ বিচারপতিই অবাক হয়ে বলে ফেলেছেন, এ তো ঘোর কলি!
কী ঘটেছে ঠিক? জানা যাচ্ছে, প্রায় ছ’বছর ধরে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল স্বামী-স্ত্রীর। ৮০ বছরের মুনেশকুমার গুপ্ত সরকারি চাকরি করতেন। অবসরের পরই স্ত্রীর সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ বেধে যায়। ২০১৮ সাল থেকে সেই জট চলছে। তার মধ্যেই খোরপোশের দাবি করে মামলা করেন বৃদ্ধা। স্বামীর সঙ্গে আর এক ছাদের তলায় থাকেনও না তিনি। তবে চাইছেন, মাসিক ১৫ হাজার টাকা খোরপোশ দেওয়া হোক তাঁকে। তাঁর দাবি, স্বামী মাসে ৩৫ হাজার টাকা পেনশন পান। সেখান থেকে ভাগ দিতে হবে তাঁকে। পরিবার আদালত বৃদ্ধকে নির্দেশ দিয়েছিল, স্ত্রীর দেখভালের জন্য তাঁকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে পালটা এলাহাবাদ হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন ওই বৃদ্ধও। এই বয়সে এসে বিচ্ছেদ এবং খোরপোশের দাবি দেখে তাজ্জব বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘মনে হচ্ছে, কলিযুগ এসেই গেল!’’
আসলে ভারতীয় সংস্কৃতি মনে করে, বিয়ে মানেই সাতজন্মের বন্ধন। পুরাণ মতে, চার যুগের মধ্যে সবচেয়ে অর্বাচীন ও হীন সময় হল কলিযুগ, যেখানে মানুষ নানারকম অনাচার করে চলবে। বিয়ে ভাঙার প্রস্তাবে কলিযুগের প্রসঙ্গ টানা দেখে মনে হওয়া আশ্চর্য নয় যে, বিচ্ছেদকে একরকম অনাচার, অন্যায্য কাজ বলেই দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ, এ কথা তো অস্বীকার করা যায় না যে, দুজন মানুষের মধ্যে মনের মিল জোর করে হতে পারে না। উপরন্তু আরও নানারকম কারণেই দুজনের একসঙ্গে থাকা সুখকর নাও হতে পারে। কেউ মনে করতেই পারেন যে, ওই দম্পতি জীবনের এতগুলো বছর যদি একসঙ্গে কাটাতে পেরেই থাকেন, তাহলে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর দুজনে আলাদা হওয়ার কথা ভাবছেন কেন! বরং এই সময়েই তো পরস্পরের হাত ধরা দরকার। কিন্তু সেখানেই এ কথা মনে রাখা দরকার যে, কেউ যদি ভালো না থাকেন, তবে সেই ভালো থাকার অধিকার তাঁর আছে বইকি। আর সে অধিকার যে কোনও বয়সেই প্রযোজ্য। সুতরাং কোনও দম্পতি যদি বেশি বয়সে এসেও বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে নিজেদের ভালো থাকার পথ খুঁজতে চান, তাতে বিস্ময় বা উপহাস কোনোটিরই জায়গা নেই। এই ঘটনা কিন্তু আমাদের সে পাঠও দিয়ে গেল।