আজকের আধুনিক সময়ে এসেও নারীর দেহ যখন রাজনীতি ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ হয়ে ওঠে, হাতিয়ার সাব্যস্ত হয়, একজন মেয়েকে ধরে নেওয়া হয় একদিন সে মা হবে ঘরদোর সামলাবে সংসার সাজাবে— বুঝতে অসুবিধা হয় না, মানুষ যতই সভ্য হোক, এই প্রবণতা কোনও আদিম রিপু না হয়ে যায় না। প্রশ্ন ওঠে, মেয়েদের শরীর গোপন তবু বিজ্ঞাপিত? লিখছেন সুপ্রিয় মিত্র।
নারী সমাজের ‘সেকেন্ড সিটিজেন’, কারণ, প্রকৃতি এভাবেই তাকে পাঠিয়েছে— এহেন আখ্যান ঐতিহ্যের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। আর তা প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়েছে যতরকমভাবে, তার প্রাচীনতম কারণটি, চুপিচুপি বললে বলতে হয় ছুতো, অবশ্যই শরীর। আদিম মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়া শিখল, বুঝল সংঘ প্রয়োজন, এবং সেই সংঘে যত জনসংখ্যা বাড়বে, তত দীর্ঘ হবে তাদের অস্তিত্বের মেয়াদ। কিন্তু এই দৈর্ঘ্যর প্রয়োজনীয়তা আরও দৈর্ঘ্য-কামনার নেশা হয়ে উঠল যখন, মানবসভ্যতার বীজ বপন হল, একইসঙ্গে বৈষম্যেরও। এর প্যাঁচে সেই থেকেই সম্ভবত নারীকে সেই মেয়াদ বৃদ্ধির ‘যন্ত্র’ ভাবার খেলাটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রথমদিকের ইতিহাস ঘাঁটলে তাও দেখি, এই পরিসর ছিল যে, নারী নিজে বেছে নেবে তার সন্তানের জন্য বিচক্ষণ ও বলিষ্ঠ কোনও পুরুষ। ক্রমশ এই বেছে নেওয়ার উল্টোদিকে শিওরশট নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তুতিপর্বের অদম্য দৌড় কি শুরু হল না পুরুষ বর্গে, সমান তালে? ঠিক যেভাবে ভাল স্কুলে ভর্তি হতে গেলে ভাল মার্কশিট প্রয়োজন। সেই প্রস্তুতির পিআর প্রেশারই কি প্রতিদ্বন্দ্বিতার নৃশংস অন্তর্ঘাতে পৌঁছল? আকার নিল বেঁচে থাকার সংগ্রামের অন্যতর স্রোতে?
এসবের মধ্যে অন্য এক টিপ্পনী হয়ে এল সন্তান প্রসবের প্রক্রিয়া এবং সেই অপত্যর প্রতিপালন। ন’-দশমাসের আগে বাচ্চা জন্মালে আমরা তাকে ‘ইমম্যাচিওর বেবি’ বলে দাগিয়ে দিই বটে। আদতে, মানবসন্তান জন্মায়ই ইমম্যাচিওর হয়ে। তাকে তাই খাওয়ানো শেখাতে হয়, হাঁটা শেখাতে হয়, এমনকী বেঁচে নেওয়াও। পৃথিবীর আলোয় আলোকিত হয়ে অনেকটা সময় জুড়ে স্মৃতিহীন কর্মশালার কারণেই কি মানুষের স্মৃতি কেবলই নিতান্ত মেমোরি চিপ হয়ে থাকল না? হয়ে উঠল স্বয়ংশম্ভু আখ্যানমঞ্জরী— নিজের মতো মনে পড়াল, গিলে নিল, ধরে রাখল, ভুলে গেল আর বানিয়ে ফেলল অন্যতর ঘটনার ধারক এবং সর্বোপরি কল্পনা করল? আপাতত এসব বাদ দিয়ে সেই সন্তানের বেড়ে ওঠার দিকে আমরা তাকালেই দেখব, গুহার ভিতর সেই পোয়াতি আদিম মানবী দিন গুনছে প্রসবের, তাকে খাবার জোটাচ্ছে, সুরক্ষা দিচ্ছে পুরুষ (পরবর্তী কালে যারা ‘প্রোভাইডার’, ‘সেভিয়র’ শিরোপা নিয়ে ইগো ধুয়ে জল খাবে), তার খেয়াল রাখছে গোষ্ঠীর বাকি নারী।
