দেশে মা-বোনেদের উপর অত্যাচার নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে তাঁর নারী সুরক্ষার ডাক নিয়ে চর্চা হওয়ারই কথা। কিন্তু এই আবহেই ফিরেছে দেশের পতাকা হাতে বিনেশ-সঙ্গীতার মাটিতে লুটিয়ে পড়া ছবিও। প্রধানমন্ত্রীর সামনে জ্বলন্ত প্রশ্নের মতো।
সম্প্রতি আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় দেশ। তা নিয়ে মুখ খুলছেন জাতীয় নেতানেত্রীরাও। মেয়েদের সুরক্ষার দাবিতে ‘রাত দখলে’র ডাক দিয়ে রাজ্য জুড়ে, এমনকি রাজ্যের বাইরেও পথে নেমেছেন মেয়েরা। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে লাল কেল্লা থেকে নারীদের সুরক্ষা নিয়ে সরব হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। আর জি করের নাম উল্লেখ না করলেও, দেশে ‘মা-বোনেদের’ উপর অত্যাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদি। আরও বলেছেন, এই ধরনের ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত এবং কঠোর শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।
আরও শুনুন:
কঙ্গনা, প্রতিভা দয়া চায় না, নেতারা ভোট চান
প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনেছে সারা দেশ। নারীর সুরক্ষা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন, এতে তো আশ্বস্ত হওয়ারই কথা। ন্যায়বিচার নিয়ে নিশ্চিত হওয়ারই কথা। কিন্তু হওয়া যাচ্ছে কি? যেন এ প্রশ্নের উত্তর দিতেই একটি ছবি মনে করিয়ে দিয়েছেন টোকিও অলিম্পিক্সের পদকজয়ী কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। সে ছবিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন বজরং-এর স্ত্রী সঙ্গীতা ফোগত। মাটিতে পড়েও তাঁকে আঁকড়ে রেখেছেন বিনেশ ফোগত, এই কদিন আগেও যাঁকে ঘিরেই অলিম্পিক্সে সোনার স্বপ্ন দেখছিল গোটা দেশ। যাঁরা দেশের পতাকাকে তুলে ধরেছিলেন বিশ্বের মঞ্চে, দেশকে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বের শীর্ষে, পুলিশি নিগ্রহে তাঁরা মাটিতে পড়ে, পড়ে গিয়েছে দেশের পতাকাও। আর সেই ছবি পোস্ট করেই বজরং লিখেছেন, স্বাধীনতা দিবসের পুণ্যলগ্নে সকল দেশবাসীকে হার্দিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
মনে পড়ার কথা, এ ছবি কুস্তিগিরদের আন্দোলনের সময়কার। কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং, যিনি সেসময় বিজেপির সাংসদও, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছিলেন এই মেয়েরা। জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যপরীক্ষার নামে অশালীন ভাবে তাঁদের শরীর স্পর্শ করা হয়েছে। স্তনে, পেটে আপত্তিকর ভাবে হাত দেওয়া হয়েছে। তাই এহেন সভাপতির অপসারণ চাই, চাই গ্রেপ্তারি। প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের আইনের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন দেশের গর্ব এই মেয়েরা। সেদিন কিন্তু দেশের সরকার তাঁদের কথা শোনেনি। দিনের পর দিন, নিজেদের পদক জয়ের লক্ষ্য, অনুশীলন, ঘর-পরিবার ছেড়ে রোদ-ঝড়-জলের মধ্যে বসে ছিলেন তাঁরা। যেদিন নতুন ভারতে সোনার ‘ন্যায়দণ্ড’ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সেদিনও ন্যায়ের জন্যই রাজধানীর পথে ধরনা চলছিল তাঁদের। হৃত আত্মসম্মান ফিরে পাওয়ার আশায়। কিন্তু যৌন নিগ্রহের প্রতিকার চেয়ে নিগ্রহ ফেরত পেয়েছিলেন তাঁরা, তাও অমৃতকালের সূচনালগ্নের মোক্ষম দিনটিতেই।
আরও শুনুন:
রাতের পথে কেবল ধর্ষকের অধিকার নাকি! বহু আগেই শুরু ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট’ আন্দোলনের
প্রধানমন্ত্রী যেদিন দেশের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, সেদিন নিগৃহীতা, নির্যাতিতা মেয়েদের আশ্বস্ত হওয়ারই কথা ছিল বইকি। কিন্তু ওই মেয়েদের মধ্যে যে বিনেশ-সঙ্গীতারাও পড়েন। যাঁদের নির্যাতনের কোনও সুরাহা এ দেশ করে উঠতে পারেনি। করে উঠতে আদৌ চেয়েছেও কি? মেয়েদের সুরক্ষার প্রশাসনিক নিদানের মধ্যে এ প্রশ্নই জারি রেখে গেল বজরং-এর ফিরিয়ে আনা বিনেশ-সঙ্গীতার ছবি। রাজ্য থেকে কেন্দ্র, সবার নারীবিষয়ক বার্তা-বক্তব্যের মাঝে যে প্রশ্নের জেগে থাকাই জরুরি।
आजादी दिवस के महापर्व की सभी देशवासियों को हार्दिक बधाई एवं शुभकामनाएं।#जय_हिन्द 🇮🇳 #IndependenceDay2024 pic.twitter.com/Vp7TScOb6P
— Bajrang Punia 🇮🇳 (@BajrangPunia) August 15, 2024