যুক্তি-প্রতিযুক্তির কাঁটা কিন্তু একজন ক্রিকেটারের ক্রিকেটীয় দক্ষতা বা এবিলিটিকে ঘিরে নড়াচড়া করছে না। মাঝখান থেকে এসে বসেছে টাকার মস্ত বোঝা। সমালোচনা গড়িয়ে যাচ্ছে এই দিকে যে, যাঁকে বহু অর্থ দিয়ে একটা দল কিনেছে, তাঁকে প্রতিদিন পারফর্ম করেই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সেই দামের যোগ্য। সমস্যা কি ঠিক সেখানেই?
ইতিহাস এবং সর্বনাশ! একই সঙ্গে একজন মানুষ কি তা হয়ে উঠতে পারেন? চলতি আইপিএল মরশুমের দিকে তাকিয়ে অনেকেই বলছেন, তিনি নাকি মিচেল স্টার্ক! একে তো আইপিএল-এর ইতিহাসে সবথেকে দামি খেলোয়াড়। তার উপর আবার প্রথম দু-ম্যাচে তাঁর যা পারফরমেন্স, তা যদি চলতে থাকে তাহলে দলের সর্বনাশ। অতএব সবরকম সমালোচনার কাঠগড়ায় উঠেছেন তিনি। কীভাবে তাঁকে বল করতে হবে, এমন পরামর্শও দিচ্ছেন আমজনতা। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় দু-দশখানা মিম-মশকরা ছড়িয়ে তো পড়েইছে।
এই সবকিছুর মধ্যে যা চাপা পড়ে যাচ্ছে, তা হল মানুষটার নাম মিচেল স্টার্ক। পরিসংখ্যানের খতিয়ান দেওয়ার দরকার নেই। শুধু নিলামের অঙ্কেই মালুম হয়, কতখানি প্রতিভাবান এবং কার্যকরী হলে, তবে একজন খেলোয়াড়ের জন্য এরকম করে ঝাঁপাতে পারে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। এখনও পর্যন্ত যে দুটি ম্যাচ তিনি খেলেছেন, তাতে কার্যকরী ভূমিকায় দেখা যায়নি তাঁকে। স্পষ্ট যে, চেনা ছন্দে তিনি নেই। আবার এ কথাও ঠিক যে কুড়ি-বিশের খেলায় নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা থাকে। সেই শর্ত পূরণ করতে পারলে কেউ কেউ মারাত্মক কার্যকরী হয়ে ওঠেন। কাউকে বা খানিকটা ম্রিয়মাণ মনে হয়। তবে, তা দিয়ে কখনই কি একজন ক্রিকেটারের প্রতিভা বিচার করা যায়? বোধহয় না। আবার একথাও ঠিক, উঁচু তারে বাঁধা পারফরমেন্সের মঞ্চে কেউ বেশিদিন অনুজ্জ্বল থাকলে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। স্টার্ককে নিয়ে প্রশ্ন ওঠাও তাই অস্বাভাবিক কিছু নয়।
-: আরও শুনুন :-
ক্যাপ্টেন তৈরির কি কোটা ফ্যাক্টরি হয়? মাঠই অমোঘ পাঠশালা
তবে যুক্তি-প্রতিযুক্তির কাঁটা কিন্তু একজন ক্রিকেটারের ক্রিকেটীয় দক্ষতা বা এবিলিটিকে ঘিরে নড়াচড়া করছে না। মাঝখান থেকে এসে বসেছে টাকার মস্ত বোঝা। সমালোচনা গড়িয়ে যাচ্ছে এই দিকে যে, যাঁকে বহু অর্থ দিয়ে একটা দল কিনেছে, তাঁকে প্রতিদিন পারফর্ম করেই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সেই দামের যোগ্য। সমস্যা ঠিক এখানেই। স্টার্ক যে অর্থ পেয়েছেন তা তাঁর সারা জীবনের ক্রিকেটীয় দক্ষতার অর্জন। একটা টুর্নামেন্টের নিরিখে তা নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে না। এমন নয় যে, স্টার্ক যদি তুলয়ায় অনেক কম টাকা পেতেন, তাহলেই তাঁর উইকেট না-পাওয়া বরদাস্ত করা যেত। পারিশ্রমিক যাই-ই হোক না কেন, স্টার্কের মতো বোলারের ফর্ম খুঁজে পাওয়া জরুরি। স্টিভ স্মিথ সতীর্থকে খেয়াল করেছেন বেশ ভালোভাবেই। তাঁর বক্তব্য, স্টার্ক যেটা করতে চাইছেন, তা ভুল কিছু নয়। তবে, একবার যদি সুইং-এর অস্ত্রটি তিনি প্রয়োগ করতে শুরু করেন, তাহলেই খেলার রং বদলাবে। একজন বাঁ হাতি বোলার, যিনি প্রতি ঘণ্টায় ১৪৫ কিমিরও বেশি বেগে বল করেন, তাঁর সুইং সামলানো ডান-হাতি ব্যাটারদের কাছে দুঃস্বপ্নই হয়ে উঠতে পারে। প্রাক্তন ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠানের মতও অনেকটা তাই। তিনিও চাইছেন, সুইং-এর তির আসুক স্টার্কের হাত থেকে। তাহলে তিনিই হয়ে উঠবেন এমন বোলার যাঁর জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে চলতি আইপিএল।
সেই লাইন আর সুইং খুঁজে পাওয়া সময়ের অপেক্ষা। হয়তো ভারতীয় পরিবেশের সঙ্গে আর একটু মানিয়ে নিতে পারলেই স্টার্ক তাঁর সেই মোক্ষম ব্রহ্মাস্ত্র খুঁজে পেয়ে যাবেন। সবটাই নির্ভর করছে ক্রিকেটীয় পরিস্থিতির উপর। স্টার্কের ফর্মে ফেরা নির্ভর করছে ক্রিকেটের ব্যাকরণের উপরই। টাকার অঙ্কের জন্য নয়। অথচ সব সমালোচনার কেন্দ্র ওই টাকাই। যেন তিনি সবথেকে দামি প্লেয়ার বলেই প্রতি ম্যাচে সবথেকে বেশি উইকেট নেওয়ার দায় তাঁরই। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে টাকার ওড়াওড়ি নতুন কিছু নয়। তবে, টাকা দিয়ে ক্রিকেট মাপাই যদি দস্তুর হয়ে ওঠে, তাহলে তা মোটেও সুখের জিনিস নয়। অর্থ সেখানে এক রকম অনর্থই।
স্টার্কের ফর্মে ফেরা জরুরি, তবে সেটা প্রায় পঁচিশ কোটি টাকার জন্য নয়; তিনি মিচেল স্টার্ক বলেই।