নারী প্রকৃতিগতভাবেই বংশবৃদ্ধির বাহক, কিন্তু যেদিন থেকে তার বাকি সম্ভাবনার কোতল করা হল কেবল এটুকু কর্তব্যে সীমাবদ্ধ রেখেই, সেই দিনটিই নিঃসন্দেহে অবদমনের সূত্রপাত। সেই নারী হয়তো ভেবেছিল গোষ্ঠীর মঙ্গলের কথাই। কিন্তু, এই সুযোগে পুরুষগুচ্ছ যে যার যোগ্যতা প্রদর্শনের মত্ততায় ‘বাইরে আয়, দেখাচ্ছি মজা’ বলে ডেকে নিল গুহার উন্মুক্ত প্রান্তে এবং তার ‘লক্ষ্যবস্তু’ হয়ে উঠল নারী। আর লেগে পড়ল খাদ্য আহরণের আস্ফালনে, দেহপ্রতাপের বীর্যে, চেগে উঠল নিরাপত্তা প্রদানের ব্যথাহীন প্রকাশমহিমায়।
আজকের আধুনিক সময়ে এসেও নারীর দেহ যখন রাজনীতি ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ হয়ে ওঠে, হাতিয়ার সাব্যস্ত হয়, একজন মেয়েকে ধরে নেওয়া হয় একদিন সে মা হবে ঘরদোর সামলাবে সংসার সাজাবে— বুঝতে অসুবিধা হয় না, মানুষ যতই সভ্য হোক, এই প্রবণতা কোনও আদিম রিপু না হয়ে যায় না। অতঃপর দ্বিতীয় দ্বিধা ঘাই মারে, এই প্রবণতাকে কেবলই প্রাকৃতিক প্রকরণের ঘাড়ে বন্দুক রেখে চালানো যাবে? একইসঙ্গে সমানভাবে কিংবা বহুলাংশে অত্যধিক সংস্কৃতি নেই? একজন কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তানের প্রতিপালন কি সাংস্কৃতিকভাবে এক? তাকে দুর্বল ঠাওরানো, তাকে কাজ, দায়িত্ব দেওয়ার ধরন, তার ইচ্ছের ফুলকিতে সুবিধে ও অস্বস্তি অনুযায়ী অভিভাবকের ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেওয়ার তামাম আঠা যা তাকে হুটহাট খালি গা হতে বাধা দেয়, লাফাতে-ঝাঁপাতে আটকায়, রোদে পুড়ে খেলতে মানা করে, সন্ধের আগে ঘরে ফেরার শাসানি শোনায়, বাড়ি থেকে খুব দূরে যতই ভাল কোচিং হোক সেখানে যেতে দেয় না— এই সমস্ত প্রকোপ তার মনের ওপর ইট-পাথর হয়ে চেপে বসে। আর সেই হলুদ ঘাসে আয়োজনমতো জল-হাওয়া দেওয়ার পর যখন তাকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে দেখা গেল, কিংবা পুষ্পশোকে মূর্ছা যেতে, অমনি প্রাচীন রেকর্ড বেজে ওঠে, ‘এই জন্য মেয়েদের দ্বারা কিস্যু হয় না।’
:আরও শুনুন:
রান্না মেয়েলি কাজ! এই ধারণাটাই ভুল
আর এসবের সঙ্গেই অগোচরে, অদৃশ্য রাঙা চোখে তার যৌনতার বোধকে অবদমিত রাখার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। একটা শৈশবকালীন কৌতূহল ও পরবর্তীকালের দৃষ্টান্ত সহজ একখানা উদাহরণ হয়ে ধরা দিতে পারে। হালে মাসিক চক্র ও তদ্জনিত মেজাজের ওঠানামা বা মুডসুইং নিয়ে আলোচনা বেড়েছে, কিন্তু সতত মাসিক চক্রের সঙ্গে জড়িত মেনস্ট্রুয়াল প্যাড, ট্যাম্পন বা কাপ নিয়ে বিজ্ঞাপনের জড়তা এখনও কাটেনি। দোকানে গেলে, এখনও কালো প্লাস্টিকে মুড়ে দেওয়া তো দ্বাপর যুগ থেকে চলছে মনে হয়। এর ঠিক পাশাপাশি, বুক চিতিয়ে বিজ্ঞাপন চলে নিরোধ, লিউব ও পুরুষের ধাতু দৌর্বল্য, যৌন বলবর্ধক ওষুধের। যেন এসবের সঙ্গে ডাক্তারি পরামর্শের প্রয়োজনীয়তাই নেই। আর ঠিক উল্টোদিকে, নারীর যৌনতার বলবর্ধন নিয়ে এই হাঁকডাক পেয়েছেন কোনও? তার স্তনের আকার আয়তন নিয়ে মাঝেমধ্যে সাহসী বিজ্ঞাপন দেখা গিয়েছে বটে, কিন্তু তা কি তার স্বাস্থ্যর সঙ্গে জড়িত?
