ঘণ্টা, মিনিট কিংবা সেকেন্ড নয়। সময়ের হিসাব হবে বৈদিক নিয়মে। সম্প্রতি এমনই এক ঘড়ির উদ্বোধন হতে চলেছে মধ্যপ্রদেশে। যেখানে সময়ের একক হিসেবে ঘণ্টা মিনিট বা সেকেন্ডের উল্লেখ থাকবে না। তাহলে, কী থাকবে ওই ঘড়িতে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভর দুপুরে বাড়ি ফিরছেন। রাস্তায় কাউকে সময় জানতে চাইলেন। উত্তরে কিছু অদ্ভুত শব্দ কানে এল। যেখানে কত ঘণ্টা কত মিনিট সেসব কিছুই নেই। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এমন অভিজ্ঞতা হতেই পারে মধ্য প্রদেশে বেড়াতে গেলে। কারণ সেখানে বসছে এমন এক ঘড়ি যাতে সময়ের একক ঘণ্টা, মিনিট কিংবা সেকেন্ড নয়।
আরও শুনুন: প্যারাশুট নিয়ে সরযূতে ঝাঁপ, আকাশপথে রাম মন্দির পরিক্রমা সারলেন পদ্মশ্রী-জয়ী মহিলা
আজকের দিনে আমরা ঘড়ি বলতে যা বুঝি, প্রাচীন ভারতে মোটেও তার প্রচলন ছিল না। অনেকেই সূর্যের অবস্থান দেখে ঠিক করতেন কটা বাজে। এর থেকেও খানিকটা পিছিয়ে বৈদিক যুগে পৌঁছলে দেখা যাবে, সময়ের একক হিসেবেও ঘণ্টা, মিনিট বা সেকেন্ডের উল্লেখ নেই। বরং সেই জায়গায় উল্লেখ রয়েছে মুহূর্ত, কাল এবং কাষ্ঠ এই ধরনের শব্দ। সময়ের হিসাবেও রয়েছে বেশ বদল। আর এককের নাম আলাদা। এই ঘড়িতে ঘণ্টার বদলে থাকবে মুহূর্ত, মিনিটের ক্ষেত্রে কাল এবং সেকেন্ড বদলে হবে কাষ্ঠ। মধ্য প্রদেশ সরকারের উদ্যোগে প্রায় ৮৫ ফিট উচ্চতার এই ঘড়ি বসানো হবে। যা আগামী দিনে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে এই ঘড়ি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। যা মার্চের শুরুতেই উজ্জ্বয়িনীর ৩০০ বছরের পুরনো মানমন্দিরে বসানো হবে। ঘড়িটি তৈরি করেছেন আরোহ শ্রীবাস্তব। যিনি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র। দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ২০১৭ সালে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের অনুপ্রেরণায় এই ঘড়ি তৈরি কাজ শুরু করেন শ্রীবাস্তব। যা এতদিনে সম্পুর্ণ হয়েছে। আসলে এই ঘড়িতে সময়ের প্রচলিত হিসেবে তা বদল আনা হচ্ছে, তা ঠিকমতো তৈরি করাই ছিল চ্যালেঞ্জের। এখন প্রশ্ন হল ঠিক কেমন পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়ের হিসেবে?
আরও শুনুন: মন্দির মিস্ট্রি! ভরদুপুরেও ছায়া পড়ে না, বাতাসে ভাসছে পিলার…রহস্যে ঘেরা ভারতের মন্দির
সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন খোদ ঘড়ির নির্মাতাই। ঘড়িটি বৈদিক হলেও এতে সময় দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনেই। আর সময়ের হিসাব হবে সূর্যোদয় অনুযায়ী। এক্ষেত্রে দিনের হিসাব ২৪ ঘন্টার বদলে ৩০ ঘণ্টা বলা যেতে পারে। শ্রীবাস্তবের কথায়, এই ঘড়িতে প্রথমদিনের সূর্যোদয় থেকে পরেরদিনের সূর্যোদয় অবধি সময়কে ৩০ টি ভাগে ভাগ করা হবে। সেই প্রতিটি ভাগ এক একটা মুহূর্ত। প্রতি মুহূর্তের ৩০ টি ভাগ, যাকে বৈদিক নিয়মে কাল বলা হবে। তারও রয়েছে ৩০ ভাগ। যার নাম কাষ্ঠ। সেই হিসাবে ঘণ্টা, মিনিট এবং সেকেন্ডের মতোই সময়ের মাপজোক চলবে। শুধু সময়ের হিসাব বদলে যাবে অনেকটাই। সাধারণ ঘড়ির সঙ্গে কোনওভাবেই এই ঘড়ির সময় মিলবে না। তবে এই ঘড়ি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাবে সূর্যোদয়ের সঠিক মুহূর্ত। কারণ সূর্যোদয়ের সময়ই ঘড়িতে দুটি শূণ্য দেখাবে। সেইমতো আবার পরেরদিন শূণ্য আসা অবধি একটা গোটা দিন। সুতরাং এ জিনিস যে একেবারেই নতুন তা বলাই বাহুল্য।