একবার নয়। দুবার ভোট দিচ্ছেন সকলে। অথচ কেউ অভিযোগ তুলছে না সেই নিয়ে। ভোট দিতে বাধাও দেওয়া হচ্ছে না। নিশ্চিন্তে একের জায়গায় দুই আঙুলে কালি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন গ্রামবাসীরা। ব্যাপারটা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সে অধিকার ফলানোর সুযোগ মেলে একবারই। নিয়ম অনুযায়ী, দুবার ভোট দেওয়ার এক্তিয়ার নেই কারও। কেউ এমনটা করলে তা বেআইনি বলেই ধরা হয়। কিন্তু দেশের সবর্ত্র এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। এমন এক গ্রাম রয়েছে যেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা নিশ্চন্তে দুবার ভোট দিতে পারেন।
কথা বলছি কোটিয়া সম্পর্কে। ওড়িশা-অন্ধ্রের বর্ডারে এই অঞ্চলে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। জনসংখ্যা হাজার পাঁচেক। তার মধ্যে ২১ টি গ্রামের বাসিন্দাদের রয়েছে এই বিশেষ ক্ষমতা। এঁরা প্রত্যেকেই যে কোনও নির্বাচনে দুবার ভোট দিতে পারেন। দুই আঙুলে কালিও লাগান নিশ্চিন্তে। কিন্তু কীভাবে? সবটাই সরকারি হিসাবের গড়মিল বলা যায়। এই কজন গ্রামবাসীর রয়েছে দুটি করে ভোটার কার্ড। রেশন কার্ডের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। তফাৎ বলতে দুই কার্ডে আলাদা আলাদা রাজ্যের নাম। একটায় অন্ধ্রের অন্যটায় ওড়িশার। আসলে, দুই রাজ্যের সীমানায় বাড়ি হওয়ায় এই গোলমাল হয়েছে তাঁদের সঙ্গে। হিসাবমতো দুই রাজ্যের সরকারই তাঁদের পরিষেবা দিতে বাধ্য। বাস্তবে হয়ও তাই। যে কোনও পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্যের সুযোগ এলে, এঁদের কাছে দুবার সাহায্য পৌঁছয়। বদলে গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও এঁরা দ্বৈত ভূমিকা পালন করেন। সকালে ওড়িশার কেন্দ্রে ভোট দিয়ে, বিকেলে পৌঁছে যান অন্ধ্রে। সেখানেও একইভাবে ভোট দেন।
ব্যাপারটা যে কমিশন জানে না এমনও নয়। ওড়িশা ও অন্ধ্রের দুই কেন্দ্র নির্বাচন করাতে আসা আধিকারিকরা সকলেই এই গ্রামবাসীদের অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু সমাধান করার কোনও উপায় নেই। তাই তাঁদের দুবার ভোট দেওয়ায় কোনও আপত্তি তোলা হয় না। যদিও এ সমস্যা আজকের নয়। অনেকেই দাবি করেন, ব্রিটিস আমল থেকে এই সমস্যা চলে আসছে। মাঝে আদালতেও মামলা হয় এই সমস্যা মেটানোর জন্য। তাতে কারণ হিসেবে উঠে আসে সার্ভের গণ্ডগোল। দুই রাজ্যের তরফেই এই গ্রামের মানুষদের ভোটের তালিকায় রাখা হয়েছে। সেই কারণেই এই সমস্যা। চলতি নির্বাচনেও এঁদের অনেকেই দুবার ভোট দিয়েছেন। দুই হাতের আলাদা আলাদা আঙুলে কালির ছাপও লাগিয়েছেন। এই নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনও অভিযোগ নেই। বরং অনেকেই বেশ গর্ব করে দুট ভোটার কার্ড নিয়ে ঘোরেন। তবে এই ঘটনা যে ব্যতিক্রম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।