এখানেই স্পষ্ট হয়ে যায়, নারীর যৌনতার অবদমনের দিক। তাকে কতখানি খোলা আকাশ দেওয়া হবে, দেওয়া হলেও মাঝে জানলা বেঁধে দেওয়া হবে কি না— এই সমস্তটা সে নিজে নয়, তার পারিপার্শ্ব নির্ধারিত করতে শুরু করে। পিতৃতান্ত্রিক মডেলের ন্যায্যতাখচিত দাঁড়িপাল্লায় মাপজোক চলতে থাকে। নারীর যৌনতা তার পোয়াতি হওয়া অবধি, এই সুপ্ত ধারণাই এখনও সমাজের সিংহভাগ পোষণ করে। সেই কারণেই, প্রকৃতিগতভাবে নারী ‘মাতৃস্বরূপা’— এই খেলাই মেতে ওঠে। সমস্যাটা মাতৃজ্ঞানে দেখা নয়। সমস্যাটা, একে প্রকৃতিগত ভেবে নেওয়ার বিষয়ে। মা হওয়া মাত্রই সে খালাস হয় না। তারপর ছানার দেখাশোনা, বাড়ির কাজ, খাবারদাবারের দেখভাল, এমনকী তাকে একটা বয়স অবধি পড়ানো, সমাজের যোগ্য করে তোলার হরেক কিসিমের দায়-দায়িত্ব একের পর এক চাপানো হতে থাকে। মধ্যে মধ্যে স্বামীকে বিবিধভাবে, খাইয়ে যৌনতা দিয়ে খুশি করার আবদারও। এই কর্তব্যচিন্তা সাংস্কৃতিক নয়?
মাতৃ খোলস থেকে আলগা করে সেই নারীকে আর দেখাই হয় না, দেখতে দেওয়াও হয় না, কারণ তার যৌনতাকে মা হওয়ার আগে চাপাচুপি দিয়ে রাখা হয়েছিল, মা হওয়ার পর তা অ্যাম্বিলিকাল কর্ডের সঙ্গেই উপড়ে ফেলা হয়। অথচ, হালের ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ ব্যতীত মা হওয়ার পথটি কি যৌন সংসর্গহীন?
