দলিতরা পানীয় জল পাচ্ছেন। সেই কারণে জল পাচ্ছেন না গ্রামের হিন্দুরা। এই অভিযোগেই সরব গোটা গ্রাম। প্রতিবাদে ভোটই দিলেন না ৯০০-রও বেশি গ্রামবাসী। কোথায় ঘটেছে এই কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চাঁদিফাটা গরম। চড়া রোদে বাইরে যেতে চাইছেন না কেউই। প্রয়োজনে বেরোতে হলেও, পর্যাপ্ত জল খেতেই হচ্ছে। এই অবস্থাতেও, জল খাওয়া নিয়ে বচসা! কোনও একজন নয়, গোটা গ্রামের মানুষ সরব হয়েছেন পাশের গ্রামে দলিতরা কেন জল পাচ্ছে সেই নিয়ে। প্রতিবাদে ভোট বয়কটের ব্রহ্মাস্ত্র হাতে তুলতেও, দুবার ভাবেননি তাঁরা।
আরও শুনুন: অ্যাপক্যাবে চড়তে বাধা স্বস্তিকাকে, নামের কারণেই ঘটল বড় বিপত্তি
ঘটনাটি তালিমনাড়ুর। পাশাপাশি দুই গ্রামে হিন্দু এবং দলিতদের দীর্ঘদিনের বাস। এমনিতে কোনও সমস্যা নেই। স্রেফ জলের ব্যবহার ছাড়া। একসময় দলিতরা সর্বসাধারণের জন্য থাকা কুয়ো থেকে জল খাওয়ার অনুমতি পেতেন না। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেই যোগ দেওয়ার অধিকার ছিল না তাঁদের। স্বাধীন ভারতে সেই ছবি বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন বাবাসাহেব আম্বেদকর। সংবিধান অনুযায়ী এই ধরনের ভেদাভেদকে প্রশ্রয় দেওয়াও আইনত অপরাধ। কিন্তু তা মানছে কজন! আগেও দলিতের উপর অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এবার সেই ‘অন্যায়’কে একপ্রকার জোর করে সমর্থন জানানোর দাবিও তুললেন উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। দক্ষিণের ওই দুই গ্রামের পানীয় জলের উৎস বলতে একটি বড় কুয়ো। কয়েক মাস আগে সেখান থেকে দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে দুই গ্রামে জল সরবারের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময় তীব্র আপত্তি তোলেন হিন্দু গ্রামের বাসিন্দারা। কোনওভাবেই আলাদা পাইপ করতে দেওয়া হবে না বলেই আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা। যদিও প্রশাসন সেসবে পাত্তা দেয়নি। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে পাইপের কাজ শেষ করে স্থানীয় প্রশাসন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেইসময় জলের ব্যবস্থা মেনে নেয় গ্রামবাসী। এদিকে কিছুদিন পর থেকেই নতুন অভিযোগে সরব হন হিন্দুরা।
আরও শুনুন: মেয়ে রাজনীতিতে নামবে! সম্পত্তি বেচে খরচ জোগালেন বাবা
দাবি ছিল, দলিতরা জল পাচ্ছে বলেই, তাঁরা জল পাচ্ছেন না। কিন্তু এই অভিযোগেও কার্যত পাত্তা দেয়নি প্রশাসন। তাই ভোটের আবহে প্রতিবাদে নতুন পন্থা বেছে নেন ওই হিন্দু গ্রামবাসীরা। সকলে মিলে ঠিক করেন ভোট দেবেন না। গ্রামের বাসিন্দার সংখ্যা ৯০০-রও বেশি। সকলেই হিন্দু। এত বড় সংখ্যায় ভোট যদি না পড়ে, তাহলে চিন্তার বিষয়। অথচ বাস্তবে হয়েছে এমনটাই। দলিতদের পৃথক পাইপলাইনের প্রতিবাদে ভোট বয়কট করেন হিন্দুরা। যদিও এমনটা নতুন কিছু নয়! বিভিন্ন কারণে নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েই থাকেন অনেকে। তবে কেউ খাবার জল পাচ্ছে সেই কারণে এমন প্রতিবাদের ঘটনা বিরল। বিশেষ করে, স্বাধীনতার এত বছর পরে যখন সংবিধানের মান্যতা নিয়ে এত চর্চা হয় সেই আবহে দেশের দলিতদের এমন অনাচারের শিকার হতে হচ্ছে, তা সত্যিই ভাবার বিষয়।