সংসদে ‘অভয়মুদ্রা’ দেখিয়ে ঝড় তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। সম্প্রতি তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে চক্রব্যূহের প্রসঙ্গ। পুরাণের প্রসঙ্গ টেনে একইভাবে বিজেপি সরকারকে বিঁধেছেন বিরোধী দলনেতা। ঠিক কী কী বলেছেন রাহুল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দুই বক্তৃতা। বক্তব্যের বিষয় আলাদা। মিল বলতে হিন্দুধর্ম। অথচ বক্তা কোনও বিজেপি নেতা নন। হিন্দু সংগঠন কিংবা শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিতও নন। সম্প্রতি লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটা করেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। হিন্দুত্বের ‘অস্ত্রেই’ তিনি পালটা দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরকে।
:আরও শুনুন:
জুতো সেলাই শেখানোর পুরস্কার! রাহুলের পাঠানো নতুন মেশিন পেয়ে কী বলছেন যোগীরাজ্যের চর্মকার?
লোকসভায় জোড়া আসন জিতে সংসদে ফিরেই ঝড় তুলেছেন রাহুল গান্ধী। বাজিমাত করেছেন চোখা বক্তৃতায়। একসময় যে রাহুলের সব কথাকেই ‘পাপ্পু’ খোঁচায় উড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাস করে ফেলেছিল বিজেপি শিবির। সেই রাহুলই অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে উড়িয়ে দেওয়া আর কোনও দলের পক্ষেই সহজ কাজ হবে না। ঠিক যেমন সহজ হবে না তাঁর সপাট বক্তৃতাকে হজম করাও। কারণ এই রাহুল গান্ধী তীব্র উত্তেজনায় চিৎকার করছেন না। যুক্তিহীন ব্যক্তিআক্রমণের পথেও হাঁটছেন না। বদলে স্থিতধী বক্তব্যে একটা একটা করে শানিত যুক্তি তুলে আনছেন। সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে সে পরিচয় দিয়েছেন রাহুল। তাঁর উল্লেখ করা একাধিক শব্দ নিয়ে জোর আপত্তি তুলেছিল বিজেপি সরকার। শুধু তাই নয়, ওই অধিবেশনে রাহুল যেভাবে অভয়মুদ্রা দেখিয়েছিলেন বা শিব-সহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতীক দেখিয়েছিলেন, তাতেও বেজায় আপত্তি ছিল শাসকদলের। সেসব তোয়াক্কা না করেই নিজের বক্তব্য সম্পূর্ণ করেছেন রাহুল। তবে একজন কংগ্রেস নেতা এইভাবে হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য রাখছেন, তাতে বেশ অবাকই হয়েছিলেন কেউ কেউ।
:আরও শুনুন:
সংসদে ‘হত্যা’, ‘হিংসা’ শব্দে আপত্তি! কোন যুক্তিতে রাহুলকে নিশানা বিজেপি নেতার?
বাজেট অধিবেশনেও সেই ধারা অব্যাহত রাখলেন রাহুল। চোখা বক্ততৃতায় স্রেফ শাসক শিবিরকে পালটা আক্রমণ নয়, এই অধিবেশনও হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ টেনে একাধিক মন্তব্য করেছেন রাহুল। এর এতেই ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান, হিন্দুত্বের অস্ত্রেই বিজেপিকে পালটা দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা। আগের অধিবেশনে হিন্দু, নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি এবং আরএসএস নিয়ে রাহুল যে মন্তব্য করেছিলেন, স্পিকার ওম বিড়লার নির্দেশে তা সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়। বাজেট অধিবেশনেও, একইভাবে স্পিকারের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে রাহুলকে। এবারের বক্তব্যে রাহুল তুলেছেন মহাভারতের প্রসঙ্গ। মহাকাব্যে অর্জুনপুত্র অভিমন্যুকে যেভাবে চক্রব্যূহে বন্দি করে ৬ মহারথী মিলে হত্যা করেছিলেন। রাহুলের দাবি, ঠিক সেভাবে গোটা ভারতকে চক্রব্যূহে বন্দি করেছে বিজেপি সরকার। বিজেপির প্রতীক পদ্মফুলের সঙ্গেও চক্রব্যূহের তুলনা টানেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর দাবি, এই চক্রব্যূহ ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের কৃষকদের বিরুদ্ধে মাঝারি ব্যবসায়ী, অগ্নিবীর, পড়ুয়া, বেকার যুবকদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, বর্তমানে এই চক্রব্যূহের মহারথী কারা, সেই নামও উল্লেখ করেছেন রাহুল। তাঁর কথায়, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, মোহন ভাগবত, অজিত ডোভাল, আম্বানি ও আদানিই এ যুগে চক্রব্যূহের প্রধান অঙ্গ। এখানেই শেষ নয়, ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও শিবের বরযাত্রীর তুলনা টেনেছেন রাহুল। পুরাণের কাহিনি অনুসারে, শিবের বরযাত্রীদের ভূত,প্রেত,দৈত্য, দানব, যক্ষ সবাই শামিল হয়েছিল। সেভাবেই ইন্ডিয়া জোত সবাইকে নিয়ে লড়বে। অর্থাৎ নিজের বক্তব্যে বারে বারে পুরাণ বা হিন্দু প্রসঙ্গই তুলে আনছেন রাহুল। তবে রাজনৈতিক মহলের দাবি, সুকৌশলে এই কাজ সারছেন রাহুল। বক্তব্য যাই হোক কোনওভাবেই হিন্দুধর্মের অপমান না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখছেন রাহুল। তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হওয়া। হিন্দুত্বকে সামনে রেখে নতুন ভঙ্গীতে সেই কাজই করে চলেছেন রাহুল গান্ধী।