গল্পের তাগিদে মারা যাবে চরিত্র। আগেভাগেই সে কথা জানেন অভিনেতা। তা সত্ত্বেও চরিত্রের ফুরিয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেন না অনেকে। তালিকায়, শাহরুখ-অমিতাভের মতো কিংবদন্তিও রয়েছেন। নিজেদের অভিনীত চরিত্রের মৃত্যু নিয়ে কী মত তাঁদের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সময় সে পহলে কোই নেহি যায়েগা… ‘পঞ্চায়েত’-এর প্রহ্লাদজির এই কথা দর্শকদের মনে দাগ কেটেছিল। কিন্তু যাওয়া আসায় কি আদৌ কারও নিয়ন্ত্রণ থাকে? বাস্তবে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া ছাড়া বোধহয় আর কোনও উপায় নেই। রিল দুনিয়ার বিষয়টাও খানিক একইরকম। গল্পের তাগিদে সেখানেও প্রিয় চরিত্রের মৃত্যু ঘটে। দর্শকের চোখের কোণ জলে ভেজে। কিন্তু চরিত্রের মৃত্যুতে অভিনেতারাও কি কষ্ট পান?
:আরও শুনুন:
ক্ষমতার লড়াইয়ে রাজা-উজিরের কিস্তিমাত, শেষ হাসি হাসলেন কে?
কয়েকটা উদাহরণ দেখলেই বিষয়টা পরিষ্কার হতে পারে। প্রথমে সিরিজের প্রসঙ্গে বলা যাক। ওটিটি দুনিয়ায় এখন এই সিরিজের ছড়াছড়ি। তার মধ্যে কিছু সিরিজ বছরের পর বছর ধরে চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই তার চরিত্ররা দর্শকদের অনেক আপন। এবার সিরিজের সেই প্রিয় চরিত্র যদি হঠাৎ মারা যান, তার প্রভাব দর্শকদের মনে পড়বেই। কিন্তু একইভাবে চরিত্রের মৃত্যুর প্রভাব পড়ে অভিনেতার মনেও। মির্জাপুর সিরিজের কথাই ধরা যাক। সিরিজের তৃতীয় সিজনে এমন অনেক চরিত্রই মারা গিয়েছে, যা দর্শকরা ভাবতেও পারেননি। এমনই এক চরিত্র শরদ শুক্লা। জৌনপুরের বাহুবলি তৃতীয় সিজনের শুরু থেকেই বেশ দাপটের সঙ্গে নিজের অস্তিত্ব বুঝিয়েছেন। এমনকি একসময় মনে হচ্ছিল, সিরিজের আগামী সিজনে এই চরিত্রের রীতিমতো প্রভাব থাকবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক তার উল্টোটা। তৃতীয় সিজনের একেবারে শেষভাগে পৌঁছে মারা গিয়েছেন শরদ শুক্লা। আর এই নিয়েই বিশেষ মন্তব্য করেছেন চরিত্রটির অভিনেতা অঞ্জুম শর্মা। তাঁর মতে, এইভাবে সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের আকস্মিক মৃত্যু অনৈতিক। কিন্তু মির্জাপুরে এমনটা হওয়ায় শাপে বর হয়েছে। অর্থাৎ যে পরিস্থিতিতে শরদ শুক্লা চরিত্রের মৃত্যু হয়েছে তা দর্শকের মনে চরিত্রটির প্রতি আলাদা জায়গা করে নেবে বলেই মনে করছেন অঞ্জুম। তাঁর আরও দাবি, এই সিরিজের নাটকীয়তা বাড়াতেও সাহায্য করেছে শরদ শুক্লার মৃত্যু। সুতরাং নিজের চরিত্রের মৃত্যুতে অভিনেতা যে কষ্ট পাননি তা বলাই যায়।
:আরও শুনুন:
ঘুমপাড়ানি গান কেন শুনছেন পঞ্চায়েতের বিধায়কজি, ব্যাপারটা কী?
