একসময় ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বুলেট কিনতে হত। একই রাইফেল ব্যবহার করেছেন বছরের পর বছর। সেই কষ্ট অবশ্য বৃথা যায়নি। চলতি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্বপ্নিল কুসালে। তাঁর হাত ধরেই ৭২ বছর পর অলিম্পিক পদ এল মহারাষ্ট্রে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অলিম্পিকে ভারতকে তৃতীয় পদক এনে দিলেন স্বপ্নিল কুসালে। জীবনের প্রথম অলিম্পিকেই ব্রোঞ্জ জিতে বাজিমাত করলেন মহারাষ্ট্রের শুটার। তবে এই জায়গায় পৌঁছানোর পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না স্বপ্নিলের। এমনিতে শুটিং রাজার খেলা। সাধারণ প্রাইমারি শিক্ষকের ছেলে স্বপ্নিলের সে খেলার শরিক হওয়া সহজ ছিল না। খেলা চালিয়ে যেতে ব্যাঙ্ক থেকে পরপর লোন পর্যন্ত নিতে হয় তাঁর বাবাকে। এমনকি ৮ বছর ধরে মাত্র একটি বন্দুকেই কোনওমতে প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতে হয়েছে এই অলিম্পিয়ানকে।
:আরও শুনুন:
কথা দিয়েছিলেন ছাত্রী, মনুর জয়ে প্রতিশ্রুতি পূরণের স্বাদ পেলেন প্রাক্তন শিক্ষিকা
চলতি অলিম্পিকে ভারতের প্রথম তিনটি পদকই এসেছে শুটিং থেকে। তিনটিই ব্রোঞ্জ, তবে দেশের শুটারদের এই সাফল্যে জয়জয়কার পড়েছে সর্বত্র। চর্চায় ফিরেছেন জয়দীপ কর্মকার, অভিনব বিন্দ্রারা। একইসঙ্গে চর্চায় এসেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির নামও। ভাবছেন তো, ক্যাপ্টেন কুল এর সঙ্গে অলিম্পিকের শুটারদের কী সম্পর্ক? আসলে, ধোনিকে অনুপ্রেরণা করেই নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন স্বপ্নিল কুসালে। মহারাষ্ট্রের বছর ২৮-এর যুবক পেশায় রেলের টিকিট চেকার। সেই চাকরি বজায় রেখেই অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন স্বপ্নিল। অবশ্য আর কোনও উপায়ও ছিল না। রেলের ওই চাকরি জোরেই এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন স্বপ্নিল। শোনা যায়, চাকরি পাওয়ার আগে অবধি একটাই রাইফেলে অভ্যাস করতেন। বাবা পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। কাজেই শুটিং-এর মতো ব্যয়বহুল খেলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন ছিল তাঁর পরিবারের পক্ষে। বাবা অবশ্য ছেলেকে সেসব বুঝতে দেননি। ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বুলেট কিনে দিতেন। পাশাপাশি, রাইফেল, জ্যাকেট বা অন্যান্য সরঞ্জামও রীতিমতো কষ্ট করেই কিনে দিয়েছিলেন। ১২০ টাকার এক একটা বুলেট। তাই প্রাকটিসের পর সেসব যত্ন করে রেখে দিতেন স্বপ্নিল। দীর্ঘদিনের সেই কষ্ট অবশেষে এনে দিল সাফল্য। এর আগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একাধিক ইভেন্টে সাফল্য পেয়েছেন। এবার অলিম্পিকে পদক জিতে নিজের স্বপ্ন পূরণ করলেন মহারাষ্ট্রের শুটার।
:আরও শুনুন:
গোল্ড মেডেলে সোনা নেই! কোন ধাতুতে গড়া অলিম্পিক্সের পদক?
তাঁর সাফল্যে গোটা দেশ উচ্ছ্বসিত। তবে বিশেষ উচ্ছ্বাস মহারাষ্ট্রের মানুষদের। দীর্ঘ ৭২ বছর সে রাজ্যের কোনও খেলোয়াড় অলিম্পিক পদক পেলেন। আবার স্বপ্নিল যে ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন, এর আগে কোনও ভারতীয় সেই ইভেন্টে পদক জেতেননি। তাই ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনে পদক জিতে দেশের জন্যও ইতিহাস গড়েছেন স্বপ্নিল। এমনিতে এ দেশের বহু খেলোয়াড়ই সরকারি চাকরি করেন। খোদ মহেন্দ্র সিং ধোনিই একসময় টিকিট চেকার ছিলেন। তাঁকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মেনে চলা, স্বপ্নিলও সেই চাকরিই করেন। তফাৎ বলতে, ধোনি চাকরি ছেড়ে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন, আর স্বপ্নিল চাকরি বজায় রেখেই নিজের জাত চিনিয়েছেন।