রামায়ণ পাঠ করতেন সম্রাট আকবরের মা হামিদা বানো। তাঁর নিজে হাতে লেখা সেই রামায়ণ এখনও সংরক্ষিত রয়েছে। সেই রামায়ণের বিশেষত্ব কী ছিল জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সাধু সন্ত তো বটেই, নিয়মিত রামায়ণ পাঠের অভ্যাস কিছু গৃহস্থ বাড়িতেও রয়েছে। ধর্মের ভেদ ভুলে, অহিন্দুরা রামায়ণ পাঠ করছেন এমন নিদর্শনও মেলে। আর এমনটা হালে হয়নি। মুঘল আমল থেকে মুসলিমদের রামায়ণ পাঠের হদিশ মেলে। তালিকায় সবার উপরে রয়েছে খোদ মুঘল সম্রাট আকবরের মা হামিদা বানোর নাম। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সম্রাট আকবরের মা হামিদা বানো-ও নিয়মিত রামায়ণ পড়তেন।
:আরও শুনুন:
রামচরিত: যুদ্ধের দিনে প্রেম… কম্বনের রামায়ণ যেন ব্যক্তিগত ঈশ্বরীতলার রূপকথা
একসময় এই দেশে মিলত এমন এক মুদ্রা, যাতে খোদাই করা থাকত রাম-সীতার মূর্তি। শোনা যায়, মুঘল আমলেই চালু হয়েছিল হিন্দু অবতারের ছবি দেওয়া এই মুদ্রা। সুতরাং মুঘল আমলে রামায়ণ চর্চার নিদর্শণ থাকবে এ কথা বলাই বাহুল্য। খোদ সম্রাট আকবরের সঙ্গেও রামায়ণের একাধিক যোগ মেলে। শোনা যায়, তিনি দায়িত্ব নিয়ে রামায়ণের অনুবাদ করিয়েছিলেন পারসি ভাষায়। আর সেই অনুবাদ পাঠ করতেন সম্রাটের মা হামিদা বানো। শুধু পাঠ করাই নয়, হামিদা নিজে হাতে লিখেওছিলেন বাল্মীকি রামায়ণের পারসি অনুবাদ। তারপর তা বাঁধাই করা হয়েছিল রাজকীয় ভাবে। বইটি দীর্ঘদিন যেন একইরকম থাকে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বলাই বাহুল্য, এত বছর পরেও সেই বই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে দোহার মিউজিয়ামে। শুধু লেখা নয়, হামিদা-র ওই বইয়ে ছিল ছবিও। মোট ৪৫০ পাতার এই বিশেষ বইয়ে লেখার পাশাপাশি রয়েছে ৫৬টি অলংকরণ। কথিত আছে, লাহোরের একদল শিল্পী এই অলংকরণের কাজ করেছিলেন। এমনিতে বাল্মীকি রামায়ণের একাধিক অনুবাদ হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাষার তফাৎ যেমন রয়েছে, মূল অংশেরও পরিবর্তন করা হয়েছে কিছু কিছু অনুবাদে। আকবরের আমলে তৈরি রামায়ণের পারসি অনুবাদে সেই অর্থে পরিবর্তন হয়নি বলেই জানা যায়। বরং এখানে বেশ কিছু সংস্কৃত শব্দও ছিল।
:আরও শুনুন:
রামচরিত: বাংলার আছে নিজস্ব ‘অযোধ্যা’, এখনও বইছে ক্ষীণস্রোতা ‘সরযূ’
তবে প্রথম থেকেই যে এই বই দোহার মিউজিয়ামে রয়েছে তা নয়। ১৬০০ সাল থেকে প্রায় ৪০০ বছর এই বই বিভিন্ন হাত ঘুরেছে। কোথাও কোথাও যারপরনায় অবহেলাতেও পরে থেকেছে। যার দরুন বইটির একেবারে সামনের পাতার কিছু অংশ নষ্ট হয়েছে। মূল বইটি এখনও প্রায় ঠিকঠাক রয়েছে। ২০০০ সালে কাতার সরকারের হাতে এই রামায়ণ পৌঁছয়। তাঁরাই যত্ন নিয়ে এই বই মিউজিয়ামে রাখার ব্যবস্থা করে। এখনও বইটি দোহার ওই স্থানে রয়েছে। যা তৎকালীন ভারতের সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার পরিচয় দেয়।