শুধু সময় দেখানো নয়। শরীরের হাল হকিকত অনায়াসে জানিয়ে দেয় ‘স্মার্ট ওয়াচ’। বিগত কয়েক বছরে নতুন প্রজন্মের ভরসা এবং পছন্দ দুই-ই হয়ে উঠেছে এই যন্ত্র। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে এই যন্ত্রের মাধ্যমেই ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকছে। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একদিকে স্টাইল স্টেটমেন্ট। অন্যদিকে শরীর সুস্থ রাখার ঠিকানা। এভাবেই বাজারে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে ‘স্মার্ট-ওয়াচ’। হার্টরেট কিংবা স্টেপকাউন্ট মাপতে অনেকেই চোখ বুঝে ভরসা করেন এই যন্ত্রকে। কিন্তু সত্যিই কী সব ‘ভালো’? সাম্প্রতিক গবেষণা কিন্তু তেমনটা বলছে না।
আরও শুনুন: সন্তানে অনীহা, পোষ্যেই অপত্যসুখের বিকল্প! বাড়ছে ‘DINK’ দম্পতির সংখ্যা
একসময় হাতঘড়িতে সময় ছাড়া আর কিছুই দেখা যেত না। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির হার ধরে বদলেছে ঘড়ির চেহারা। ঘণ্টা-মিনিটের কাঁটা সরে এসেছে ডিজিটাল হরফ। সেখানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারিখ কিংবা আবহাওয়ার হদিশও মিলত। বর্তমানে সেই ঘড়ি হয়েছে আরও ‘স্মার্ট’। সময়, তারিখ, আবহাওয়া তো বটেই, এই ঘড়ি অনায়াসে শরীরের ভিতরে কী চলছে সেই খোঁজও দিতে পারে। মোবাইলের সঙ্গে জুড়ে দিলে কথাই নেই। ফোন করা থেকে আরম্ভ করে যাবতীয় সব কিছুই অনায়াসে করে ফেলবে স্মার্টঘড়ি। শরীরে কোনও অসুখ বাসা বেঁধেছে কিনা সেই হদিশ জানিয়ে দেবে। সবক্ষেত্রে হয়তো নির্ভুল নয়। কিন্তু তাতে কি! কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই আগেভাগে অসুখের হদিশ পেয়ে গেলে আর কি চাই! শুধু তাই নয়, সেই অসুখ সারাতে কী কী করতে হবে সেই হিসাবও মেপে দেবে স্মার্ট ঘড়ি। একেবারে নিয়ম করে মনে করিয়ে দেবে কতক্ষণ হাঁটতে হবে, জল খাওয়ার সময় কখন, কিংবা ঘুমের সময় কম হচ্ছে কিনা। এতকিছু সুবিধা কবজিতে থাকা ওই ছোট্ট যন্ত্রে। অনায়াসে তরুণ প্রজন্মের অন্যতম পছন্দ হয়ে উঠেছে এই ‘ঘড়ি’। বড়রাও কম যান না। শরীরের কথা ভেবে বয়স্করাও অনেকেই স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার ওরা আরম্ভ করেছেন। কিন্তু এখানেই গুরুতর সমস্যা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাও একটামাত্র দিক দিয়ে নয়। স্মার্ট-ওয়াচকে সরাসরি ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত না করলেও এর উপকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
আরও শুনুন: মুকুলের মতোই জাতিস্মর! নিজেই নিজের খুনিকে চিনিয়েছিল যোগীরাজ্যের খুদে
প্রথমেই, শরীরের প্রসঙ্গে আসা যাক। যতই সুবিধা থাকুক, স্মার্ট ওয়াচকে এখনও চিকিৎসার কাজে প্রয়োজন এমন যন্ত্রের তকমা দেওয়া হয়নি। বলাই বাহুল্য, কোনও চিকিৎসকও শরীর সুস্থ রাখতে এই যন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দেবেন না। প্রথমদিকে স্রেফ স্টাইলের কথা ভেবেই এই অত্যাধুনিক ঘড়ি বাজারে আনা হয়। ধীরে ধীরে তার মধ্যে নানা পরিবর্তন এসেছে। যার দরুণ যোগ হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয়। এবার শরীর কতটা সুস্থ রয়েছে, তা জানতে কে না চায়! সেই হিসেবে চাহিদা মেনে স্মার্ট ওয়াচ হয়ে উঠেছে আরও স্মার্ট। কিন্তু কোথাও গিয়ে এর উপর নির্ভর হয়ে পড়লে বিপদের আশঙ্কাই দেখছে ওয়াকিবহাল মহল। অর্থাৎ কেউ যদি ধরেই নেন, হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন চিরতরে মিটিয়ে দেবে স্মার্ট ওয়াচ, তাহলে নিজের জন্য ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না। এছাড়া সন্তানসম্ভবা মহিলাদের শরীরের যাবতীয় খোঁজও রাখে স্মার্ট ওয়াচ। স্বাভাবিক ভাবেই নবাগতের জন্মের সময় তারিখও স্মার্ট ওয়াচের জিম্মায়। এর থেকেই নয়া বিপদের আশঙ্কা করছেন টেক গবেষকরা। মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ হ্যাক হলে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয়। একটু অসাবধান হলেই রাতারাতি ফাঁকা হতে পারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সেই একইরকম হ্যাকিং-এর ভয় থাকছে স্মার্ট ওয়াচের ক্ষেত্রেও। শুধু তাই নয়, এই যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কার শরীরে কোন অসুখ বাসা বাঁধছে কিংবা কার রোজকার রুটিন কেমন, সেসব অনায়াসে জানতে পারছে স্মার্ট ওয়াচ। এবং সেই তথ্য বাইরে এলেই হতে পারে নানা সমস্যা। ইতিমধ্যেই স্মার্ট ওয়াচের ব্যবহারের বাড় বাড়ন্ত নিয়ে নানা গবেষণা শুরু হয়েছে মার্কিন মুলুকে। সেখানেই উঠে এসেছে এই যন্ত্র আদতে কতটা উপকারী, সেই হিসাব।