ইসলাম ধর্মের নির্দেশ মেনে দাড়ি রেখেছিলেন, আর তাতেই শাস্তির মুখে পুলিশকর্মী। ঘটনায় অভিযুক্ত কনস্টেবলের পাশে দাঁড়াল খোদ আদালতই। কী যুক্তি বিচারপতির? শুনে নিন
দাড়ি নিয়ে গণ্ডগোল। শুনলে মনে হয় এ আর এমন কী! কিন্তু ধর্মের নজরে কোনও কোনও সামান্য জিনিসেরই যে গুরুত্ব বেড়ে যায় অনেকখানি। আর তেমনটাই হয়েছে সম্প্রতি। ইসলাম ধর্মের নির্দেশ মেনে দাড়ি রেখেছিলেন, আর তাতেই শাস্তির মুখে পুলিশকর্মী। সেখানেই প্রশ্ন তুলল খোদ আদালত। ধর্মে মুসলিম, অথচ পেশায় পুলিশ বলে দাড়ি রাখা যাবে না? প্রশ্ন আদালতেরই। এ ঘটনাকে ভারতের বহুমাত্রিকতার বিরোধী বলেই মনে করছে আদালত। ভারত বহু ধর্মের দেশ, মনে করিয়ে সেই বহুত্বকে রক্ষা করার কথাই জানালেন বিচারপতি।
আরও শুনুন:
মোদি কোনও ভুল করলে নিশ্চয়ই ধরিয়ে দেব, শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েই বার্তা খোদ শঙ্করাচার্যের
কী ঘটেছে ঠিক? জানা গিয়েছে, মক্কায় গিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর এক পুলিশ কনস্টেবল। তার জন্য ৩১ দিনের ছুটিও পেয়েছিলেন। কিন্তু গোল বাধে এর পরেই। ফিরে এসে পায়ে সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে আরও কিছুদিনের জন্য ছুটি চান ওই পুলিশকর্মী। সে ছুটি মঞ্জুর করতে রাজি হননি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। উলটে তিনি কৈফিয়ত তলব করেন, কেন ওই কনস্টেবল দাড়ি রেখে কাজে এসেছেন। এরপর খোদ পুলিশের ডেপুটি কমিশনার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কৈফিয়ত তলব করে পাঠান। আসলে মাদ্রাজ পুলিশ গেজেট-এর নিয়ম বলছে, পুলিশকর্মীরা দাড়ি রাখতে পারেন না। সম্ভবত তাঁদের কাজের ধরনের জন্যই এই নিয়ম জারি করা হয়েছিল। কারণ কোনোরকম হাতাহাতি ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় লম্বা চুল-দাড়ি টেনে প্রতিপক্ষকে কাবু করে ফেলা খুবই সহজ। কিন্তু ওই পুলিশকর্মী সে নিয়ম না মেনেই দাড়ি রাখতে শুরু করেন। আসলে হজ সেরে ফেরার পর ধর্মের অনুশাসন মেনেই এ কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু পুলিশি নিয়ম মোতাবেক শেষ পর্যন্ত শাস্তির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তিন বছরের জন্য ইনক্রিমেন্টও রদ করে দেওয়া হয়।
আরও শুনুন:
শহিদের স্ত্রীর সাজগোজ নিয়ে কথা কীসের! ‘ভুল’ করেও সেই স্মৃতিকেই নিশানা ট্রোলের
এই ঘটনার জল গড়ায় মাদ্রাজ হাই কোর্ট পর্যন্ত। কিন্তু সেই মামলার শুনানিতেই এবার বিচারপতি এল ভিক্টোরিয়া গৌরী দেখালেন, মাদ্রাজ পুলিশ গেজেট-ই ১৯৫৭ সালে মুসলিম কর্মীদের দাড়ি রাখার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ জানিয়েছিল। সেখানে লম্বা দাড়ি রাখার ব্যাপারে অনুমতি না মিললেও, বলা হয়েছিল পরিষ্কারভাবে কেটেছেঁটে অল্প দাড়ি রাখতে পারেন তাঁরা। এমনকি ডিউটি চলাকালীনও সেভাবে দাড়ি রাখতে পারবেন তাঁরা। আর এই সূত্রেই বিচারপতি আরও মনে করিয়ে দেন, ভারত বহু ধর্মের দেশ। নানা বৈচিত্র্যের সহাবস্থানেই এ দেশ এগিয়ে চলেছে। সুতরাং ভিন্ন ধর্মের প্রতি সহিষ্ণু হয়েই যে বিচার করতে হবে, সে কথাও আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন তিনি। সব মিলিয়ে, আপাত সামান্য একটি বিষয়েও দেশের বহুত্বকেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা বোঝাল খোদ আদালতই।