আলোর উৎসবে বাজি ফাটানোর চল বহুদিনের। তবে সেই আনন্দ অনেকের কাছেই ত্রাস। কুকুর, বিড়ালের মতো অবলা প্রাণীরা বাজির শব্দ সহ্য করতে পারে না। সেইসঙ্গে দূষণের জেরে ক্ষতি হয় পাখিদেরও। সেই নিয়ে অবশ্য অধিকাংশেরই মাথাব্যথা নেই। ব্যতিক্রম তামিলনাড়ুর এই গ্রামগুলি। আসুন শুনে নিই।
দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। কিন্তু অনেকের কাছেই, বাজি না ফাটালে উৎসবের আনন্দ অধরা থেকে যায়। পরিবেশ দূষণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বছরের এই একটা দিন বাজি ফাটাতে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। তার মধ্যে আলোর বাজি যেমন থাকে, শব্দবাজিও থাকে যথেষ্টই। ব্যতিক্রম তামিলনাড়ুর এই গ্রামগুলি। দীর্ঘদিন ধরে এইসব গ্রামের বাসিন্দারা পালন করে আসছেন, ‘নীরব দীপাবলি’।
আরও শুনুন: দেখতে হুবহু পশু কিংবা পাখির মতো! এইসব ‘বহুরূপী’ গাছকে চেনেন কি?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এইসব গ্রামের বাসিন্দারা দীপাবলিতে একটিও বাজি ফাটান না। আলোর উৎসবে গোটা গ্রাম আলো দিয়ে সাজানোই তাঁদের প্রথম পছন্দ। নেপথ্যে রয়েছে অদূরে থাকা এক পাখিরালয়। কথা বলছি তামিলনাড়ুর ভাডামুঙ্গম ভেল্লোডে পাখিরালয় সম্পর্কে। সেখান থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থির ইরোড জেলা। এই জেলার মোট ৭ টি গ্রাম দীপাবলি পালন করেন এভাবেই। আসলে এই পাখিরালয় প্রতিবছর হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির ঠিকানা হয়ে ওঠে। ভিনদেশী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয় এই অক্টোবর নভেম্বরের মাঝামাঝি। তারপর অন্তত দু-তিন মাস ওই পাখিরালয়ে নিশ্চিন্তে দিন কাটায় তারা। মূলত বংশবৃদ্ধির জন্যই তাদের আগমন। তাই সেই কাজে পাখিদের যেন এতটুকু অসুবিধা না হয়, সে খেয়াল রাখেন পাখিরালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পাখিদের ভালোমন্দের কথা ভাবেন স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারাও। সেই কারনেই বাজি না ফাটানোর সিদ্ধান্ত।
আরও শুনুন: অভিনব বিয়ের আসর! মেয়ের বিয়েতে পশু-পাখিদেরও নিমন্ত্রণ কৃষকের
সাতটি গ্রাম মিলিয়ে মোট ৯০০ জনের বাস ওই অঞ্চলে। তাঁদের কেউই দীপাবলিতে বাজি ফাটান না। আসলে যে কোনও বাজি থেকেই দূষণের আশঙ্কা থাকে। যা রীতিমতো সমস্যার কারণ হতে পারে ওই ভিনদেশি পাখিদের জন্য। একইসঙ্গে শব্দ বাজিও তাদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠতে পারে। তাই কোনওভাবেই বাজি ফাটিয়ে পাখিদের বিরক্ত করতে চান না গ্রামবাসীরা। আর এই নিয়ম আজকের নয়। বিগত দু-দশক ধরে আলোর উৎসব স্রেফ আলো জ্বালিয়েই উদযাপন করে আসছেন তাঁরা। আসলে আমাদের দেশে অতিথিকে নারায়ণ মনে করা হয়। হোক না পাখি, তবু সে তো অতিথি হয়েই এসেছে। তাই তার এতটুকু ক্ষতি করতে নারাজ এখানকার মানুষ। শুধু তাই নয়, পরিযায়ী পাখি ছাড়াও ওই পাখিরালয় হাজার হাজার পাখির স্থায়ী ঠিকানা। বাজি ফাটালে অসুবিধায় পড়বে তারাও। তাই সব দিক ভেবেই এমন নিয়ম চালু করেছে ওই গ্রামের মানুষজন।