চিতাতেই নাকি শেষ হয়ে যায় জীবনের সব হিসেব-নিকেশ। সত্যি কি তাই? ওড়িশার সাম্প্রতিক ঘটনা বলছে, এমনকী মৃত্যুর পরও জিইয়ে রয়েছে জাতিভেদ। আর তাই শ্মশানেও জারি নির্দেশ যে, ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কারও শব দাহ হবে না। তা নিয়েই সরব প্রতিবাদীরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভারতবর্ষে জাতিবৈষম্যের উদাহরণ নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের এ প্রথা মুছে ফেলতে যত চেষ্টাই করা হোক না, কোনও না কোনও ভাবে তা থেকেই যায়। ভারতবাসী মেধার জোরে চাঁদের ওপিঠে ‘যান’ পাঠাতে পারে, তবু মন থেকে জাতিভেদ মুছতে পারে না। এমনকী মৃত্যুর পরও তা থেকে নিষ্কৃতী নেই। সম্প্রতি ওড়িশার এক শ্মশানে নির্দেশনামা দিয়ে জানানো হয়েছে যে, সেখানে ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কোনও সম্প্রদায়ের শব দাহ করা হবে না। আর তা নিয়েই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরা। মৃত্যুর পরেও কেন এই বৈষম্য, সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: ‘ভূতে ধরেছে’ মহিলাকে! মুসলিম হলে তবেই ‘ঝাড়ফুঁক’, যোগীরাজ্যে অদ্ভুত দাবি মৌলবির
সে-রাজ্যের কেন্দ্রপাড়া অঞ্চলের এই শ্মশানের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। জানা যায়, সেই ১৯২৮ সাল থেকে এই শ্মশানে ব্রাহ্মণদের দাহ করার প্রথাই চলে আসছে। দীর্ঘদিনের সেই প্রথায় এখনও দাঁড়ি টানার কোনও ইচ্ছে নেই। বরং নতুন করে নির্দেশ দিয়ে সেই বৈষম্যের কথাটাকেই আরও জোর দিয়ে বলা হয়েছে। আপত্তির জায়গা এখানেই। শ্মশানের মতো স্থান, যেখানে সকলেরই জায়গা হওয়া উচিত, সেখানে যখন এরকম নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তখন তা অন্যদের অসম্মান করা হচ্ছে বলেই দাবি উঠেছে। এই প্রতিবাদ মূলত উঠেছে দলিত সম্প্রদায় থেকেই। তাঁদের বক্তব্য, শ্মশান পরিচালন কর্তৃপক্ষের তো জাতি-ধর্ম ভেদ নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা নয়। বরং সে সব নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মৃতদেহ দাহ করারই অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল। তার পরেও যখন এরকম বৈষম্যমূলক নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তা বেআইনি হয়ে ওঠে। অভিযোগ এমনটাই। একই মত সে রাজ্যের বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও।
আরও শুনুন: ৩৪ লিটার মদ্যপান! নেশায় এক মাস কাবু যুবক! গড়লেন নতুন রেকর্ডও
আইন নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই ভারতের মতো দেশে দলিতরা জাতিবৈষম্যের শিকার। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরোতে হয় তাঁদের। সেখানে মৃত্যুর পরেও যদি এই প্রতিকূলতা একেবারেই কাম্য নয়। এর আগে প্রায় একই রকম ইস্যুতে আদালতের ভর্ৎসনার শিকার হয়েছিল তামিলনাড়ু প্রশাসন। দলিতদের জন্য আলাদা শ্মশানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেখানে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, তা পরোক্ষে জাতিভেদ প্রথাকেই ইন্ধন দিচ্ছে।
ওড়িশার এই শ্মশানের ক্ষেত্রেও অভিযোগ সেটাই। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ কি আদৌ কাম্য? সে প্রশ্নই তুলেছেন প্রতিবাদীরা।