শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও ফেয়ার প্লে-তে বিশ্বাসী মনু ভাকের। আর সে কথাই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কুস্তিগিরদের আন্দোলনের সময়। অলিম্পিকে পদক জয়ের পর ফিরল সেই পুরনো কথা।
বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের আন্দোলনের সময় মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন অধিকাংশ খেলোয়াড়ই। ক্রীড়াজগতের এত বড় ঘটনা নিয়েও তাঁদের বেশিরভাগই মুখ খোলেননি। এমনকি গোটা দেশ জুড়ে যে খেলার রমরমা, যে খেলোয়াড়দের প্রভাব সবচেয়ে বেশি, সেই ক্রিকেটের রথী-মহারথীরাও একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন তখন। অথচ সেই সময়েই আন্দোলনকারী কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মনু ভাকের। অলিম্পিকে পদক জয়ের পর সামনে এল তাঁর সেই পুরনো টুইট।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের আসরে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ! নিয়ম ভাঙার শাস্তি ছিল মৃত্যু
একাধিক মহিলা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্তা করেছেন জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং। এই অভিযোগেই সরব হয়েছিলেন কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী বিনেশ ফোগট, অলিম্পিকে পদকজয়ী সাক্ষী মালিক, বজরাং পুনিয়া-সহ একাধিক কুস্তিগির। দিনের পর দিন রাজপথে ধরনায় বসেছেন তাঁরা, পুলিশের হাতে হেনস্তা সয়েছেন, এমনকি নিজেদের পদক ভাসিয়ে দিতেও গিয়েছেন। সেই সময়েই সাক্ষী-বিনেশদের সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন মনু ভাকের। সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি লেখেন, “আমার সহ-খেলোয়াড়েরা, যাঁরা একাধিক সময়ে পদক জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, তাঁরা ন্যায়বিচার চেয়ে পথে বসে আছেন। তাঁদের এই অবস্থা দেখে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি সর্বান্তঃকরণে তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছি, এবং তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপের আর্জি জানাচ্ছি।” বস্তুত, পদক জিতলে যেখানে শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যায়, সেখানে দীর্ঘ আন্দোলনের সময় ক্রীড়াজগতেরও অধিকাংশ তারকার মুখ না খোলা নজর কেড়েছিল সকলেরই। ক্রীড়াবিদদের চুপ করে থাকাকে কটাক্ষ করে বিনেশ সেসময় বলেন, “আমরা কিছু জিতলে আপনারা সকলে শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে আসেন। এমনকি ক্রিকেটাররাও টুইট করেন। তাহলে এখন কী হল? প্রতিষ্ঠানকে এতটাই ভয় পান? নাকি ওইদিকেও কোনও গোপন ব্যাপার ঘটে চলেছে?” সেই সময়ে হাতে গোনা যে কজন খেলোয়াড় মুখ খুলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মনু ভাকেরও।
:আরও শুনুন:
শেষবেলায় স্বপ্নভঙ্গ! অলিম্পিকে তীরে এসে তরী ডুবেছিল যে ভারতীয়দের
আসলে প্রতিষ্ঠানকে চটিয়ে দিলে যে অনেক কিছু হারানোর ভয় থাকে, তা কাটিয়ে ওঠা সোজা নয়। কিন্তু তারকাদের যাবতীয় প্রাপ্তি এক কথায় ছিনিয়ে নেওয়া তো সম্ভব নয়। তাঁদের অবস্থান খানিক সুরক্ষিত, এ কথা ভেবেই মনে করা হয় কোনও বড় ইস্যুতে মুখ খুলবেন তাঁরা। মনু ভাকের সম্প্রতি প্যারিস অলিম্পিক্সে দেশকে প্রথম পদক এনে দিয়ে শোরগোল ফেলেছেন। ইতিহাস গড়া মেয়েকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী থেকে আমজনতাও। কিন্তু সেসময় অলিম্পিকের পদক ছিল না মনু ভাকেরের হাতে। ২১ বছরের তরুণী এখনকার মতো পরিচিতিও পাননি সেসময়ে। উপরন্তু বিজেপির দিকে তির ছুড়লে যে পালটা আঘাত আসে, সে কথাও তিনি জানতেন। ২০১৮ সালেই ইয়ুথ অলিম্পিক্সে সোনা জেতার পর হরিয়ানা সরকার তাঁকে ২ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। টাকা হাতে না আসায় সোশ্যাল মিডিয়াতেই মন্ত্রীকে ‘জুমলা’ খোঁচায় বিঁধেছিলেন মনু। তা নিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি তাঁকে। তারপরেও, ভয় না করেই বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মনু ভাকের।