নির্বাচন শেষ। এবার ভোট গণনার পালা। কমিশনের ঠিক করে দেওয়া দিনেই দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে শুরু হয়ে যাবে ভোট গণনা। কিন্তু কীভাবে? কোন নিয়ম গণনা হয় ভোটের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নির্বাচনের সাতটি দফা শেষ। অপেক্ষা স্রেফ ফলাফলের। শেষ হাসি কার মুখে ফুটবে দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশ। ইতিমধ্যেই এক্সিট পোল সম্ভাব্য জয়ীর নাম ঘোষণা করেছে। কিন্তু তা মানতে নারাজ বিরোধীরা। কাজেই গণনার দিনেও যে কারচুপির অভিযোগ উঠবে না, একথা কেউ হলফ করে বলতে পারেন না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভোট গণনায় আদৌ কারচুপি সম্ভব?
কমিশনের নিয়ম জানলেই এ ব্যাপারে ধারণা মিলবে। আসলে, ভোটদানের পদ্ধতি যতই সহজ হোক, গণনা মোটেও সহজ নয়। কমিশনের ঠিক করে দেওয়া আধিকারিকের কড়া নজরদারিতে গণনা চলে। সেখানে সাধারণ কারও প্রবেশ নিষেধ। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও থাকে সেইমতো। এমনকি সাংবাদিকদেরও অপেক্ষা করতে হয় গণনাকেন্দ্রের বাইরেই। নির্দিষ্ট সময়ের পর ফলাফল প্রকাশ্যে আনেন কমিশনের আধিকারিকরাই। কোনও কেন্দ্রেই স্রেফ একটা বুথ নেই। লোকসভার ক্ষেত্রে তো আরও বেশি। একই কেন্দ্রের আওতায় একাধিক বিধানসভা। তার ভিতর অসংখ্য বুথ। কাজেই একবারে সবটা গণনা শেষ হয় না। মোটামুটি সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় গণনা। শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। কখনও আবার আরও বেশি সময় লাগে সম্পূর্ণ গণনা হতে। তাও মোটামুটি ভোটপ্রাপ্তির হার দেখে ধরে নেওয়া হয় কোন কেন্দ্রে কে জিতছেন। গণনা হয় রাউন্ডের হিসাবে। একবারে ১৪টি ইভিএমে প্রাপ্ত ভোট গণনা করা হয়। সেইমতো সংখ্যা সামনে আসে। এভাবেই ওই কেন্দ্রে যত বুথ, সব জায়গা থেকে আসা ইভিএমে প্রাপ্ত ভোট গণনা করা হয়। কোথাও ১০ রাউন্ড, কোথাও আবার ১৪ রাউন্ড শেষে গণনা শেষ হয়। সুতরাং সবমিলিয়ে কয়েকশো ইভিএম কাউন্টের পরই কোনও কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থীকে চিহ্নিত করা সম্ভব। যদিও কমিশনের তরফে সম্পূর্ণ গণনা শেষ না হওয়া অবধি জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় না। কারণ স্রেফ জয়ীর নাম ঘোষণা করলেই হল না। দ্বিতীয় স্থানে কে রয়েছে, তৃতীয় স্থানেই বা কে, সে হিসাবও জানাতে হয় কমিশনকে। এছাড়া আরও একটা বিষয় কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তা হল, যতজন প্রার্থী ভোটে অংশ নিয়েছেন সবার ভোট হিসাব করা। সাধারণত সংবাদমাধ্যমগুলি কোনও কেন্দ্রের সব প্রার্থীর ফলাফল প্রকাশ করে না। তবে কমিশনকে অবশ্যই তেমনটা করতে হয়।
প্রতি কেন্দ্রের জন্য কমিশনের তরফে একজন রিটার্নিং অফিসার নির্দিষ্ট করা হয়। গণনার যাবতীয় দায়িত্ব তাঁরই। তিনিই ঠিক করেন ভোটগণনার করবেন কারা। সরকারি আধকারিকদের মধ্যে থেকে ভোটগণনা কর্মী বেছে নেওয়া হয়। গণনা কেন্দ্রও ঠিক করেন ওই অফিসার। সাধারণত কোনও বড় হলঘরে গণনা করা হয়। যাতে একসঙ্গে সবটায় নজরে রাখা যায়। তবে একার পক্ষ সবটা নজর রাখা সম্ভব নয়। তাই রিটার্নিং অফিসারকে সাহয্য করার জন্য কয়েকজন আধিকারিক থাকেন। এঁরা অ্যাসিটান্ট রিটার্নিং অফিসার। প্রতিটি গণনা টেবিলে এঁরা নজর রাখেন। যে কেন্দ্রের গণনা চলছে সেখানে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সমস্ত প্রার্থীই উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে গণনাকেন্দ্রের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি স্রেফ এজেন্টদের। তাও খুব বেশি হলে ১-২ জন। কাজেই পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা কম। গণনার শুরুতেই পোস্টাল ব্যালট গণনা করা হয়। তারপর ইভিএম গণনা শুরু। একইসঙ্গে ভিভিপ্যাট (VVPAT) মেলানোও গণনার বিশেষ অঙ্গ। তারও বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এই কাজের জন্য গণনাকেন্দ্রেই আলাদাভাবে জায়গা করা হয়। আসলে, ভিভিপ্যাট স্লিপ মেলা মানেই সেক্ষেত্রে গণনায় কোনও ভুল নেই। চলতি নির্বাচনেও ভিভিপ্যাট নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ রায় দিয়েছে। সেইসব মেনেই গণনা হবে।