উত্তাল বাংলাদেশে পুড়ে ছাই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। তবে এপার বাংলায় কিন্তু তাঁর স্মৃতি এখনও অটুট। মুজিবের স্পর্শ নিয়েই কলকাতায় দাঁড়িয়ে আছে তাঁর একসময়ের ঠিকানা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
৪৯ বছর আগে ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতেই নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাঁরই কন্যা। হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ির গায়েও। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরেই মুজিবের সেই বাড়িতেই হামলা হয়েছে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। নষ্ট করা হয়েছে জাতির পিতার স্মারক। বাংলাদেশে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মূর্তিও। তবে এপার বাংলায় কিন্তু তাঁর স্মৃতি এখনও অটুট। মুজিবের স্পর্শ নিয়েই কলকাতায় দাঁড়িয়ে আছে ১১৪ বছরের পুরনো এক বাড়ি। তাঁর একসময়ের ঠিকানা।
আরও শুনুন:
ভাঙল মূর্তি, বঙ্গবন্ধুর হিন্দু-মুসলিমকে রক্ষার কর্তব্য মনে রাখবে তো ‘নতুন’ বাংলাদেশ?
হ্যাঁ, সেটা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ঠিক আগের কথা। ১৯৪৫-৪৬ সাল। বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজ বা পূর্বতন ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান। আবাসিক হিসাবে থাকতেন কলেজের অধীনে থাকা তালতলার বেকার হস্টেলের তেতলায়, ২৪ নম্বর ঘরে। আর সেই ঘরটিকেই ১৯৯৮ সালে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ’ হিসাবে সংরক্ষণ করে তৎকালীন বাম সরকার। সেই ঘরেই সযত্নে রাখা আছে বঙ্গবন্ধুর একাধিক স্মারক। জলরঙে আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছাত্রাবস্থার ছবি, কাজী নজরুল ইসলামের গলায় বঙ্গবন্ধুর মালা পরিয়ে দেওয়ার ছবি, বঙ্গবন্ধুর শপথ অনুষ্ঠানে ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে তাঁর পাশাপাশি ছবি। রাখা আছে সেসময়ের টেবিল চেয়ার। বঙ্গবন্ধুর লেখা একাধিক বই। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে প্রতি বছর ২৪ নম্বর ঘরটি খুলে স্মরণসভা করা হয়। এখনও।
আরও শুনুন:
মুজিবের মুক্তির ডাকে উদ্বেল, চায়ের আড্ডায় বসেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লিখলেন গৌরীপ্রসন্ন
বাংলাদেশেও মুজিবের বাসভবনটিকে সংগ্রহশালায় পরিণত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিঁড়ির মাঝ বরাবর রাখা ছিল তাঁর বুলেটবিদ্ধ দেহের সাদা-কালো ছবি। পাঁচ দশক আগে বাংলাদেশে রক্তাক্ত পালাবদলের সময় ওখানেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দেহ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালও নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিবের দুই কন্যা, হাসিনা এবং রেহানা। কিন্তু এবার তাঁরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরেই আগুনে ছাই হয়ে গেল মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডের সেই সংগ্রহশালা। কোনও গণঅভ্যুত্থানের পর জনতার বেলাগাম কার্যকলাপ যদিও নতুন নয়। তবে বঙ্গবন্ধুর উপর এহেন আক্রমণে ব্যথিত এপার বাংলাও।