নায়ককে শরীর দেখাতে হয় না। নায়িকাকে নগ্ন করেই লোক টানতে চায় সিনেমা। নিজের এক সিনেমার পোস্টার সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করেছিলেন অভিনেত্রী স্মিতা পাতিল। ঠিক কোন প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছিলেন স্মিতা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সিনেমায় নারী শরীর প্রদর্শন কোনও নতুন ঘটনা নয়। বিশেষ করে সিনেমার পোস্টার তৈরির ক্ষেত্রে এমন অনেক কিছুই রাখা হয়, যার উদ্দেশ্য স্রেফ আকর্ষণ তৈরি করা। কাজেই নায়িকার উত্তেজক ছবি পোস্টারে ব্যবহার করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য হন নির্মাতারা। কিন্তু যে ছবি সমাজের কথা বলে! যেখানে নায়িকার চটুল নাচ নেই! সেইসব সিনেমার পোষ্টার আকর্ষনীয় হবে কীভাবে?
আরও শুনুন: রাতভর বৃষ্টিতে ভিজে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়, অঝোরে কেঁদেছিলেন স্মিতা পাতিল
এক্ষেত্রেও অনেক সময় নায়িকার ছবিই আশ্রয় হয়ে ওঠে। স্মিতা পাতিল অভিনীত ‘চক্র’ সিনামের কথাই ধরা যাক। সিনেমায় সমাজের নিচুর তলায় থাকা মানুষের জীবনযাপন দেখানো হয়েছে। কিন্তু সিনেমার পোস্টারে সেই অর্ধনগ্ন নায়িকার ছবি। রাস্তার ধারে কলের নীচে বসে স্নান করছেন স্মিতা। সেই সময় এই সিনেমা নিয়ে যেমন চর্চা হয়েছিল, তার থেকেই বেশি আলোচনা হয়েছিল সিনেমার পোস্টার নিয়ে। এমনিতে নায়িকা স্মিতার আবেদন দেখার জন্য সেকালে সিনেমাহলে ভিড় জমাতেন অনেকেই। তবু সিনেমার পোস্টারে তাঁর ওই অর্ধনগ্ন ছবি নিয়ে সিনেবোদ্ধারা নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন। এমনই এই সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রীর কাছেই জানতে চাওয়া হয়, তিনি একন এই ধরনের ছবি পোস্টারে রাখার অনুমতি দিলেন?
আরও শুনুন: ‘গাঙ্গুবাই’ আলিয়ার আগেও পর্দায় যৌনকর্মীদের ফুটিয়ে তুলেছিলেন এই নায়িকারা
উত্তরে ব্যাখ্যা দিয়ে সবটা বুঝিয়েছিলেন স্মিতা। আসলে, সিনেমায় অভিনয় ছাড়া নায়ক-নায়িকাদের বিশেষ কোনও দায়িত্ব থাকে না। বিশেষ করে সিনেমার প্রচারে কীভাবে হবে সেই নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনও পড়ে না তাঁদের। সোশাল মিডিয়ার দুনিয়ায় ছবিটা হয়তো বদলেছে। তবে স্মিতা যে সময় অভিনয় করতেন তখন সিনামের প্রচার বা বাজারিকরণের দায়িত্ব কোনওভাবেই কলাকুশলীর হাতে থাকত না। ভক্র ছবির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অর্থাৎ সিনেমার পোস্টারে কোন ছবি থাকবে তার জন্য আলাদা করে স্মিতা অনুমতিও নেওয়া হয়নি বলা যায়। তাই ছবির পোস্টার ওমন হবে, বা সেই পোস্টার গোটা দেশের ছড়িয়ে পড়বে এই নিয়ে কার্যত কোনও ধারণা ছিল না স্মিতার। তবু সাক্ষাৎকারে তিনি আক্ষেপের সুরেই বলেন, পুরো বিষয়টি তাঁর হাতে থাকলে তিনি কখনওই ওই ছবি বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার পথ খোলা রাখতেন না। সিনেমার প্রসঙ্গে তিনি চরিত্রের কথা বলেন। বস্তিতে থাকা এক মহিলার জীবন তুলে ধরা হয়েছিল ছবিতে। যার নিজের তেমন কোনও বাসস্থান নেই। কাজেই স্নান করার জায়গাও যে থাকবে না। সবমিলিয়ে এই ছবি যে সমাজকে এক বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছে তা সহজেই বুঝিয়ে দেন স্মিতা। কিন্তু গোল বাঁধে সিনেমার ব্যবসায়িক প্রচারের ক্ষেত্রে। সেখানে প্রথমত তাঁর হাত ছিল না। এবং নায়িকার শরীর দেখালে সিনেমার পোস্টার দেখে মানুষের আগ্রহ বাড়বে। তাই এই ছবির ওমন পোস্টারই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে স্রেফ চক্র সিনেমাটির ক্ষেত্রেই নয়, আরও অনেক ছবিতেই এই ধরনের পোস্টার তৈরি হত বলেও উল্লেখ করেন স্মিতা। খানিক আক্ষেপের সুরেই স্মিতা বলেন, সিনেমায় নায়কের শরীর দেখিয়ে কোনও লাভ নেই। এদিকে নারী শরীর দেখালেই সবাই ভাবেন আরও কিছু লোক জড়ো হবে। তাই নিজে সিনে জগতের অংশ হয়েও এই পন্থাকে কোনওভাবেই সমর্থন করেননি। বরং এইভাবে ছবির প্রচার ভুল বলেই মনে করতেন স্মিতা।
Late Smita Patil on women’s objectification as a strategy to sell films. Remembering the queen of women-centric films on her birth anniversary💐 pic.twitter.com/95jJr7gfdk
— Garima (@j_garima_j) October 17, 2021