শাহরুখ, ভিকি থেকে আরম্ভ করে রাজনৈতিক নেতা। লালবাগের রাজা গণেশের দর্শণ বাকি রাখেননি কেউই। সেইসঙ্গে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভিড় জমিয়েছেন মুম্বইয়ের এই প্রসিদ্ধ মণ্ডপে। স্বাভাবিকভাবেই জমা পড়েছে মোটা অঙ্কের অনুদানও। কিন্তু সেই পরিমাণ যে দুদিনেই কোটি টাকা ছাড়াতে পারে, তা ভাবেননি অনেকেই। আর কী জমা পড়েছে অনুদান হিসেবে? আসুন শুনে নিই।
গণেশ চতুর্থী পেরিয়েছে সদ্যই। কিন্তু মুম্বইয়ে এখনও শেষ হয়নি গণপতি উৎসব। আরও বেশ কয়েকদিন গণেশ পুজোয় মেতে থাকবে বাণিজ্য নগরী। ইতিমধ্যেই পাল্লা দিয়ে ভিড় জমছে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে। তবে দর্শণের তালিকায় লালবাগের রাজা গণেশ রয়েছেন সকলেরই। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে সেই বিখ্যাত গণেশ মণ্ডপে জমা পড়া অনুদানের পরিমাণ।
আরও শুনুন: ক্রিকেটেও শিবঠাকুর! ত্রিশূল, ডমরু, বেলপাতায় সাজছে বারাণসীর স্টেডিয়াম
জানা গিয়েছে, গণেশ চতুর্থী ও তার পরেরদিন মিলিয়ে মুম্বইয়ের এই মণ্ডপে জমা পড়েছে মোট ১.২ কোটি টাকা। তার মধ্যে দ্বিতীয় দিনেই জমা পড়েছে ৬০ লাখেরও বেশি। শুধু টাকাই নয়, জমা পড়েছে সোনা রুপোর গয়নাও। দাম যতই আকাশছোঁয়া হোক, লালবাগের রাজা গণেশের কাছে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৮৪ গ্রাম সোনা দান করেছেন ভক্তরা। জমা পড়েছে ৬২২ গ্রাম রূপোও। তবে এই সবই দুদিনের হিসাব। মণ্ডপে মূর্তি থাকবে আরও ৮ দিন।
তবে এই গণেশ এত জনপ্রিয় কেন?
আরও শুনুন: জার্সির ভাঁজে যত্নে রাখা হারানো জীবন, বদলে গেলেও তাকে ফেলে দেওয়া যায় না
আসলে, মুম্বইয়ের এই গণেশ পুজোয় অংশ নেন হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের মানুষই। সাম্প্রদায়িকতার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে সম্প্রীতির এক মানবিক আখ্যান রচনা করেন তাঁরা। স্রেফ গণপতি নয়, এখানে তাঁকে রাজা বলেই অভিহিত করেন ভক্তরা। এমনিতেই মুম্বাই শহর জুড়ে গণেশের অপ্রতিহত রাজত্ব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে একাধিক বলি তারকাও তাঁর আরাধনা করেন। চলতি বছরেও লালবাগ দর্শণ সেরেছেন, শাহরুখ খান, ভিকি কোশল, কার্তিক আরিয়ানরা। খেলোয়াড়রাও রয়েছেন তালিকায়। সেইসঙ্গে সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজনৈতিক মহলের বেশ কিছু চেনা মুখ দর্শন সেরেছেন লালবাগের রাজার। তাই গণেশের পুজোয় হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের মানুষের অংশ নেওয়া এখানে যে খুব নতুন ব্যাপার তা কিন্তু নয়। তবে লালবাগের পুজো তার মধ্যেও একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। কারণ এই পুজোয় বরাবরই জনতার ঢল নামে। ১৫ ফুট উঁচু এই মূর্তির বিসর্জনের দিন ৭ কিলোমিটার পথ দূরের ঘাটে পায়ে হেঁটে যান লক্ষ লক্ষ মানুষ। ২০ ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে এই পদযাত্রা। এই পথে একাধিক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাও রয়েছে। যাতে কোনও সাম্প্রদায়িক অশান্তি না বাধে, তাই বরাবরই গোটা পথ জুড়ে পাহারায় মোতায়েন থাকে প্রচুর পুলিশ। কিন্তু কোনও দিনই এই বিসর্জনে কোনোরকম অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। আর সেই পরম্পরাই এখনও বয়ে নিয়ে চলেছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। দেশজোড়া অশান্তির প্রেক্ষিতে একটুকরো শান্তির মরূদ্যান জিইয়ে রেখেছেন তাঁরা।