বিশ্বকাপ জেতার পর মেসি-সতীর্থ মার্টিনেজের উচ্ছ্বাসকে অশালীন বলেই মনে করেছিলেন ক্রীড়াপ্রেমীদের বড় অংশ। উদযাপনের ঢঙে তিনি বিদ্রুপ ছুড়ে দিয়েছিলেন বিপক্ষের প্রতি। কিন্তু কোপা-য় সেই মার্টিনেজকেই যেন দেখা গেল ভিন্ন রূপে।
খেলায় হারজিত থাকেই। কিন্তু মাঠের হারজিতের সঙ্গেই জুড়ে যায় এমন আরও অনেক কিছু, যার সঙ্গে সরাসরি খেলার কোনও যোগ নেই। এইসব বাড়তি কিছুর মধ্যে প্রথমেই বোধহয় থাকবে বিপক্ষের দিকে ছুড়ে দেওয়া অপমান, ব্যঙ্গবিদ্রুপ আর কটাক্ষের তির। টিমগেম যতই বেঁধে বেঁধে থাকার পাঠ দিক, প্রতিযোগিতার দরুন বহুদিনই খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে একরকমের যুদ্ধ। যেখানে পরাজিতকে আরও আক্রমণ করাই অভ্যাস। খেলোয়াড়দের জয়ের উদযাপনে অনেকসময়ই সে আক্রমণ খানিক ঢুকে পড়ে। আর রাজা যত বলে, পারিষদ দলে বলে তার শত গুণ! খেলোয়াড়দের চেয়েও বেশি করে বিজিত প্রতিপক্ষের দিকে অপমান আর অসম্মান ছুড়ে দিতে থাকেন জয়ী পক্ষের সমর্থকেরা। কিন্তু সেই চাপানউতোরের দুনিয়াতেই এবার অন্য ছবি দেখালেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। নিজের দলের জয়ের উদযাপন ছেড়ে তিনি ছুটে গেলেন হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষের দিকেই। সযত্নে সান্ত্বনা দিলেন বিজিত ইকুয়েডর-এর গোলকিপারকে।
আরও শুনুন:
বিশ্বকাপ জয়ের পর মেডেল কামড়ালেন পন্থও, কোথা থেকে এল এই রীতি?
অথচ মার্টিনেজও কি সচরাচর খুব শান্ত নম্র? তা তো নয়। বিশ্বকাপ জয়ের পর তাঁর উচ্ছ্বাসে বারবার বিপক্ষের প্রতি ব্যঙ্গবিদ্রুপ ভেসে উঠেছে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে তাদের কোচ লুই ফান হালের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়ান তিনি। বিশ্বকাপ জিতে সোনার গ্লাভস নিয়ে তাঁর উল্লাস রীতিমতো অশালীন ঠেকেছে ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখেও। পরে দেশে ফিরে কিলিয়ান এমবাপের পুতুল নিয়েও উল্লাস করতে দেখা যায় তাঁকে। অথচ কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে সেই মার্টিনেজকেই দেখা গেল ভিন্ন রূপে। টাইব্রেকারে ইকুয়েডরকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। টাইব্রেকারে মেসি গোল করতে না পারলেও, দুটি গোল বাঁচিয়ে দেন মার্টিনেজ। তাতেই জয় নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার। ম্যাচ শেষে মেসিরা যখন আনন্দে মেতে উঠেছেন, সেই সময়েই মাঠে বসেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ইকুয়েডরের গোলরক্ষক আলেকজান্ডার ডমিঙ্গুয়েজ। আর সেই সময়ই তাঁর কাছে এগিয়ে আসেন মার্টিনেজ। দ্বিতীয় টাইব্রেকারটি বাঁচানোর পরও যিনি বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে নাচছিলেন, তিনিই এসে হাত বুলিয়ে দেন বিপক্ষের খেলোয়াড়ের মাথায়। পাশে দাঁড়ান বন্ধুর মতোই।
আরও শুনুন:
প্রজন্মের গায়ে হলুদ পাখির পালক বুলিয়ে ফিরে গেলেন ম্যাজিশিয়ান
আসলে খেলা হোক কি জীবন, হারজিত সবই তো সেখানে আপেক্ষিক। সুখ দুঃখের চাকা সেখানে নিয়ত ঘুরে চলে। জয়ের আনন্দ আসে, কিন্তু তাতে অন্য মানুষের দিকে দুঃখ ছুড়ে দেওয়াটা তাই আদৌ কাজের কথা নয়। খেলায় সমর্থকেরা আবেগ উত্তেজনার বশে সেই কাজটিই করে ফেলেন অনেকসময়। কিন্তু নিজের অভ্যস্ত আচরণ ছেড়ে বেরিয়ে মার্টিনেজ যেভাবে বিপক্ষের পাশে এসে দাঁড়ালেন, তাতে যেন আরও একবার এ কথা সামনে এল যে, আসলে আক্রমণ নয়, বেঁধে বেঁধে থাকার নামই ফুটবল।