ব্রতের দিন সাত্ত্বিক আহার করা শাস্ত্রের নিয়ম। সেই হিসাবে বিভিন্ন পুজোয় ব্রতীরা নিরামিষ খাবার খান। কিন্তু নিরামিষ মানেই যে সাত্ত্বিক হবে তার কোনও মানে নেই। শাস্ত্রে অন্তত সাত্ত্বিক খাবারের সংজ্ঞা খানিক অন্যরকম। ঠিক কী বলা হয়েছে শাস্ত্রে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শ্রাবণ মাসে নিরামিষ খেতে হবে। এ নিয়ম অনেকের বাড়িতেই রয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি অবধি বলেছিলেন, শ্রাবণ মাসে নিরামিষ না খাওয়া মুঘল সংস্কৃতির পরিচয়। কিন্তু নিরামিষ মানেই যে সাত্ত্বিক আহার, তা একেবারেই নয়। অন্তত শাস্ত্রের ব্যাখ্যায় যে কোনও নিরামিষ খাদ্যকেই সাত্ত্বিক আখ্যা দেওয়া হচ্ছে না।
:আরও শুনুন:
দশমহাবিদ্যার অন্যতমা দেবী ষোড়শী, সেই রূপেই মা সারদার পূজা করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ
তাহলে সাত্ত্বিক খাবার আসলে কী?
সত্ত্ব, রজঃ আর তমঃ- মানুষের এই তিন গুণ। সব মানুষের ভিতরই এর লক্ষণ ফুটে ওঠে। গীতায় স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই তিন গুণের পাঠ দিয়েছিলেন। সহজ করে বললে, সত্ত্ব গুণ ধর্ম, রজঃ গুণ অহংকার এবং তমঃ অর্থে অন্ধকারকে বোঝায়। সংসারে থাকতে গেলে তিনটি গুণ সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। তবে শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতরা সবসময় পরামর্শ দেন। নিজের মধ্যে সত্ত্ব গুণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে। তার জন্য সুস্থ সৎ জীবনযাপন কাম্য। এ প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবে জড়িয়ে খাদ্যাভ্যাস। অর্থাৎ সাত্ত্বিক আহার, রাজসিক আহার এবং তামসিক আহার, এই তিনেরও উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাত্ত্বিক আহারের সঙ্গেই ধর্মের বিশেষ যোগ থাকবে। তাই যে কোনও ব্রতের নিয়মে সাত্ত্বিক আহারের কথা বলা থাকে। শিবরাত্রি হোক বা চণ্ডীর ব্রত, সবক্ষেত্রেই ব্রতীকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হয় সাত্ত্বিক আহারের নিয়ম। শ্রাবণ মাসে যাঁরা শিবের মাথায় জল ঢালতে যান তাঁদেরও একই নিয়ম মানতে হয়। সেই কারণে শ্রাবণ পড়তে না পড়তেই নিরামিষ খাওয়া শুরু করেন সকলে। কিন্তু নিরামিষ মানেই যে সাত্ত্বিক আহার নয়, সে কথা এঁদের অনেকেই জানেন না।
:আরও শুনুন:
বিষ্ণুর রূপের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়েছিলেন স্বয়ং মহাদেব, কী মাহাত্ম্য মোহিনী একাদশীর?
শাস্ত্র মতে, সাত্ত্বিক হল সেই সমস্ত খাবার যা আলাদা করে রান্না করার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ কাঁচা ফল, বিশেষ কিছু শাক-সবজি, কিংবা দুগ্ধজাত দ্রব্যই শাস্ত্রে উল্লিখিত সাত্ত্বিক আহার। কিন্তু নিরামিষে এমন অনেক পদ রয়েছে যা ভালো করে রান্না করেই খেতে হয়। সবজি তো বটেই, সেইসঙ্গে পনির, ছানার মতো দুগ্ধজাত দ্রব্যও ভালোভাবে রান্না করেই খাওয়া হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন না থাকলেই সে খাবার নিরামিষ। তাতে কোনও ভুল নেই। কিন্তু সেই নিরামিষ খাবার সাত্ত্বিক নাও হতে পারে। এবার ব্রতের দিন সাত্ত্বিক খাবার খাওয়াই নিয়ম। সুতরাং স্রেফ নিরামিষ খেলেই যে সে নিয়ম মানা হচ্ছে তা একেবারেই নয়। অনেকে অবশ্য এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী ব্রতের সময় ফলমূল খেয়েই কাটান। এমনকি এঁরা মিষ্টি অবধি খান না। চৈত্রমাসে শিবভক্তরা যে সন্ন্যাস ব্রত পালন করেন, তখন অনেকেই এই নিয়ম মেনে চলেন। তবে শ্রাবণ মাসের নিরামিষ খাওয়া যে সাত্ত্বিক আহার নয়, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে শাস্ত্রের ব্যাখ্যাই।