সামনের জন বিরক্ত হচ্ছেন। সেদিকে পাত্তা না দিয়েই বকবক করে যাচ্ছেন অন্যজন। ট্রেনে-বাসে হামেশাই এমন মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। অনেকেই বিষয়টিকে তেমন পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে যান। তবে এ জিনিস আদৌ এড়িয়ে যাওয়ার নয়। অতিরিক্ত কথা বলাও এক রোগই বটে। ঠিক কী বলছেন চিকিৎসকরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কাজের সুবাদে অনেককেই সারাদিন কথা বলতে হয়। আবার কেউ কেউ এমনিই অতিরিক্ত কথা বলেন। বন্ধুবৃত্তেও এমন একজন থাকতে বাধ্য। প্রায় সকলেই ‘বাচাল’ তকমা দিয়ে এড়িয়ে যায় এই ব্যক্তিকে। কিন্তু এর থেকেই অন্যরকম সমস্যা জন্ম নিতে পারে। অতিরিক্ত কথা বলার জন্য সবাই যাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, সেই ব্যক্তিই আসলে এক বিশেষ রোগে আক্রাক্ত। চিকিৎসার পরিভাষায় এর নাম, ‘ভার্বাল ডায়েরিয়া’। তবে ডায়েরিয়ার মতো এ কোনও সংক্রামক ব্যধি নয়। জল বা খাবার থেকেও এই রোগ ছড়ায় না। মূলত মানসিক রোগ। যা বয়স বাড়লে রীতিমতো সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আরও শুনুন:
খালি মনে হচ্ছে মোটা হয়ে যাচ্ছেন! মনের ভুল, নাকি নেপথ্যে কোনও ট্রমা?
কিন্তু এই রোগের লক্ষণ কী?
অন্যান্য মানসিক রোগের মতো এর প্রভাবও বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। প্রাথমিক লক্ষণ বেশি কথা বলা। তা অবশ্য অনেকেই বলেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই বেশি কথা বলা যখন অভ্যাসে পৌঁছে যায়, তখন এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এঁরা যে কোনও জায়গায় গল্পে মশগুল হতে পারেন। পরিচিত কাউকে পেলে তাঁর সঙ্গেই গল্প জুড়ে দেন। তা না হলেও সমস্যা নেই। অপরিচিত কাউকে জুটিয়ে দেদার গল্প জমাতে এঁদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু সমস্যাটা হল যখন কথা বলার মতো কেউ থাকেন না। পরিস্থিতি এমন হল, যে আশেপাশের কেউই কথা বলতে স্বচ্ছন্দ্য হচ্ছেন না। এদিকে বন্ধুরাও বেশ বিরক্ত। তখন বাধ্য হয়েই নিজের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন এঁরা। ধীরে ধীরে এই অভ্যাস মারাত্মক আকার ধারণ করেন। অনেক সময় এর থেকে বাইপোলার ডিসঅর্ডার, স্কিজোফ্রেনিয়া বা হ্যালুসিনেশনের মতো রোগ জন্ম নেয়। অনেকে আবার সবার সামনে নিজের কদর বোঝাতে বেশি কথা বলেন। জ্ঞান থাকুক না থাকুক, সব বিষয়ে কথা বলে নিজেকে জাহির করার অভ্যাস থাকে এঁদের। এর থেকেও ভার্বাল ডায়েরিয়া হতেই পারে।
আরও শুনুন:
ঘুম নেই ভারতীয়দের চোখে! কিন্তু কেন?
যদিও সঠিক নিয়ম মানলে এই রোগের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। অতিরিক্ত কথা বলা হচ্ছে, এমনটা বুঝলে নিজে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত। বলার চাইতে শোনায় জোর দিলে, ধীরে ধীরে অতিরিক্ত কথা বলার অভ্যাস কেটে যায়। ফলত ভার্বাল ডায়েরিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় থাকে না বললেই চলে। খেয়াল রাখতে হবে, কোনও কথা একবারের বেশি বলা হচ্ছে কি না। এমনটা যত কম করা যায় ততই ভালো। প্রয়োজনে এক কথা দুবার বলা যেতে পারে, কিন্তু তার বেশি নয়। এতে যিনি শুনছেন তাঁরও বিরক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আবার নিজেও ঠিক থাকা যায়। তাও যদি বোঝা যায়, ভার্বাল ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাহলে অবিলম্বে মন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।