কাট টু ১৯৭৫, ১৫ আগস্ট। সিনেপ্রেমীদের কাছে এই তারিখের আলাদা গুরুত্ব থাকতে বাধ্য। কারণ এইদিনেই মুক্তি পেয়েছিল ‘শোলে’। অমিতাভ-ধর্মেন্দ্র অভিনীত এই সিনেমা দীর্ঘদিন আলোচনার বিষয় ছিল, আছে এবং থাকবে। স্রেফ গল্প নয়, সিনেমার প্রতিটি চরিত্রের অভিনয়, সংলাপ, গান সবকিছু নিয়েই রীতিমতো চর্চা হয়। ব্যবসার দিক দিয়েও এই সিনেমা বেশ লাভ করেছিল। তাই ‘শোলে’-কে নিঃসন্দেহে অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা ক্যারিয়ারের অন্যতম মাইলস্টোন বলা যায়। কিন্তু এই সিনেমাতেও অমিতাভ অভিনীত জয় চরিত্রটির মৃত্যু হয়। তাতে দর্শকরা বেশ দুঃখ পেয়েছিলেন। সিনেমাটির এই অংশ দেখে অনেকে কেঁদেও ভাসাতেন। তবে এ নিয়ে তেমন আফসোস ছিল না খোদ বিগ বি-র। চরিত্রটির ‘হ্যাপি এন্ডিং’ হয়েছে বলেই দাবি করেন অমিতাভ। যদিও শেষ মুহূর্তে নাকি, অমিতাভের এই মৃত্যুর অংশ বাদ দেওয়ার কথা হয়েছিল বলেও জানান বিগ-বি। নতুন করে শেষ অংশ শ্যুট করার কথাও হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ পরিচালক তা হতে দেননি। তার ফল অবশ্য বক্সঅফিস বুঝিয়েছে। তাই বলে কি চরিত্রের মৃত্যু নিয়ে কোনও অভিনেতার আফসোস নেই?
:আরও শুনুন:
সচিবজি থেকে জিতু ভাইয়া, ওটিটির লাইমলাইটে আইআইটি-র জিতেন্দ্র কুমার
কিং খানের দিকে ফিরলেই সে ধারণা বদলে যেতে পারে। শাহরুখ অভিনীত চরিত্র মারা গিয়েছে এমন সিনেমার সংখ্যা ১৬। প্রত্যেকটাতেই নায়ক কিংবা খল নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাদশা। কাজেই সেই চরিত্রের মৃত্যু যে দর্শকদের মনে প্রভাব ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। ডর, দেবদাস, দিল সে, বাজিগর গল্পের তাগিদে সব কটি সিনেমাতেই শাহরুখ অভিনীত চরিত্রটিকে মরতে হয়েছে। তবে ‘কল হো না হো’-তে অমন মাথুরের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি খোদ শাহরুখও। কারণ সিনেমায় তাঁর মৃত্যু যেভাবে দেখানো হয়েছে, তার কোনও প্রয়োজন ছিল না বলেই মনে করেন কিং খান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ওই একইসময় দেবদাস সিনেমায় মৃত্যুদৃশ্যে অভিনয় করেছেন শাহরুখ। তাতে কোনও অসুবিধা বা অস্বস্তি হয়নি। কিন্তু কল হো না হো-র মৃত্যুদৃশ্যে অভিনয় করতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিলেন শাহরুখ। ওই চরিত্রের মৃত্যু হোক এমনটা চাননি তিনি নিজেও। একইভাবে ‘হাইওয়ে’ সিনেমায় রণদীপ হুডা অভিনীত চরিত্রের মৃত্যুও রীতিমতো দাগ কেটেছিল দর্শকের মনে। তবে সে নিয়ে অভিনেতা খুব একটা অস্বস্তিতে পড়েননি। এইভাবে প্রিয় চরিত্রের মৃত্যুর তালিকা নেহাতই ছোট নয়। তা হয়তো সবসময় অভিনেতার মনে প্রভাবও ফেলে না। কিন্তু দর্শকরা সেই মৃত্যুর জন্যই মনে রেখে দেন চরিত্রটিকে। ঠিক যেভাবে সিনেমা সিরিজে মৃত্যু হলেও দর্শকের মনে অমর হয়ে রয়েছে, অমন মাথুর, শরদ শুক্লারা।