যৌন হেনস্তা কমাতে বারবার উঠছে কঠোর শাস্তির দাবি। কিন্তু অপরাধীদের কড়া শাস্তি দিলেও অপরাধের হার নিয়ে উদ্বিগ্ন আদালত। এমনকি পকসো আইনের কড়াকড়ি সত্ত্বেও কমছে না যৌন নিগ্রহের হার। ঠিক কী বলেছে আদালত?
ধর্ষণ, যৌন হেনস্তার মতো অপরাধ কমাতে বারবার কঠোর শাস্তির দাবি উঠছে। এই আবহেই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট স্থাপনের আর্জি গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পকসো আইনের আওতায় পাঁচটি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠনের প্রস্তাব পাশ হয়েছে এ রাজ্যেও। আইন অনুযায়ী অপরাধীর প্রতি কঠোর শাস্তিরই বিধান রয়েছে পকসোয়। অথচ এই আবহেই খোদ আদালত বলছে, পকসো চালু হওয়া সত্ত্বেও যৌন অপরাধের হার কমছে না। আর সেই বিষয়টিই উদ্বেগজনক।
সম্প্রতি নাবালিকাকে ধর্ষণের অপরাধে ২৩ বছরের এক যুবককে ২০ বছরের জেলের সাজা শুনিয়েছে পাঞ্জাবের আদালত। সেই প্রসঙ্গেই বিচারপতি রমেশ কুমারী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পকসো আইনের কড়াকড়ি সত্ত্বেও যৌন হেনস্তার হার বেড়েই চলেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র তথ্য খতিয়ে বিচারক বলেন, ২০২১ সালে প্রায় দেড় লক্ষ মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল, যেখানে অপরাধের শিকার হয়েছে কোনও না কোনও শিশু। ২০২০ সালে যেখানে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২৮ হাজার। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের মধ্যে নাবালিকাদের প্রতি যৌন নিগ্রহের হার লাফিয়ে বাড়ে ১৬.২ শতাংশ। প্রতি এক লক্ষ শিশুর মধ্যে নির্যাতিত শিশুর সংখ্যা কত? মামলা দায়ের করার নিরিখে সেই হার দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ২৮.৯ শতাংশ, ২০২১ সালে ৩৩.৬ শতাংশ। আর শুধুমাত্র যৌন হেনস্তার হিসেব ধরলে, ২০২১ সালেই ৫৩ হাজার ৮৭৪টি মামলায় নির্যাতিত শিশুর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৩৫৯।
সম্প্রতিই মহারাষ্ট্রের বদলাপুরে দুই খুদে পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় চমকে উঠেছে গোটা দেশ। যেখানে এক স্কুলে নার্সারির দুই পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহ করে স্কুলেরই এক সাফাইকর্মী। সে ঘটনার প্রেক্ষিতে পকসো আইন লাগু করে ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এমন নারকীয় অপরাধের ক্ষেত্রে সে দাবি ওঠারই কথা। কোনও শিশুর প্রতি যৌন হেনস্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় বলেই পকসো আইনে দোষীর জন্য চরম শাস্তির বিধান দিয়েছে দেশের ন্যায়সংহিতা। কিন্তু শুধুমাত্র কঠোর শাস্তিতেই যে ধর্ষণ সংস্কৃতি রোধ করা যাচ্ছে না, শাস্তি সত্ত্বেও ধর্ষণের হার না কমা তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে শাস্তির পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে কী সংশোধন প্রক্রিয়া জারি রাখা যেতে পারে, সে কথাও হয়তো ভেবে দেখা প্রয়োজন। আর সেই কথাটিই মনে করিয়ে দিল আদালতের এই বক্তব্য।