তাঁর কাজের সমালোচনা থাকতেই পারে। তবে, দেশের মহিলা রাজনীতিবিদ হিসাবে তিনি যে রেকর্ড গড়লেন, তা নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁর ভাবনায় মহিলাদের আলাদা ‘জাতি’ হিসাবেই ঘোষণা করেছিলেন। সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল যে লক্ষ্য নিয়ে তৈরি, বলা যায় সেই পথে অনেকখানি আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন নির্মলা সীতারমণই।
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে তিনি ভোটে লড়তে চাননি। কারণ হিসাবে জানিয়েছিলেন, ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অর্থ তাঁর নেই। যিনি নিজে ছিলেন অর্থমন্ত্রী, তাঁর এমন কথা শুনে অনেকেই চমকেছিলেন। এমনকী রাজনৈতিক মহলে বহু জল্পনাও শুরু হয়েছিল। আপাতত সে সব অতীত। তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আর তাঁর মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিলেন নির্মলা সীতারমণ। এই নিয়ে তৃতীয়বার তিনি জায়গা পাচ্ছেন মোদির মন্ত্রিসভায়। মহিলা মন্ত্রী হিসাবে যা রেকর্ডও।
আরও শুনুন: মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি! তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, তবু আক্ষেপ মোদির
পরপর তিন বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড স্পর্শ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ঘটনাচক্রে তাঁর মন্ত্রিসভায় তিন বারই মন্ত্রী হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন নির্মলা সীতারমণ। নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন সাত জন মহিলা মন্ত্রী। নির্মলা ছাড়াও আছেন অনুপ্রিয়া প্যাটেল, রক্ষা খাড়সে, সাবিত্রী ঠাকুর প্রমুখ। তবে, পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে তিন বারই মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নেওয়ার কৃতিত্ব নির্মলারই।
রাজনীতিতে নির্মলার জার্নি রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই। ২০০৮ সালে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। দু-বছরের মধ্যেই সুষমা স্বরাজের পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন দলের অন্যতম প্রধান মহিলা মুখপাত্র। সেই সময় থেকেই নানা প্রশ্ন তুলে তিনি সংবাদমাধ্যমের নজরে আসেন। এবং টেলিভিশন মিডিয়ার তর্ক-বিতর্কে অংশগ্রহণ করে সারা দেশেই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে প্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর জায়গা হয় মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রী হিসাবে তাঁর জার্নি সেই শুরু। তবে প্রথমেই অর্থমন্ত্রক পাননি। প্রথমে সামলেছেন শিল্প-বাণিজ্য। পরে, ২০১৭ সালে তাঁর হাতে আসে প্রতিরক্ষা। সে-ও ছিল এক রেকর্ড। এরপর অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর যোগদান ২০১৯-এ। রাজনৈতিক গুরু হিসাবে যাঁকে স্বীকার করেন নির্মলা, সেই অরুণ জেটলি অসুস্থ হয়ে পড়লে, সেবার অর্থমন্ত্রকের ভার যায় নির্মলার উপরেই। বিজেপির অর্থনৈতিক সংস্কারের বরাবরই পক্ষপাতী ছিলেন নির্মলা। অতএব দায়িত্ব পেয়েই সংস্কারের কাজ শুরু করেন। জিএস্টি লাগু করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাঁর আমলেই দেখা গেল। গত ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তী বাজেট ধরে নিলে এযাবৎ প্রায় ৬ বার বাজেট পেশ করেছেন নির্মলা। অরুণ জেটলির মতোই, বাজেট পেশের আঙ্গকিকেও তিনি এনেছেন পরিবর্তন। লেদার ব্রিফকেস হাতে বাজেট পেশের ধরন বদলে গিয়েছে তাঁর আমলেই। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইন্দিরা গান্ধী কিছুদিন অর্থমন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলেছিলেন। তবে, স্বাধীন ভারতে মহিলা রাজনীতিবিদ পরপর দুবার অর্থমন্ত্রক সামলানোর কৃতিত্ব তাঁরই।
আরও শুনুন: লোকসভায় কেন ৪০০ পার হল না বিজেপির? ভোটারদের মনের খোঁজে বিজ্ঞানীরা
তাঁকে নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। তাতে তিনি তেমন বিচলিতও হন না। নানা সময়ে তাঁর মন্তব্য নিয়ে জলঘোলা হয়েছে। আবার ইলেক্টোরাল বন্ড ইস্যুতে তাঁর স্বামীর মন্তব্য ছিল সরাসরি মোদি সরকারের প্রতি আক্রমণ। তবে, এক সংসারে থেকেও যে ভিন্ন রাজনৈতিক মত থাকতেই পারে, তা স্বীকার করে নিয়েছিলন বিজেপির তাবড় নেতারাও। অর্থমন্ত্রক সামলানোর ক্ষেত্রে নির্মলার দক্ষতাই শেষ কথা ছিল তাঁদের কাছে। এবারও মন্ত্রিসভা গঠনের সময়, সেই দক্ষতার উপরই ভরসা রাখল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পূর্ণমন্ত্রী হিসাবেই শপথ নিয়েছেন নির্মলা।
তাঁর কাজের সমালোচনা থাকতেই পারে। তবে, দেশের মহিলা রাজনীতিবিদ হিসাবে তিনি যে রেকর্ড গড়লেন, তা নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁর ভাবনায় মহিলাদের আলাদা ‘জাতি’ হিসাবেই ঘোষণা করেছিলেন। সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল যে লক্ষ্য নিয়ে তৈরি, বলা যায় সেই পথে অনেকখানি আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন নির্মলা সীতারমণই। এনডিএ সরকারে পরপর তিন বার মহিলা মন্ত্রী হয়ে যে মাইলফলক রচনা করলেন নির্মলা, আগামী দিনে মহিলা রাজনীতিবিদদের কাছে তা প্রেরণার হয়েই থাকবে।