বিশ্বকাপের ফাইনালে ধোনিকে রান আউট করেছিলেন গাপ্তিল। সারা ভারতবর্ষ সেই মুহূর্তের কথা ভুলতে পারে না। ভুলতে পারেননি স্বয়ং গাপ্তিলও। না, নেহাত ক্রিকেটীয় দক্ষতার কারণেই যে সে-কথা তাঁর মনে থেকে গিয়েছে, তা নয়। আছে অন্য একটা কারণও। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মহেন্দ্র সিং ধোনি রান আউট। সারা ভারতবাসীর কাছে বজ্রপাতের মতো নেমে এসেছিল এই একটা তথ্য। সেটা ২০১৯-এর বিশ্বকাপ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ভারত আর বিশ্বকাপের মধ্যে বড় হয়ে দেখা দিল ওই এক চিলতে দূরত্বই। চার বছর পর আরও একটা বিশ্বকাপ চলে গিয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এবারও ভারত প্রত্যাশিত জয় পায়নি। তবু, এখনও ফিরে এসেছে পুরনো সেই দিনের কথা। কেননা সেদিনকার নিউজিল্যান্ডের নায়ক মার্টিন গাপ্তিল বলছেন, সেই ঘটনার দরুন মেল মারফত আজও কুকথা শোনেন তিনি।
আরও শুনুন: বিশ্বকাপে পা রেখে মাথায় বাজ! মার্শের বিরুদ্ধে এফআইআর যোগীরাজ্যে
ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। এ কথা সবাই জানেন। তবু, ভারতের মতো দেশে প্রত্যাশার পারদ এতটাই চড়া থাকে যে, সামান্য ভুলচুকও মেনে নিতে প্রস্তুত থাকেন না সমর্থকরা। তা সত্ত্বেও, খেলা তো খেলা-ই। তা চলে নিজের নিয়মে। সেদিনের সেমিফাইনালেও চলছিল ক্রিকেটীয় যুদ্ধ-ই। ২৪০ রান তাড়া করছিল ভারত। হার্দিক পান্ডিয়া এবং ঋষভ পন্থ ফিরে গিয়েছেন। রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে পার্টনারশিপ গড়ে তুলছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনি ক্রিজে থাকা মানেই ভারতের আশার সূর্য অস্ত যায় না। শেষ বলেও বিস্ময়কর ভাবে ম্যাচ জিতিয়ে দেন তিনি। অতীতে তাঁর ব্যাট থেকে এমন বহু স্মরণীয় জয় এসেছে। অতএব, অটুট বিশ্বাসে সেদিকেই তাকিয়ে বসেছিলেন কোটি কোটি ভারতবাসী। আচমকাই গাপ্তিলের তুখড় ব্রিলিয়ান্সে সব শেষ হয়ে যায়। ফার্গুসনের বলে ব্যাট ছোঁয়াতে সামান্য দেরি করে ফেলেছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার ধোনি। ঠেলে দিয়েছিলেন স্কোয়ারের পিছনে। সকলেই জানেন, ক্রিজে ধোনির গতি কতখানি ক্ষিপ্র। দ্বিতীয় রানের জন্য ধোনি যখন দৌড় শুরু করেছেন, তখনই ফাইন লেগ থেকে বলটা তুলে নিয়ে উইকেট লক্ষ্য করে ছুড়ে দেন গাপ্তিল। ধোনি পপিং ক্রিজে পৌঁছনোর আগেই বল ছুঁয়ে ফেলে উইকেটকে। এক লহমায় শেষ হয়ে যায় ভারতের সব আশা-ভরসা। চোখের জল গোপন করে মাঠ ছাড়েন ধোনি।
আরও শুনুন: শুধু ধর্ম ধর্ম! তোমার ক্রিকেট নেই, ভারতবর্ষ!
সেই মুহূর্তের কথা আজও ভুলতে পারেন না গাপ্তিল। বলেন, এক-একটা মুহূর্তে এরকমই আশ্চর্য ঘটনা ঘটে যায়। তিনি নিজেও তখন ভাবেননি যে বলটা স্টাম্প ছুঁতে পারবে। শুধু বলটা দেখে উইকেট লক্ষ্য করে ছুড়ে দিয়েছিলেন। ভাগ্য সহায়! যা ভাবেননি, তাই-ই বাস্তব হয়েছিল। মাত্র ইঞ্চিখানেক দূরত্বের জন্য থমকে গিয়েছিল ভারতের বিশ্বজয়ের আশা। তবে এখন সে কথা আবার কেন ফিরে আসছে? গাপ্তিল বলছেন, এই এক মুহূর্তের জন্যই তিনি গোটা ভারতের কাছে ‘ভিলেন’ হয়ে গিয়েছিলেন। ভারত থেকে তিনি নাকি বহু মেল পেয়েছেন যেখানে তাঁকে তুলোধনা করা হয়েছে। মনে মনে ভারতীয় সমর্থকরা যে তাঁকে ঘৃণা করেন, সেইসব মেল দেখেই বুঝেছিলেন গাপ্তিল। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে।
খেলায় এমন আকস্মিকের মুহূর্ত আসে। ধোনি, গাপ্তিল দুজনেই তা জানেন। পরবর্তীতে তাঁরা অন্য টুর্নামেন্টে একসঙ্গে খেলেওছেন। তবু যেন সমর্থকদের মন মানে না। ভারতের মতো দেশে ক্রিকেট যে আবেগের স্রোতে ভাসে, তা গাপ্তিল জানেন। ক্রিকেটীয় ব্রিলিয়ান্সে তাই জিতে গিয়েও শুনেতে থাকেন কুকথা। সে যাই হোক, ক্রিকেটের ইতিহাসে ওই একটা মুহূর্ত স্মরণীয় হয়েই থাকবে। স্মরণীয় হয়ে থাকবেন গাপ্তিলও।