টি-২০ বিশ্বকাপের উন্মাদনায় ভাসছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কমেন্ট্রি বক্সে চোখ রাখলে রবি শাস্ত্রী, সুনীল গাভাসকর, রামিজ রাজাদের পাশাপাশি দেখা যাবে কেটি মার্টিন, নাটালি গারমানোস-দেরও। মাঠের মতোই, ধারাভাষ্যেও জায়গা করে নিয়েছেন নারীরা। তবে কার হাত ধরে সে পথ খুলেছিল, জানেন?
সম্প্রতি মন্দিরা বেদি জানিয়েছিলেন তাঁর ক্রিকেট সঞ্চালনা শুরুর সময়কার গল্প। বলেছিলেন, তাঁর সময়ে কোনও নারীকে এই ভূমিকায় দেখতে আদৌ প্রস্তুত ছিলেন না পুরুষ ক্রিকেট তারকারা। ফলে গোড়ার দিকে রীতিমতো অবজ্ঞা আর অপমানই সহ্য করতে হয়েছিল মন্দিরাকে। বস্তুত, ক্রিকেটের মাঠে নামতে চেয়ে মেয়েদের যেমন বহু বাধা পেরোতে হয়েছে, তেমনই ক্রিকেটের ধারাভাষ্য দেওয়া কিংবা সঞ্চালনা করার কাজও মেয়েদের হাতে ছাড়তে চায়নি ক্রিকেটদুনিয়ার একটা বড় অংশ। কিন্তু সেই পুরুষশাসিত দুনিয়াতেই প্রথম ঠাঁই করে নিয়েছিলেন যে নারী, তাঁকে চেনেন কি?
কেবল ভারতের নয়, গোটা বিশ্বেরই প্রথম নারী তিনি, যিনি ক্রিকেটে কমেন্ট্রি দিতে শুরু করেছিলেন। তিনি চন্দ্রা নাইডু। এ দেশে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার প্রথম যুগে যাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন, তিনি তাঁদেরই একজন। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছিলেন কিছুদিন, পরে উত্তরপ্রদেশ মহিলা ক্রিকেট দলেরও নেতৃত্ব দেন। সাতের দশকেই ধারাভাষ্য দিতে শুরু করেন চন্দ্রা। ১৯৭৬-৭৭-এর মরশুমে এমসিসি বনাম বম্বের মধ্যে একটি ম্যাচে ধারাভাষ্য দিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীকালে অবশ্য পেশা হিসেবে বেছে নেন অধ্যাপনা। ইংরেজি পড়ালেও, হিন্দিতেও সমান দখল ছিল তাঁর। ধারাভাষ্যের সময় কাজে লাগত তাঁর এই ভাষাজ্ঞান। হিন্দি ও ইংরেজিতে সমান তালে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ম্যাচে কমেন্ট্রি করতেন চন্দ্রা নাইডু। আবার ১৯৭৯-৮০তে ইংল্যান্ডের ভারত সফরের সময় অল ইন্ডিয়া রেডিওর হয়ে ধারাভাষ্য দেন তিনি। মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য ছিলেন চন্দ্রা। মেয়েদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্যও যথেষ্ট চেষ্টা করে গিয়েছেন আজীবন।
অবশ্য চন্দ্রার বাড়ির হাওয়াতেই মিশে ছিল ক্রিকেট। ভারতের প্রথম টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সি কে নাইডুর মেয়ে তিনি। দেশের হয়ে খেলেছেন তাঁর কাকা সি এস নাইডুও। বাবার মতোই, প্রথম হতে চেয়েছিলেন চন্দ্রাও। চেয়েছিলেন কোনও বিষয়ে নিজের ছাপ রেখে যাবেন। বাড়ির ধারা মেনেই ক্রিকেট খেলায় পা রাখেন তিনি। আর পরবর্তী কালে সেই খেলাতেই প্রথম মহিলা ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিজের জায়গা করে নেন চন্দ্রা নাইডু।