লোকসভায় জোড়া আসন জিতে সংসদে ফিরেই ঝড় তুলেছেন রাহুল গান্ধী। বাজিমাত করেছেন চোখা বক্তৃতায়। তা সত্ত্বেও তাঁর বক্তব্যের একাধিক অংশ বাদ পড়ল সংসদের কার্যবিবরণী থেকে। কোন কোন অংশ বাদ গেল সংসদের খাতায়? শুনে নেওয়া যাক।
একসময় ‘পাপ্পু’ খোঁচায় রাহুলের সব কথাকেই উড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাস করে ফেলেছিল বিজেপি শিবির। কিন্তু সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে সেই রাহুলই অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁকে উড়িয়ে দেওয়া আর কোনও দলের পক্ষেই সহজ কাজ হবে না। ঠিক যেমন সহজ হবে না তাঁর সপাট বক্তৃতাকে হজম করাও। কারণ এই রাহুল গান্ধী তীব্র উত্তেজনায় চিৎকার করছেন না। যুক্তিহীন ব্যক্তিআক্রমণের পথে হাঁটছেন না, অথবা ‘ফ্লাইং কিস’-এর মতো ছেলেমানুষি রসিকতার অভ্যাসও সরিয়ে রেখেছেন। বদলে স্থিতধী বক্তব্যে একটা একটা করে শানিত যুক্তি তুলে এনেছেন তিনি। সেই চোখা বক্তব্যের পালটা যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিলের। তাই রাহুলের বক্তব্যের সময়ে কেবল শোরগোলই তোলা হয়েছে এনডিএ-র বেঞ্চ থেকে। রাহুলের কথার এক অংশ টেনে তাকে সংকীর্ণ অর্থে দাঁড় করানোর চেষ্টা তো চলছেই। আর এরই সঙ্গে, স্পিকারের নির্দেশে সংসদের কার্যবিবরণী থেকে স্রেফ বাদ দেওয়া হয়েছে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের একাধিক অংশ।
রাহুলের বক্তৃতার কোন কোন অংশ বাদ গেল সংসদের খাতায়?
আরও শুনুন:
বিচারপতিকে ‘ভগবান’ মনে করলেই সর্বনাশ! হুঁশিয়ারি খোদ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের
হিন্দু, নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি এবং আরএসএস নিয়ে রাহুল যে মন্তব্য করেছিলেন, স্পিকার ওম বিড়লার নির্দেশে তা সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শিল্পপতি আদানি, আম্বানি এবং অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেগুলিও কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও আদানির সঙ্গে মোদির যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে সরব হয়েছেন রাহুল-মহুয়ারা, যা বিজেপি শিবিরের একেবারেই না-পসন্দ। অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়েও পাঞ্জাব-হরিয়ানায় ক্ষোভ রয়েছেই। ভোটপ্রচারেও সেই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন রাহুল। তবে সংসদের ভাষণে এ সবকিছুর থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ তাঁর হিন্দু মন্তব্য। হিন্দু ধর্মের মূল কথা বিশ্লেষণ করে রাহুল যেভাবে বিজেপির হিন্দুত্ববাদকে তার থেকে পৃথক করেছেন, তা আসলে বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির গোড়াতেই আঘাত হেনেছে। আসলে বিজেপি যেভাবে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দিয়ে আসছে, সেই রাজনীতির মোকাবিলা করতে এবার ধর্মকে সঙ্গে নিয়েই কথা বলেছেন রাহুল। বলেছেন, সব ধর্মের মূল কথাই আসলে অভয় দেওয়া। কিন্তু হিন্দুত্বের নাম করে বিজেপি ভয় আর হিংসা ছড়ায়। এই যুক্তিতেই সরাসরি শাসকদলকে তোপ দেগে রাহুল বলেছিলেন, ‘মোদি, বিজেপি, আরএসএস-ই কেবল হিন্দু নয়।’ বাস্তবেই, মোদির মাছ-মাংস-মুঘল বিতর্কের সময়েও বারেবারে এ কথা উঠেছে যে, সারা দেশের সব হিন্দুরাই নিরামিষ খান এমন নয়। সুতরাং নিরামিষ খেলেই কেউ হিন্দু নন, এমনও যুক্তি নেই। ধর্মের নামে সবাইকে এক ছাঁচে ঢালার সেই প্রবণতাকেই নাকচ করেছেন রাহুল। যদিও এই কথাকে ঘুরিয়ে দিয়ে বিজেপির দাবি, আসলে হিন্দুদের অপমান করেছেন রাহুল। তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদে মুখ খোলেন খোদ মোদি, ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন শাহ। শেষ পর্যন্ত সংসদের কার্যবিবরণী থেকেই রাহুলের কথা বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্পিকার।
যদিও বিরোধী দলনেতার মন্তব্য বাদ দেওয়া যে আসলে একভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টাই, সে কথা বলতে ছাড়ছেন না রাহুল গান্ধী। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই আচরণ সংসদীয় গণতন্ত্রেরই বিরোধিতা করে। তবে মোদি জমানায় যতই সে চেষ্টা হোক, তাতে সত্য চাপা পড়বে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন বিরোধী দলনেতা।