বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর! আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বা যুক্তি দিয়ে বোঝা অসম্ভব। ঠিক যেমন প্রার্থনার জোরে বৃষ্টি থামানো। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এমনটা করেই মোটা টাকা রোজগার করেন কেউ কেউ। ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। থামার নামগন্ধ নেই। এদিকে বিকেলেই অনুষ্ঠান। সবকিছু পণ্ড হওয়ার জোগাড়। এমন সময় হাজির বেঁটেখাটো চেহারার এক ব্যক্তি। পরনে সাদা পোশাক, হাতে কিছু ফুল আর ধুপকাঠি। দাবি, এই ভয়ঙ্কর বৃষ্টি তিনি চাইলেই থামিয়ে দিতে পারবেন। বদলে কিছু টাকা দিতে হবে। শুনে আজগুবি মনে হতেই পারে। কিন্তু এমনটা সত্যি বলেই বিশ্বাস করেন অনেকে। স্রেফ প্রার্থনা করেই নাকি আকাশের মেজাজ রাতারাতি বদলে দিতে পারেন এঁরা।
আরও শুনুন: বৃষ্টি আর খিচুড়ি যেন বাঙালির উত্তম-সুচিত্রা, কী কারণে এই যুগলবন্দি?
প্রকৃতির উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কাজেই কখন বৃষ্টি হবে, কখন রোদ উঠবে তা ঠিক করে দিতে পারেন না কেউ। আবহাওয়াবিদরা আগাম জানতে পারেন মাত্র। সেইমতো সতর্ক হওয়া যায় বড়সর দুর্যোগের থেকে। তাও প্রকৃতির তাণ্ডব মাত্রা ছাড়ালে দুর্ভোগ মানতেই হবে। তাই বলে বৃষ্টির সময় কোনও অনুষ্ঠান হবে না? অবশ্যই হবে। আর সেখানে বৃষ্টির বাধা কাটানোর জন্যই রয়েছে ‘রেইন স্টপার’রা। এঁদের কাজই প্রার্থণা করে বৃষ্টি থামানো। তার জন্য বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। নির্দিষ্ট সুরে মন্ত্রপাঠ সেইসঙ্গে ধুপ জ্বালানো। বেশ কিছুটা ধোঁয়া তৈরি হবে ওইভাবে। মনে হবে ছোটখাটো চেহারার একটা মেঘ জন্ম নিল মাটিতেই। সেই ধোঁয়া ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে যাবে। বিশ্বাস, এই ধোঁয়াই আকাশের কালো মেঘ কাটিয়ে দেবে। পাকাপাকিভাবে নয়। অনুষ্ঠানের জন্য যতক্ষণ দরকার ঠিক ততটুকু সময়ের জন্য থেমে যাবে বৃষ্টি। প্রয়োজন মিটে গেলে আবার আগের মতো বৃষ্টি নামবে। অনেকেই এই বিশ্বাসে ভর করে রেইন স্টপারদের বৃষ্টি বন্ধের বরাত দেন। এমনকি বিয়ের প্যাকেজেও এঁদের রাখা হয়। হঠাৎ আকাশের মুখ ভার হলেও চিন্তা থাকবে না। সামলে দেবেন রেইন স্টপাররাই।
আরও শুনুন: বাইরে বৃষ্টি দেখেই যৌনতার শখ, সংক্রমণের বিপদ এড়াতে কীভাবে সাবধান হবেন?
তবে এই ধারণা আমাদের দেশে প্রচলিত নেই। ইন্দোনেশীয়ার জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্রে বালি-তে এমন পরিষেবা চালু রয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করেন, প্রকৃতির আসল নিয়ন্ত্রক বিভিন্ন অপদেবতা। তাঁদের তুষ্ট করতে পারলেই হাতের মুঠোয় থাকবে আবহাওয়ার নিয়ন্ত্রণ। রেইন স্টপাররা খানিক সেই কাজই করেন। প্রত্যেকে বিশেষ প্রার্থনার জোরে বৃষ্টির দেবতাকে তুষ্ট করেন। তাঁদের প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে দেবতা বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। বিনা পয়সায় অবশ্য এই কাজ হয় না। কেউ কেউ ১০-১২ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন স্রেফ একবার বৃষ্টি বন্ধের জন্য। মূল্য নির্ধারিত হয় বৃষ্টির পরিমাণ ও কতক্ষণ বন্ধ রাখতে হবে সেই হিসাব মেনে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এর সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। হয়তো নেই। কিন্তু বিশ্বাসের কাছে সেই সমস্ত ব্যাখ্যা ফিকে হয়ে যায়। সে দেশের অনেকেই দাবি করেন, রেই স্টপাররা ম্যাজিকের মতো বৃষ্টি বন্ধের ক্ষমতা রাখেন। তাই তাঁদের সঙ্গে বিশেষ দামাদামি করেন না কেউ। ভক্তিভরে তাঁদের প্রার্থনার জন্য অনুরোধ করেন মাত্র। আর সেই প্রার্থনার জোরে বৃষ্টি থামলেই নিশ্চিন্তে অনুষ্ঠানের আয়োজন সারা হয়।