নারীকে কেবলমাত্র নারী এবং সর্বোপরি মানুষ হিসেবে দেখতে না পারার ব্যর্থতা, মাঝেমধ্যে মনে হয় এই প্রশ্নে বহু গভীরে পুঁতে দেওয়া আছে। তাকে আর কোনও ভূমিকায় দেখতে না পারার পিতৃতান্ত্রিক অনীহা, তাকে অন্য কিছু হতে না দেওয়ার পুরুষতান্ত্রিক ভ্রূকুটি এবং তাকে তার মতোও থাকতে না দেওয়ার সামাজিক অসূয়ার নেপথ্যে এই একরোখা নজর— একবগ্গা অপচয় ছাড়া কিছুই লাগে না।
কারণ, তার শরীরের পরিচয় এই পিতৃতান্ত্রিক সুব্যবস্থা মূলত যৌনবস্তু রূপে দাগিয়ে রেখেছে। তাই পোশাক, যা কিনা মানুষের ‘সেকেন্ড স্কিন’, সেই বিকল্প চামড়াও হয়ে উঠেছে বিশেষত নারীর ক্ষেত্রে আরেক ইন্দ্রিয়গুণসম্পন্ন যৌনতাবাহী আঙ্গিক। নির্বাচিত পুরুষের সঙ্গে সে মগ্ন হবে, নির্বাচিত দেহকে সে দেবে উত্তেজনার ফোয়ারা— সেই মতো পোশাকও আছে তাই। একজন নারীকে সমাজ দিয়েছে সর্বক্ষেত্রে অবিবাহিতকাল ও বিবাহিতকালের পরিচয়ে ভিন্ন চিহ্নক। এও কি যৌন নিরিখে নয়? নামের সঙ্গে কুমারিত্বের বার্তাবাহী সম্বোধন, ভূষণ ও অলংকারের সঙ্গে বিবাহোত্তর সংকেত— সেসবেরই পরিচায়ক। সে বুক সম্পূর্ণত ঢেকে তার ওপর ওড়না চাপালেও অযাচিত চারপাশের কৌতূহল কিছুমাত্র কমে না, আবার ক্লিভেজ-উন্মুক্ত বসনেও সে পার পায় না। যদি কোনও বড় বাক্স এনে বলে দেওয়া হয়, সেখানে এক নারী আছে, তাহলে সেই বাক্সও পার পাবে না। তাই সে তার গা সম্পূর্ণ ঢেকে দিলেও রাষ্ট্রযন্ত্র আপন চরকায় তেল দিতে ভুলে যায়, মেল গেজ অ্যাডাম্স অ্যাপেলে ঢোক মারে। এমনকী সে স্বল্পবসনা হলেও ত্রাহি ত্রাহি রব ছোটে, পোশাকই শেষমেশ ধর্ষণের জন্য দায়ী হয়ে যায়।
ঘটনাচক্রে, এই সমস্তই পিতৃতন্ত্রের দান, প্রদান, হুকুম। কথাপ্রসঙ্গেই, ধর্ষণের যুদ্ধের হাতিয়ার হয়ে ওঠা, নিছক বংশবৃদ্ধির কামনাতেই নারীদেহকে ‘অর্জন’ কিংবা যোগ্যতা বা ক্ষমতার বিনিময়ে ‘জয় করা’-র আয়োজন, প্রতিপক্ষের নারীকুলকে ধর্ষণ দলন করে প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করার ইতিহাস মনে করলে, আন্দাজ করা যায়, নির্দিষ্ট পরিসরে এ সমস্তর প্রতিরোধী ও বিরোধী গোষ্ঠী অবশ্যই থাকবে। যাদের কিয়দংশ নিজেদের ব্যর্থতা, অক্ষমতা ঢাকতে নিরাপত্তার দায়িত্ব আত্মরক্ষার আকারে ন্যস্ত করবে সেই নারীর ওপরেই।
একজন নারীকে সুরক্ষিত থাকতে গেলে কী করতে হবে? সমাজ শিক্ষিত হোক না হোক, রাষ্ট্র সচেতন হোক না হোক, রাস্তায় রাস্তায় নজরদারি থাকুক বা না থাকুক, সেই নারী তার আত্মরক্ষার স্বার্থে মার্শাল আর্ট শিখবে, যে কোনও স্পর্শের প্রতি সন্দেহচক্ষু ও জিজ্ঞাসু হবে। এই বিষয়গুলি নারীকে সচেতন ও এমপাওয়ার্ড করতে সহায়ক শোনালেও, এসব ততটাই ঠুনকো লাগে, যেমনটা কুনজর থেকে বাঁচতে পোশাক নির্বাচনে সচেতনতার মতো। এসব আছে বলেই, বাড়ির মেয়ের শ্লীলতাহানিতে পরিবারের সম্মান ছাই হওয়ার আখ্যান ঢুকে আছে। প্রেমের স্বচ্ছন্দে নিজের পছন্দমতো পুরুষকে বেছে নিয়ে কনজুগাল জীবনে এগনোর তাবৎ দুঃসাহসে পরিবারের নিরুপায় অনার কিলিং আছে। যে অভিভাবক গোষ্ঠী তাদের কন্যা-অপত্য কী পরবে, কেমনভাবে হাসবে, কী খাবে, কতটা খাবে, কী পড়বে, কতদূর পড়বে, কেমন সিনেমা দেখবে, কোন বিষয়ে সবার সামনে আলোচনা করবে না, যে বিষয়েই হোক না কেন চুপচাপ মাথা নেড়ে শুনবে— সব ঠিক করে দিয়েছে; সেখানে তার যৌনতার পরিসরে নিজের পছন্দের পরিপূরক মনবাঁধা দেহ বেছে নেওয়ায় মান-সম্মান লুটোবে না?
