খলনায়কেরাই আজকাল সিনেমার নায়ক! এমনকি ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজও করছে নায়কেরাই। কেন এহেন সিনেমা বানাচ্ছেন নির্মাতারা? বিনোদুনিয়ার নয়া ট্রেন্ড নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কঙ্গনা রানাউত। শুনে নেওয়া যাক।
শুধু ধর্ষণই নয়, কথায় বার্তায় ধর্ষণের হুমকি। চলতি কথাবার্তা থেকে গালির মধ্যে পুরে দেওয়া অবৈধ সঙ্গমের ইঙ্গিত। ধর্ষণ সংস্কৃতির সঙ্গে নিত্যদিনের এই লড়াই মেয়েদের। আর সেই চলতি অভ্যাসেরই ছাপ নানাভাবে ছড়িয়ে রয়েছে বলিউডি সিনেমায়। সেই ইস্যুতেই এবার সুর চড়ালেন অভিনেত্রী সাংসদ কঙ্গনা রানাউত। প্রশ্ন তুললেন, আজকালকার অনেক সিনেমায় নায়ক প্রায় গুন্ডার মতো কার্যকলাপ করে থাকে। তারা মেয়েদের উত্যক্ত করে, মেয়েদের তাড়াও করে কখনও কখনও, এমনকি ধর্ষণ পর্যন্ত করে বসে। আগে যে কাজগুলি খলনায়কের সঙ্গে জুড়ে ছিল, এখন নায়কের কাজে তারই ছাপ। অথচ তাদের কোনও শাস্তি হওয়া তো দূর, তারাই সিনেমা জুড়ে হাততালি কুড়িয়ে নেয়। এই বিষয়টিকে দেশের সংস্কৃতির বিরোধী বলেই মনে করছেন কঙ্গনা। আর বর্তমান সময়ে এ ধরনের ছবি যেমন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারই বিরোধিতায় সরব হয়েছেন তিনি।
আসলে, টিআরপি-কে গুরুত্ব দেওয়া বলিউড বরাবরই জানে, সিনেমা চলার জন্য নারীশরীরকে পণ্য করা তার কাছে জরুরি। বস্তুত নায়ক আর খলনায়কের লড়াই আর তার মাঝখানে নায়িকার হেনস্তা ও উদ্ধারের গল্প, এই ছকে সেই কাজটি বলিউড করেই এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মেল গেজকে তুষ্ট করার সেই ধরন অনেকখানি বদলে গিয়েছে। কবীর সিং কিংবা অ্যানিম্যাল-এর মতো ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, খলনায়ক নয়, নায়কের হাতেই নানাভাবে হেনস্তার মুখে পড়ছে নায়িকা। নারীকে নিজেদের অধিকারে রাখা, তার উপর জোর খাটানোকে ভালোবাসার প্রকাশ বলে দাবি করে বসেছে কবীর সিং। অ্যানিম্যাল একদিকে যেমন খলনায়ককে বৈবাহিক ধর্ষণ করতে দেখিয়েছে, অন্যদিকে নায়কের অবাধ যৌনাচারকেও প্রশ্রয় দিয়েছে। কথা হল, গল্পের প্রয়োজনে যদি বা এমন কিছু দেখাতে হত, সেখানে কোথাও এই বার্তা পৌঁছে দেওয়াও জরুরি যে এই আচরণ আদৌ মানবিক নয়। অথচ ছবিগুলির পরিচালক থেকে কলাকুশলী, কারও কথায় সেই বার্তাটুকু আসেনি। উলটে এই পৌরুষ সংস্কৃতিকেই কার্যত পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন তাঁরা। আর সেই প্রেক্ষিতেই জরুরি কঙ্গনার এই বক্তব্য।
আরও শুনুন:
‘মাকে কাজ করতে দিলে না কেন?’ সুপারস্টার বাবাকে প্রশ্ন করেছিলেন টুইঙ্কল
সত্যি বলতে, বিতর্কিত কথা বলার কারণে অনেকসময়ই বিপাকে পড়েন কঙ্গনা রানাউত। বিজেপি শিবিরের সাংসদ এই অভিনেত্রী সিনেমার ক্ষেত্রেও ইদানীং কালে গেরুয়া ভাবনার সুর টেনেই কথা বলেন। সেই প্রবণতাতেই এবারও তিনি দেশের সংস্কার-সংস্কৃতির কথাই টেনে এনেছেন। তবে কঙ্গনার এবারের কথাটিকে কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া চলে না। বরং বলা যায়, কেবল এ দেশের সংস্কার নয়, কোনও দেশ-জাতির পক্ষেই এ প্রবণতা অনুকরণযোগ্য হতে পারে না। যে দেশ চুলের ছাঁট থেকে টিশার্টের ছবিতে নায়ককে আঁকড়ে ধরে, সিনেমার অ্যাংরি ইয়ংম্যান বা দাবাং কপ যেখানে যুবসমাজের কাছে রোল মডেল হয়ে ওঠেন, সেখানে সিনেমার মাধ্যমে ধর্ষণ সংস্কৃতির জেগে থাকা নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক। কোনও একটি নারকীয় ধর্ষণ কাণ্ডের পর আমরা আশঙ্কিত হয়ে পড়ছি বটে, তবে সেই আশঙ্কাকে উপড়ে ফেলতে চাইলে এই প্রবণতা নিয়ে কথা বলাও একইভাবে জরুরি।