হাঁটতে বেরিয়েছেন। সবে পার্কে ঢুকেছেন। হঠাৎ পায়ে একটা পাথর ঠেকল। হাতে নিয়ে দেখলেন, সাধারণ কোনও পাথর নয়, পায়ে ঠেকেছে আস্ত একটা হিরে। স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারেন আপনি। তার জন্য কোথায় যেতে হবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঠিক যেন চাঁদের পাহাড়ের অলৌকিক গুহা। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বহুমূল্য হিরে। তবে গল্পের নায়ক সেই পাথরের মর্ম বুঝতে না পারলেও, বাস্তবে হিরে চিনবেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর রাস্তায় সেই মূল্যবান পাথর পড়ে আছে দেখলে, যে কেউ হামলে পড়তে পারেন।
আরও শুনুন: ‘রাম আয়েঙ্গে’, ভজন গেয়ে আদায় করলেন প্রধানমন্ত্রীর কুর্নিশ, কে এই গায়িকা?
ভাবছেন তো, রাস্তায় কেন হিরে পড়ে থাকতে যাবে?
ঠিক রাস্তায় নয়, আমেরিকার আরকানসাস অঞ্চলের এক পার্কে গেলেই রাশি রাশি হিরে পড়ে থাকতে দেখা যাবে। প্রত্যেকটার মাপ আলাদা। রং-ও আলাদা। সেই অনুযায়ী দামের ফারাক। অথচ এই পার্কে আশেপাশে কোনও হিরের গয়নার দোকান নেই। থাকলেও এভাবে রাস্তায় হিরের মতো বহুমূল্য পাথর পড়ে থাকতে যাবে কেন! এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই পার্কের অবস্থান জানলেই। আসলে এই পার্কটি দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র হিরের খনির লাগোয়া। বলা যায়। স্রেফ হিরে বললে ভুল হবে, সেখানে আরও অনেক ধরনের বহুমূল্য পাথরের হদিশ মেলে। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য হিরের খনির মতো, এখানে তেমন কড়া সরকারি পাহারা নেই। সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, সামান্য টাকার টিকিট কেটেই দক্ষিণ আমেরিকার এই পার্কে ঢুকতে পারেন যে কেউ। আর একবার ঢুকলেই মনে হবে যেন স্বর্গে পৌঁছে গিয়েছেন। যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তেমনই মনোরম পরিবেশ। তবে এখানকার মূল আকর্ষণ অবশ্যই হিরে।
শোনা যায়, এখানে একটু খুঁজলেই অনায়াসে বহুমূল্য হিরে পাওয়া সম্ভব। কিংবা কপাল সায় দিলে তার থেকেও দামি কোনও পাথর মিলতে পারে। যে যা কুড়িয়ে পাবে, সেটা সে রেখে দিতে পারে। এমনই নিয়ম আরকানসাস পার্কের। সুতরাং যত দামি, পাথরই খুঁজে পান, সেই নিয়ে কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। শুধু তাই নয়, চাইলে কেউ মাটিও খুঁড়তে পারে। এক্ষেত্রে পাথর খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়ে। তবে এক্ষেত্রে একটা মাপ আছে। মানে চাইলেই বড় গর্ত করা যাবে না। তবে সেটুকুও যাতে কাউকে না করতে হয়, সেই জন্য প্রতি মাসে এই পার্ক খোঁড়ার ব্যবস্থা করা হয় কর্তৃপক্ষের তরফেই। অনেকটা চাষ করার আগে লাঙল দিয়ে মাটি খুঁড়ে নেওয়ার মতো। এতেই অনেক সময় বেশ কিছু মূল্যবান পাথর উপরে উঠে আসে। সেইসময় যারা সেখানে থাকেন, তাঁরা সকলেই কিছু না কিছু পকেটে ভরার সুযোগ পান। এভাবেই ১৯২৪ সালে প্রায় ৪১ ক্যারাটের বহুমূল্য হিরে পাওয়া গিয়েছিল এই পার্ক থেকে। যার নাম দেওয়া হয় আঙ্কেল স্যাম। একইভাবে ১৯৬৪ সালে হদিশ মিলেছিল স্টার অফ মারফ্রেসবোরো-র। এও প্রায় ৩৫ ক্যারাটের এক হিরে। ১৯৫৬ সালে পাওয়া গিয়েছিল স্টার অফ আরকানসাস নামে ১৫ ক্যারাটের একটি হিরে। এটি বিখ্যাত ছিল এর বিশেষ রং-এর জন্য। তালিকা এখানেই শেষ নয়। হিরে ছাড়া অন্যান্য বহুমূল্য পাথরও রয়েছে ভুরি ভুরি। কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী প্রতিবছর ১ লাখেরও বেশি পর্যটক ভিড় জমান এই হিরের পার্কে। তাঁদের সকলেই হয়তো পাথর খুঁজে পান না। কিন্তু যাঁদের কপালে হিরে জোটে, তাঁরা নিঃসন্দেহে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকেন এই অদ্ভুত পার্কের প্রতি।