এই সমাজই সেই আইনপদ্ধতির ধারক নয় কি, যেখানে ধর্ষণের অভিযোগ গৃহীত হয় মেয়েটি বিবাহিত কি না, মেয়েটির পোশাক কেমন ছিল, মেয়েটির আদবকায়দা কেমন— এসব প্রশ্নের নিরীহ উত্তরে। উত্তর উচ্ছল হলে, প্রশ্ন আরও বাড়ে— মেয়েটা কীভাবে তাকাচ্ছিল? খুব হাসছিল? খুব উড়ছিল? মাঝরাতে বাড়ি ফিরছিল? কাঁধে মাথা রেখেছিল একটা ছোকরা ছেলের, প্রেম ফাঁপাচ্ছিল খুব? সিগারেট টানছিল?
অবশ্যম্ভাবী, নারীর তার নারীত্বের কারণে বিবিধ নিষেধে-শর্তে-বাধ্যতায় নারীদেহ যেভাবে পিতৃতান্ত্রিক রাজনীতিকরণ, পণ্যায়ন, সামাজিক প্রস্তাবনা, সম্মানসূচক ইস্তেহারের অংশ হয়ে ওঠে; কিন্তু সে নিজে কখনও সেই সমাজ, রাজনীতির প্রাঙ্গণে সক্রিয় স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে পারে, এমনকী সমাজের ক্ষুদ্রতম ইউনিট, পরিবারের মধ্যেও কোনওরকম সিদ্ধান্তগ্রহণে তার মতামত গৌন হয়ে যায়। আর ঠিক এই কারণেই পছন্দমতো মানা-না মানার খেলায় মেতে সেসব নিয়ম-নৈতিকতাকে পিতৃতান্ত্রিক বিরোধিতার ‘টুল’ হিসেবে গড়ে তোলে সে। বোরখা যতটা অবদমনের প্রতীক, ততটাই পিতৃতান্ত্রিক বিরোধিতার হাতিয়ার হয়ে ওঠে। বড় চুল যতটা তার বাধ্যবাধকতায় সৌন্দর্যের উপমা ঘন করে, ততটাই তা রাস্তায় সর্বসমক্ষে কেটে ফেলার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলে। সিঁদুর-শাঁখা পরা পুলিশ হয়ে ওঠেন বিবাহিত নারীর ক্ষমতায়িত সংস্করণ। ‘ফ্রি দ্য নিপল’ স্লোগানে বুকবন্ধহীন পোশাক পরিধানে ভিত নড়িয়ে দেয় সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির।
প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে যৌনতা প্রকাশের আড় ভাঙতে থাকে এভাবেই। ভবিষ্যতে আরও পরিষ্কার হবে, আরও নতুন করে এর বিশ্লেষণ, বিস্ফোরণ হবে— সেদিকেই আমাদের চেয়ে থাকা হোক।
আর চিন্তা হোক— রাষ্ট্র, সমাজ, প্রশাসন, আইন, সর্বোপরি মানুষ, তার ঔচিত্যবোধের জোরে নারীর যৌনতা, যৌনতা প্রকাশ, যৌনতাহীন শরীরী প্রকাশ নিয়ে একমাত্র তাকেই ভাবতে দিয়ে নিজের চরকায় তেল দিতে শিখবে কীভাবে?