বাঙালির কাছে, শীতকাল যতটা নলেনগুড়ের, ততটাই ক্রিসমাস কেক-এর। বড়দিন উদযাপন কেক ছাড়া ভাবাই যায় না। কিন্তু জানেন কী দেশের মধ্যে প্রথম কোথায় তৈরি হয়েছিল এই ক্রিসমাস কেক? সেই বেকারির আজকের দিনে কী অবস্থা, রেখেছেন সেই খোঁজ? আসুন শুনে নিই।
শীতকাল মানেই উৎসবের মরশুম। বড়দিন আর ইংরেজি নতুন বছর মিলিয়ে ছুটি ছুটি আবহাওয়া। আর সেই ছুটির আমেজ বেশ বোঝা যায় খাবারের প্লেটে। জলখাবারে কেক, তারপর মোয়া, বিকেলে আবার কমলালেবু। রাতের খাবারে নলেনগুড়ের রসোগোল্লা থাকলে সবটা জমে ক্ষীর।
আরও শুনুন: কেক না খেলে যেন বড়দিন বড় হয় না! কীভাবে চালু হল এমন নিয়ম?
এর মধ্যে কমলালেবু আসে মূলত পাহাড় থেকে, মোয়া তৈরি হয় জয়নগরে, কিন্তু কেক? তার জন্য আলাদাভাবে তেমন কোনও জায়গা বাংলার বুকে নেই বললেই চলে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কেক ফ্যাক্টরী থাকলে তার নাম সেই ভাবে সারা দেশে বিখ্যাত নয়। ক্রিসমাস কেক-এর ক্ষেত্রে তো নয়ই। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে এই ছবিটা একদল আলাদা। বিশেষ করে কেরালা। সেখানকার ফ্রুট কেক-এর সুনাম গোটা দেশ জুড়ে। আর ক্রিসমাসের সময় দক্ষিণের এই রাজ্যের কিছু বেকারি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অনেকেই মনে করেন, ভারতে প্রথম ক্রিসমাস কেক তৈরিও হয় এই কেরালাতেই। সেখানকার বিখ্যাত রয়্যাল বেকারির কেক খেতে আসতেন সাহেবরাও। বলা ভালো, নিজেদের তৈরি কেক ছেড়ে এই দেশি কেক বেশি পছন্দ করতেন তারা। আর এই সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছেন মাম্বাল্লি বাপু।
আরও শুনুন: ক্রিসমাস ইভের রাতেই যেন জন্ম রামকৃষ্ণ সংঘের, মঠের অন্দরে সাদরে হয় ‘যিশু পুজো’
কথা বলছি, কেরালার এক ব্যবসায়ী সম্পর্কে। সময়টা ১৮৮০-র আশেপাশে তখন ভারতে রীতিমতো বিদেশি সাহেবদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সেই সময় বাপু, বার্মা থেকে দুধ, চা আর পাউরুটি আনিয়ে ব্রিটিসদের বিক্রি করতেন। দীর্ঘদিন এই ব্যবসাই করেছেন তিনি। ব্যবসার সুবাদে বহুবার বার্মা যেতেও হত তাঁকে। আর সেখান থেকেই বেকিং-এর আদব কায়দা শিখে ফেলেন বাপু। তবে কেক বেকিং নয়, তিনি শিখেছিলেন হরেক রকম বিস্কুট বানানোর কায়দা। একসময় নিজের শহর থালাসসেরিতে একটা বেকারি দোকানও খুলে ফেলেন বাপু। নামদেন মাম্বাল্ল্যি রয়্যাল বিস্কুট ফ্যাক্টারি। বলাই বাহুল্য, সেই সময় ওমন বিস্কুটের দোকানে আর কোথাও ছিল না। তাই সহজেই বেশ নাম করে ফেলে রয়্যাল বিস্কুট। দেশের মানুষ তো বটেই, বিদেশিরাও লাইন দিয়ে বিস্কুট কিনত বাপুর থেকে। রয়্যাল বিস্কুটের এই নামডাক মার্ডক ব্রাউন নামে এক সাহেবের কানে পৌঁছয়। তিনি বাপুর কাছে ক্রিসমাস কেক বানানোর আবদার করে বসেন। এদিকে কেক বানানোর পদ্ধতি প্রায় কিছুই জানতেন না বাপু। সহায় হন, খোদ মার্ডক সাহেবই। তিনিই কেক বানানোর রেসিপির বাপুর হাতে তুলে দেন। কিন্তু এতেও সমস্যা মিটল না। ব্রাউনের রেসিপিতে কেক বানানোর জন্য ফ্রেঞ্চ ব্রান্ডির উল্লেখ ছিল। এমনকি এও লেখা ছিল, এই মদ ছাড়া কেক তৈরি অসম্ভব। এদিকে চেষ্টা করেও ওই বিশেষ মদ বাপু জোগাড় করতে পারেননি। তাই খানিক ঝুঁকি নিয়েই, দেশি মদ ব্যবহার করে বানিয়ে ফেলেন কেক। আশ্চর্যভাবে সেই কেক এতটাই সুস্বাদু হয়, সবাই ইংলিশ কেক ছেড়ে ওই কেক খেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে বিস্কুটের পাশাপাশি বাপুর কেক-ও বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এখনও যা বহাল তবিয়তে রয়েছে। কেরালা ঘুরতে গেলে ওই দোকানে একবার হলেও ঢুঁ মারেন পর্যটকরা। অনেকেই দাবি করেন, এমন কেক গোটা দেশে আর কোথাও পাওয়া সম্ভব না। যদিও বর্তমানে নিজেদের আরও শাখা খুলেছে রয়্যাল বেকারি। কেরালা বাদে অন্যান্য জায়গায় নামও বদলেছে। তবে স্বাদ তেমন বদলায়নি। ইংরেজদের প্রশংসা করে যাওয়া সেই কেকই এখনও রমরমিয়ে বিক্রি হয় দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে।
==০==