উর্দু ভাষায় রামায়ণ অনূদিত হয়েছে? ইতিহাস বলছে, দিব্যি হয়েছে। এমনকী আজও থিয়েটার হিসাবে তা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শুনতে যত অদ্ভুতই লাগুক না কেন, রামের মহিমা গুণকীর্তনে কিন্তু উর্দু কবিরা কোনওদিনই পিছপা ছিলেন না। আসুন শুনে নেওয়া যাক সেই ঐতিহ্যের কথা।
উর্দু রামায়ণ! এখনকার সামাজিক এবং রাজনৈতিক আবহে দাঁড়িয়ে শুনতে যেন তা অক্সিমোরনের মতোই লাগে। অর্থাৎ প্রায় দুই বিপরীতার্থক শব্দ পাশাপাশি বসে আছে। তবে, বাস্তব কিন্তু বলে অন্য কথাই। রামায়ণের যে মহাকাব্যিক বিস্তার তা প্রকাশিত হয়েছে প্রায় সব ভাষাতেই। উর্দুও সেখানে ব্যতিক্রম নয়।
আরও শুনুন: রামচরিত: যুদ্ধের দিনে প্রেম… কম্বনের রামায়ণ যেন ব্যক্তিগত ঈশ্বরীতলার রূপকথা
অথচ হিন্দি ভাষায় রামায়ণ চর্চার প্রসঙ্গ আমাদের জানা। ঘটনা হল, উর্দু আর হিন্দি- এই দুই ভাষার গায়ে লেগে গিয়েছে দুই ধর্মের রং। ইতিহাসচর্চাকারীরা বলেন, এই বিভাজনও ইংরেজদেরই দান। ঠিক কোন সময় থেকে যে এই ভাগাভাগি শুরু হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। অথচ হিন্দি যেন হিন্দুদের ভাষা এবং উর্দু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ভাষা হয়ে গিয়েছে। তবে, রামায়ণের মতো মহাকাব্য যে দেশের জনমানসে মিশে আছে, তা কি প্রভাবিত করেনি উর্দু কবিদের? নিশ্চয়ই করেছে। এবং উর্দু ভাষায় রামায়ণ লেখাও হয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, কোরান অনুবাদের অনেক আগেই রামায়ণ অনূদিত হয়েছে উর্দুতে। এবং সেই অনুবাদের সংখ্যাও অনেক বেশি। অর্থাৎ বহু কবি নিজেদের মতো করে উর্দু ভাষায় রচনা করেছেন রামভাষ্য। সাধারণত শায়েরদের নামেই সেই সব রামায়ণ প্রচলিত ছিল। এখনও আছে। রাজনৈতিক কারণে ভাষা ও ধর্মকে একসূত্রে জুড়ে ফেলার দরুন রামায়ণের এই ভাষ্য অনেকটাই পিছনে চলে গিয়েছে। উপমহাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি ভাষার কবিরাই রামায়ণকে নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই, উর্দু ভাষার কবিরাও রামায়ণে যে মূল্কথা, তা কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। রামায়ণের পারসি অনুবাদের কথাও আমাদের জানা।
আরও শুনুন: রামচরিত: কৃত্তিবাসের হাত ধরে যেভাবে ‘বাঙালি’ হলেন বাল্মীকির রাম
উর্দু রামায়ণ কিন্তু কেবলমাত্র লেখাতেই সিমাবদ্ধ নয়। তা পারফর্মও করা হয়, অর্থাৎ থিয়েটার হিসাবেও প্রদর্শিত হয় উর্দু রামায়ণ। সম্প্রতি ফরিদাবাদের একটি নাট্যদল দিল্লিতে উর্দু রামায়ণ পারফর্ম করেছে। চার দিনের উর্দু ফেস্টিভ্যালের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই আয়োজন। এই আয়োজন অবশ্য নতুন নয়, সংখ্যায় কমে এলেও উর্দুতে রামলীলা এখনও কেউ কেউ প্রদর্শন করে থাকেন। যা মূলত জানান দেয় যে, রাজনীতির ভিত্তিতেই হিন্দি ও উর্দু দুই ভাষাকে আলাদা করে দেখার রীতি শুরু হয়েছে। নইলে দেশের মহাকাব্যের বিস্তার কিন্তু দুই ভাষাকেই একই ভাবে স্পর্শ করেছে। দেশের গঙ্গা-যমুনা তেহজিব সংস্কৃতিরই পরিচয় দেয় উর্দু রামায়ণ। এ বছর জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে স্বীকৃতি জানানো হয়েছে উর্দু ভাষাকে। এই ভাষায় সাহিত্যচর্চার জন্যই সম্মান জানানো হয়েছে গুলজারকে। আশা করা যায়, এই আবহে উর্দু ভাষায় রামায়ণচর্চাও আরও আলো পাবে।