মহাকাশেই আবার ফেরত পাঠানো হবে সূর্যরশ্মি। তার জন্য কাজে লাগানো হবে মেঘ। সম্প্রতি পৃথিবীকে ঠাণ্ডা রাখার এমনই উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ঠিক কীভাবে এমনটা বাস্তবায়িত করবেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঋতুচক্রের হিসাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল শুরু হতে এখনও বাকি। কিন্তু বাইরে বেরোলে সে কথা মানবে কে! এখনই যা ভয়ঙ্কর গরম পড়েছে, তাতে আগামীর কথা ভেবে শিয়রে উঠছেন বিজ্ঞানীরা। সমস্যাটা মোটামুটি ভাবে গোটা বিশ্বেরই। তাই পৃথিবীকে ঠাণ্ডা করার উপায় খুঁজেছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবহে সামনে এসেছে পুরনো এক তত্ত্ব। যা কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর তাপ কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও শুনুন: এসি-র বিলে কপালে ঘাম! খরচ কমিয়েও গরমে ঘর ঠান্ডা থাকবে কোন কৌশলে?
বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যা তো আজকের নয়। দীর্ঘদিন ধরে এর জন্য লড়াই চালাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশ সংক্রান্ত যে কোনও আলোচনাতেই এই সমস্যার কথা উঠে আসে। নানা উদাহরণ তুলে বিপদের কথা মনে করিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা। এমনও দেখা যায়, কয়েক বছর আগে সতর্ক করে দেওয়া বিষয়, বাস্তবে মারাত্মক ক্ষতি করেছে স্রেফ অবহেলার জন্য। তবু সেইভাবে এই বিষয়ে ভাবনা নেই কারওর। ভাবলেও এর পাকাপাকি কোনও সমাধান এখনও মেলেনি। এদিকে উষ্ণায়নের প্রভাবে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে গরম। তথ্য বলছে ২০২৩ সালে সবথেকে বেশি গরমের রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এর থেকেই অনেকে আশঙ্কা করছেন, ২০২৪-এ গরমের প্রভাব আরও বাড়বে। আর সেই সমস্যা মেটাতেই নয়া উপায়ের কথা ভেবেছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নতুন এই উপায় কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন। তারপরই মনে করা হচ্ছে আগামীদিনে এই পদ্ধতি গোটা বিশ্বকে কিছুটা হলেও ঠাণ্ডা করতে পারবে।
ঠিক কী করতে চলেছেন তাঁরা?
আরও শুনুন: তীব্র গরমে অতিষ্ঠ, সূর্যের বিরুদ্ধেই মামলা ঠুকেছিলেন ব্যক্তি
আদপে গোটাটাই বিজ্ঞানের এক সহজ তত্ত্বের প্রয়োগ। একথা সকলেই জানে জল আলোর প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু তারও ভাগ রয়েছে। বিজ্ঞানের তত্ত্ব বলছে, জলের ছোট ছোট ফোঁটায় যে পরিমাণ প্রতিফলন ঘটে, বড় ফোঁটায় প্রতিফলন তার অনেকটাই কম হয়। তাই কোনওভাবে বাতাসে জলের ছোট ছোট কণা ভাসিয়ে দিতে পারলে, তার উপর প্রতিগফলিত হয়েই মহাকাশে ফিরে যেতে পারে বড় অংশ সূর্যরশ্মি। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছে একেবারে ছোট ছোট জলকণা দিয়ে মেঘ তৈরি করতে। যা এই প্রতিফলন করতে সাহায্য করবে। পরীক্ষাটিকে কোস্টাল অ্যাটমসফেরিক এরোসোল রিসার্চ এন্ড এনগেজমেন্ট এই নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত কাজে লাগানো হচ্ছে সমুদ্রের জল। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৯০ সালে প্রথমবার এই ধরনের উপায়ের কথা বলেছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লাথাম। কিন্তু জলকণা ঠিক কতটা ক্ষুদ্র হবে সেই আন্দাজ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। সম্প্রতি মার্কিন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, ওই জলকণা হতে হবে মানুষের চুলের যা বেধ তার ৭০০ ভাগের এক ভাগ মাপের। আর এমন মাপের কয়েক হাজার কোটি(quadrillion) জলকণা বাতাসে ভাসিয়ে দিতে হবে। তবে উদ্দেশ্য সফল হতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না এই কাজ মোটেও সহজ নয়। তার থেকেও বড় কথা, এইভাবে ঠিক কতটা গরম কমবে? তবু চেষ্টা করতেই হয়। সেই কারণে নতুন উপায় কাজে লাগিয়ে পরিবেশ ঠাণ্ডা করার চেষ্টা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। অনেকেই মনে করছেন, এতে অবশ্যই কাজ হবে। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও, আগামী দিনে বিশ্বের নানা প্রান্তে এই কাজ করা হবে। যাতে কোনও একটি দেশ বা জায়গা নয়, ঠাণ্ডা হয় গোটা পৃথিবীই।