মোদি এবং মোদি সরকারের সমালোচনা করা যশবন্তের কাছে নতুন কিছু নয়। অতীতেও তিনি এ কাজ করেছেন। এমনকী চলে এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসেও। সুতরাং মোদির কাজকর্মের সঙ্গে তিনি যে সহমত পোষণ করবেন না, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে বাজপেয়ীর সঙ্গে মোদি ও তাঁর সরকারকে একাসনে বসাতে নারাজ তিনি?
প্রায় আড়াই দশক যুক্ত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। বাজপেয়ী সরকারের আমলে সামলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকও। সেই যশবন্ত সিনহা বলছেন, ধারেভারে বাজপেয়ীর ধারেকাছেও আসেন না নরেন্দ্র মোদি। এমনকী মোদি সরকারকে দেখে নাকি স্বর্গে খানিক উদ্বিগ্ন আর হতাশই হতেন বাজপেয়ী।
আরও শুনুন: দোষ দেওয়ার নন্দ ঘোষ নয়, ভোটের হাওয়ায় নেহরু যেন এখন মোদির ‘মিত্র’
মোদি এবং মোদি সরকারের সমালোচনা করা যশবন্তের কাছে নতুন কিছু নয়। অতীতেও তিনি এ কাজ করেছেন। এমনকী চলে এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসেও। সুতরাং মোদির কাজকর্মের সঙ্গে তিনি যে সহমত পোষণ করবেন না, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে বাজপেয়ীর সঙ্গে মোদি ও তাঁর সরকারকে একাসনে বসাতে নারাজ তিনি? যশবন্তের বিশ্লেষণ, যদি আন্তর্জাতিক পরিসরের কথা ধরা যায়, তাহলে মোদি ততটাও বলিষ্ঠ নেতা নন, যেমনটা বাজপেয়ী ছিলেন। তবে, ফারাক বলতে কি শুধু এটুকুই! প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, দুই নেতার চরিত্রগতও অনেক ফারাক আছে। বাজপেয়ীর আচরণ ছিল অনেক বেশি গণতান্ত্রিক। সরকার কিংবা দলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে, সকলেই নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারতেন। কেউ ভয় পেতেন না। এমন নয় যে, বাজপেয়ী সব মত মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সেই আলোচনার পরিসর ছিল। তাঁর নিজের উদাহরণ দিয়েই তিনি বলেছেন যে, বহুবার তাঁর প্রস্তাব সমর্থন করেননি বাজপেয়ী। তবে তিনি যে প্রস্তাব দিতে পারেননি বা নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেননি, তা নয়। বাজপেয়ী প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই পরিসরকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাঁর আক্ষেপ যে, বর্তমানে আর সেই পরিসর নেই। মোদিকে উল্লেখ করে তাঁর মন্তব্য যে, বর্তমান নেতৃত্ব অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী। এবং তাঁর বক্তব্য, এখন কারোরই কোনও কথা বলার অধিকার নেই। আর তাই বাজপেয়ীর সঙ্গে মোদির তুলনা টানতে নারাজ তিনি। বরং তাঁর মত যে, মোদিকে দেখে পরলোকে হতাশই হতেন বাজপেয়ী।
চলতি ভোট নিয়েও তাঁর পর্যবেক্ষণ এই মতামতেরই প্রতিফলন বলা যেতে পারে। তাঁর মতে, ২০০৯-এর পর এই প্রথমবার দেখা যাচ্ছে রাজনীতিতে বহুচর্চিত ‘ওয়েভ’ আর সেভাবে কার্যকরী বলে মনে হচ্ছে না। ভোট নিয়ে মানুষের উৎসাহে যে ভাটা পড়েছে তাও স্বীকার করে নিচ্ছেন তিনি। বিজেপির আসন সংক্রান্ত তাঁর বিশ্লেষণও তাই তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। তাঁর মতে, বিজেপি ভোট পাওয়ার ঊর্ধসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। হিন্দিবলয় থেকে শুরু করে যে সব জায়গায় বিজেপির জোরালো উপস্থিতি, সেখানে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে গিয়েছে। এরপর বড়জোর ভোট কমতে পারে, বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার বিজেপিও নতুন করে এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে না, যা মানুষকে টেনে রাখতে পারে। তাঁর মতে, দশ বছর ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার পরে সরকার আর বলতে পারে না যে, দেখো এই কাজটা করা হয়নি, আরও পাঁচ বছর সময় পেলে নিশ্চিত করে দেখাব। ফলে, যে গ্যারান্টির কথা বলা হচ্ছে তা ফাঁকা আওয়াজ বলেই তাঁর বিশ্বাস। আর তাই তাঁর অভিমত, মোদির গ্যারান্টি আদৌ ভোটে বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারবে না। চারশো পারের বিষয়টি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, কেউই তো ব্যাখ্যা করে বলতে পারছেন না যে, অতিরিক্ত একশো আসন আসবে কোথা থেকে? অতএব এই সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করছেন। মোদি সরকারের কাজকর্মের সমালোচক তো তিনি বটেই। এমনকী রাজনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও মোদিকে যে তিনি বাজপেয়ীর সঙ্গে তুলনায় রাখতে চান না, সে কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতেও দ্বিধা করেননি প্রবীণ নেতা।