সামান্য একটা বেলপাতা। আর গঙ্গাজলে স্নান। এতেই তুষ্ট ভোলা মহেশ্বর। প্রতিদিনই তাঁর পুজো করা যায়। তবে শিবরাত্রির দিনে পুজো করলে মেলে বিশেষ ফল। চলতি বছরে শিবরাত্রির দিনক্ষণ কবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী। পুরাণমতে এই তিথি দেবাদিদেব মহেশ্বরের অত্যন্ত প্রিয়। নিষ্ঠাভরে মহেশ্বরের পুজো করলে সারা বছর ভালো কাটে ব্রতীর। অনেকে বিভিন্ন মনস্কামনা নিয়েও এই ব্রত করে থাকেন। কথিত আছে, সেই সবই পূরণ হয়ে মহাদেবের আশীর্বাদে। চলতি বছরে এই শিবরাত্রি পড়েছে ১৮ ফাল্গুন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসেবে মার্চের ৮ তারিখ।
আরও শুনুন: কোল আলো করে আছে ছোট্ট শিশু, অন্য রূপেও পূজিতা মা কালী
গ্রামবাংলার অধিকাংশ ব্রতের নেপথ্যেই দুটি ধারণা প্রচলিত থাকে। একটি অবশ্যই লৌকিক উপাখান। আর অন্যটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা। শিবরাত্রির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। শিবকে বরাবরই আদি গুরু হিসেবেই অর্চনা করতেন মুনি ঋষিরা। সেই অর্থে সাধারণ মানুষের শিবপুজোর তেমন চল ছিল না এককালে। সেখান থেকে শিবরাত্রি ব্রতের উদ্ভব। কথিত আছে, এই ব্রতের কথা স্বয়ং দেবাদিদেবই জানিয়েছিলেন। পুরাণেও ব্রতের উপাখ্যানের সঙ্গে উঠে আসে শিব-পার্বতীর একান্ত কথোপকথন।
আরও শুনুন: একটি বেলপাতাতেই সন্তুষ্ট মহাদেব, শিবরাত্রি ব্রত করলে মেলে তপস্যার পুণ্য
মহাদেবকে তাঁর পত্নী পার্বতী একবার প্রশ্ন করেন, কোন ব্রত করলে তিনি তুষ্ট হবেন? কারণ তিনি তো ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ সমস্ত কিছুরই ঊর্ধ্বে। তাঁর পুজোর উপকরণই বা কী হতে পারে? দেবী পার্বতীর কথা শুনে শিব বলেন, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। এইদিনে কেউ যদি উপবাস থেকে ভক্তিভরে তাঁর পুজো করে, তাহলে অত্যন্ত খুশি হন মহেশ্বর। উপাচার বলতে কেবলই একটা বেলপাতা আর দেবাদিদেবের প্রিয় ফল বেল। ব্যস, এইটুকু উপাচারেই পরম সন্তুষ্ট হন আশুতোষ। ব্রতের নিয়ম অনুযায়ী, শিব চতুর্দশীর দিন সম্পূর্ণ উপোস থেকে বেলপাতা দিয়ে শিবের পুজো করতে হয়। পরের দিন কোনও ব্রাহ্মণকে ভোজন করিয়ে ব্রত সম্পূর্ণ হয়। বলা হয়, এই প্রীতিকর ব্রত পালন করলে তপস্যা ও যজ্ঞের পুণ্যও লাভ হয়। ব্রতকথাতেও মেলে এক ব্যাধের কাহিনি। যিনি অজান্তেই শিব ব্রতের এই নিয়ম পালন করেছিলেন। তাই তাঁর মৃত্যুর পর ঠাঁই হয় শিবলোকে। যদিও লোককথায় প্রচলিত, যে শিবরাত্রির ব্রত করলে শিবের মতো বর মেলে। তাই অনেক অবিবাহিত মহিলাকেই এই ব্রত করতে দেখা যায়। অনেকে আবার পরিবারের সার্বিক মঙ্গল কামনায় এই ব্রত পালন করেন। দেশের বিভিন্ন শিব মন্দিরেও এইদিন জাঁকজমক থাকে দেখার মতো। নিয়ম অনুযায়ী, সন্ধ্যে থেকে শুরু করে চার প্রহরে পুজো করতে হয়। সারারাত জেগে পরদিন ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে ব্রত সম্পন্ন হয়।