কেজরির পরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলেছেন অতিশী। এই মুহূর্তে মমতা ও অতিশীকে নিয়ে দুজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেতে চলেছে দেশ। তবে জানেন কি, দেশকে প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ, অর্থাৎ আজকের যোগীরাজ্য?
মহিলা বিল পাশ হওয়া নিয়ে যতই শোরগোল পড়ুক না কেন, জাতীয় রাজনীতিতে মহিলা মুখের সংখ্যা এখনও যথেষ্ট কম। সাংসদ-বিধায়কদের তালিকায় চোখ রাখলেই সে কথা বোঝা যায়। যে বিজেপি সরকার মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে প্রশংসা কুড়োতে চেয়েছে, সেই বিজেপির তরফেও কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখনও পর্যন্ত কোনও নেত্রীর নাম উঠে আসেনি। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই গোটা দেশে একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সরকার চালাচ্ছেন বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার অবশ্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন অতিশী। সব ঠিক থাকলে এবার দুই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পাবে দেশ। তবে, সংখ্যায় কম হলেও, এর আগেও একাধিক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছে দেশ। যে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে এখন যোগী আদিত্যনাথের পৌরুষের ধারণা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গিয়েছে, সেই রাজ্য থেকেই প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিল দেশ। তবে আশ্চর্যের কথা, সেখানেও ছিল বাংলার যোগ। এক বাঙালি নারীই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশ থেকে।
তিনি সুচেতা কৃপালনী। পাঞ্জাব-প্রবাসী ডাক্তার সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের মেয়ে সুচেতার জন্ম তৎকালীন পাঞ্জাবে, এখনকার আম্বালায়। পরিবার থেকেই জাতীয়তাবাদী চেতনা বয়ে এসেছিল সুচেতা ও সুলেখা দুই বোনের মধ্যে। সুচেতার যখন বছর দশেক বয়স, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। বাবার কাছে সে কথা শুনে শুনে ক্ষোভে-দুঃখে ফুঁসে উঠতেন সুচেতা। তার পরেই দিল্লিতে আসেন প্রিন্স অব ওয়েলস, তাঁকে সম্মান জানাতে ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হবে স্কুলের তরফে। তীব্র আপত্তি জানিয়ে সেখান থেকে সরে যান দুই বোন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার ভাবনা তখন থেকেই দানা বেঁধেছিল। সেইমতো দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ, পরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী সুচেতা দেশের কাজেই যোগ দেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সমবয়সি ঊষা মেহতা, অরুণা আসফ আলিদের সঙ্গে আন্দোলনের পুরোভাগে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারও হন। পরে দেশভাগ-দাঙ্গার সময়ে মহাত্মা গান্ধীর সহযোগী ছিলেন তিনি, নোয়াখালিতেও গিয়েছিলেন।
এর আগে, ১৯৩৬ সালেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আচার্য জে বি কৃপালনীকে বিয়ে করেছিলেন সুচেতা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বামীর তৈরি করা কিষাণ মজদুর প্রজা পার্টিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে নতুন দিল্লি লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে জেতেন, পাঁচ বৎসর পর ওই কেন্দ্র থেকেই পুনঃনির্বাচিত হন কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে শেষবারের মতো উত্তর প্রদেশের গোণ্ডা লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। ইতিমধ্যে উত্তর প্রদেশের বিধানসভার সদস্য হন সুচেতা। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তরপ্রদেশ সরকারের শ্রম, সমষ্টি উন্নয়ন ও শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। আর ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রাজ্যের দায়ভার গ্রহণ করেন সুচেতা কৃপালনী। ১৯৬৭ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের সুচেতা কৃপালনী থেকে জম্মু-কাশ্মীরে মেহবুবা মুফতি, দেশ এখনও পর্যন্ত মোট ১৬জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছে। রাজনীতিতে মেয়েদের যে অর্ধেক আকাশ এসেছিল সুচেতার হাত ধরে, সেই আকাশের অধিকার জারি রাখার কথা এ যুগেও মনে রাখা জরুরি।