বাতিল হয়েছে খেলা। তাই গ্যালারিতে প্রতিবাদের সুযোগ নেই। কিন্তু এভাবে কি আন্দোলনের কন্ঠরোধ সম্ভব? একেবারেই না। খেলা নেই তো কি হয়েছে, প্রতিবাদ জানাতে মাঠের বাইরেই জড়ো হচ্ছেন সমর্থকরা। সদ্য ডার্বি বাতিলে এমনই ছবি দেখছে কলকাতা। যদিও এই প্রথম নয়, সমর্থকদের প্রতিবাদের উদাহরণ রয়েছে আরও। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এমনই এক রোববার। যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। কানায় কানায় ভর্তি স্টেডিয়াম। অন্যান্য ডার্বির মতো এদিনের ছবিও তেমন আলাদা ছিল না। শুধু সমর্থকদের চিরন্তন শত্রুতা সেদিন ছাপিয়ে গিয়েছিল অন্য কিছু। একে অন্যের বিরোধিতা করার বদলে, সেদিনের ম্যাচে পাশাপাশিই দাঁড়িয়েছিলেন ইস্ট-মোহন সমর্থকরা। ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল একটাই স্লোগান, একটাই দাবি…’রক্ত দিয়ে কেনা মাটি,কাগজ দিয়ে নয়’।
:আরও শুনুন:
দেশজুড়ে আলোড়ন, আর জি কর কাণ্ড মনে করাচ্ছে যেসব ধর্ষণ মামলা
আবারও একটা রোববার। ডুরান্ড কাপের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। বাঙালির চিরআবেগের কলকাতা ডার্বি। আর এবার এক হলেন ইস্ট-মোহন সমর্থকরা। দাবি অবশ্য অন্য। প্রতিবাদের ধরণও আলাদা। গ্যালারি জুড়ে একটাই স্লোগান ওঠার কথা, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর আর জি কর’। কিন্তু না। প্রতিবাদের সেই সুযোগটাই দেওয়া হয়নি। একদিন আগে বাতিল করা হয়েছে কলকাতা ডার্বি। কারণ হিসেবে নিরাপত্তার দোহাই দিয়েছে প্রশাসন। যদিও সে দাবি মানতে নারাজ সমর্থকরা। যেভাবে আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুতে এক হয়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা, তাতেই নাকি ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত। এমনটাই দাবি সমর্থকদের। কিন্তু প্রতিবাদের কন্ঠ্য কি আর এভাবে বন্ধ হয়? বোধহয় না। তাই মাঠের বাইরে একইভাবে জমায়েতের ডাক দেন দুই দলের সমর্থকরা। একসময় যেভাবে NRC-র প্রতিবাদে এক হয়েছিলেন ইস্ট-মোহন সমর্থকরা, ঠিক সেভাবে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এক হচ্ছেন তাঁরা। মাঠে ঢোকার সুযোগ মেলেনি তো কী হয়েছে, মাঠের বাইরেই হবে ‘খেলা’।
আরও শুনুন:
রাতের পথে কেবল ধর্ষকের অধিকার নাকি! বহু আগেই শুরু ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ আন্দোলনের
সমর্থকদের এক হয়ে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এবং তা শুধু কলকাতা বা এ দেশের মাটিতে সীমাবদ্ধ নয়। গ্যালারি থেকে বিক্ষোভের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে বিশ্বজুড়েই। প্রথমেই বলতে হয় আকাশছোঁয়া টিকিটের দাম নিয়ে ফ্যানেদের প্রতিবাদের কথা। ২০১৬ সালে লিভারপুল বনাম বরুশিয়া ডর্টমুন্ড-এর এক ম্যাচে অত্যধিক বাড়ানো হয় টিকিটের দাম। প্রতিবাদে খেলার মাঝেই গ্যালারি ছেড়ে চলে যান সমর্থকরা। ঠিক যতটাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল, খেলার তত মিনিটের মাথায় গ্যালারি ফাঁকা করেন দুই পক্ষের সমর্থকরা। এই ঘটনা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা হয়েছিল। একইভাবে ডর্টমুন্ডের ওই মাঠ বেশ কিছু আন্দোলনের সাক্ষী। যেখানে একসঙ্গে সরব হয়েছেন বিভিন্ন দলের সমর্থকরা। ইউরোপেও সমর্থকদের আন্দোলন কম হয়নি। তবে সবথেকে বশি আলোড়ণ ফেলেছিল ‘সুপার লিগ’ বন্ধের দাবি। এমনিতে, সে দেশের ক্লাব ফুটবলের সেরা প্রতিযোগিতা হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-কেই মনে করা হয়। তবে এর থেকে তেমন মুনাফা না হওয়ায়, নতুন একটি লিগ চালুর কথা ভাবেন বিভিন্ন ক্লাবের কর্নধাররা। আর এতেই ক্ষুব্ধ হন সমর্থকরা। সব ক্লাবের সমর্থকরা মিলে সুপার লিগ বন্ধের দাবি তোলেন। প্রতিবাদ আগুন এতটাই ছড়িয়ে পড়ে, পিছু হটতে বাধ্য হয় ক্লাব কর্তৃপক্ষরা। সমর্থকদের প্রতিবাদের জেরেই বন্ধ হয় সুপার লিগ চালুর ভাবনা। ক্লাবের মালিক গ্লেজার ফ্যালিমির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ফ্যান মহলও। ফুটবল বিশ্বকাপও ফ্যানদের প্রতিবাদ থেকে রেহাই পায়নি। সব ক্ষেত্রেই অবশ্য নায্য দাবির জন্য চলেছে আন্দোলন। কাতার বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। সে দেশের একাধিক নিয়মের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ফ্যানরা। অনেকসময় খেলোয়াড়রাও সমর্থকদের হয়ে মাঠ থেকে প্রতিবাদ জানান। হাতে কালো ব্যান্ড পরে খেলতে নামা, ফুটবল জগতে খুবই সাধারণ বিষয়। সদ্য বাতিল হওয়া কলকাতা ডার্বি নিয়েও মুখ খুলেছেন ইস্ট-মোহন খেলোয়াড়রা। মাঠে নেমে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ পাননি। তাই নেটদুনিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রীতম কোটাল, শৌভিক চক্রবর্তী কিংবা হিরা মন্ডলরা। শোনা যাচ্ছে, কলকাতার আরও এক জনপ্রিয় ক্লাব সমর্থকদের এই প্রতিবাদে সমর্থন জানিয়েছে। সবমিলিয়ে আর জি করের ঘটনার বিচার চেয়ে একদিকে যেমন গোটা রাজ্য উত্তাল, তার মাঝে ফুটবল সমর্থকরাও বুঝে দিতে চাইছেন লড়াই-এর আসল মানে তাঁরা বোঝেন।