কেউ খুন করেছে। কেউ বা ছিনতাই। কারও অপরাধ আরও গুরুতর। দিন নেই রাত নেই, তাদের জেরা করে চলেছে পুলিশ। মাঝেমধ্যেই পড়ছে ‘দাওয়াই’। ভেসে আসছে চিৎকার। থানার ভিতরের এই ছবি সকলেরই চেনা। কিন্তু এরই মাঝে খেলা করে বেড়াচ্ছে চার বছরের এক খুদে। চারিদিকে কী হচ্ছে তা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই তার। বরং সামনে থাকা কনস্টেবলের চশমার দিকেই তার নজর। সুযোগ পেলেই একটানে খুলে নেবে সেই ‘লোভনীয়’ জিনিস। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এমন পরিবেশে ওই খুদে এল কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
খুনের দায়ে অভিযুক্ত বাবা-মা। দুজনকেই বন্দি করেছে পুলিশ। এদিকে বাবা-মা ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এই চার বছরের খুদের। তার সঙ্গে অবশ্য মাত্র এক বছর বয়সী বোনও রয়েছে। তাই তাদের ঠিকানাও আপাতত থানাতেই। তবে এসবের কিছুই যেন বুঝতে পারেনি ওই খুদে। বাবা-মা কেন গারদের ওপারে রয়েছে, সে নিয়ে কোনও প্রশ্নও নেই তার। কারণ তাকে এমন কোনও প্রশ্ন করার অবকাশই দেওয়া হয়নি। আর সেই কাজ করেছেন ওই থানার পুলিশকর্মীরাই।
আরও শুনুন: জাতির উন্নতিতে অবিরাম কাজ, ‘গরিবদরদি’ মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রাক্তন বিচারপতি
ঠিক কী ঘটেছে?
তাহলে খুলেই বলি। ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের। সেখানকার নাইগাঁও accouএলাকায় কিছুদিন আগে খুনের অভিযোগে ধরা পড়েন এক দম্পতি। অভিযোগ, তাঁরা বছর ৩৪-র এক ব্যক্তিকে খুন করেছেন। ঠিক কী কারণে এই হত্যা তা এখনও তদন্তাধীন। তবে জানা গিয়েছে, খুনের পর মৃতদেহ নিয়ে প্রায় ১৭০ কিমি দূরে ফেলে আসে ওই দম্পতি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেহটি নষ্ট করে দেওয়ার। তার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছিলেন ওই দম্পতি সে কথাও পুলিশি জেরায় প্রকাশ্যে এসেছে। তবে এত পরিকল্পনা করেও কার্যত লাভ হয়নি। পুলিশের কাছে ধরা পড়েন দুজনেই। খুনের দায়ে অভিযুক্তের আপাতত ঠাঁই হয়েছে গারদের ওপারে। কিন্তু এই ঘটনার জেরে কার্যত বিপাকে পড়েছিল ওই দম্পতির দুই সন্তান। যাদের একজনের বয়স চার আরেকজনের মাত্র এক। এইটুকু বয়সে তারা কোথায় যাবে? আদালতে সেই প্রশ্নই তোলেন পুলিশ কর্তারা। আর তখনই বিচারপতি নির্দেশ দেন, দুই খুদেকে থানাতেই রাখতে।
ব্যাস সেই থেকেই দুজনের ঠিকানা হয়েছে নাইগাঁও থানা। যদিও সেখানে দুজনের বাবা-মাও রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই দুজনেরই। যদিও ছোটটি মায়ের কোলের বেশিক্ষণ কাটাচ্ছে। তবে বড়জন গারদের ধারকাছ মাড়াচ্ছে না। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে খুনসুটি করেই দিন কাটছে তার। কখনও কারও চশমা নিয়ে দে ছুট, আবার কখনও পরদার আড়ালে লুকিয়ে ‘টুকি’। সারাদিন থানা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে। আর এই নিয়ে কোনও আপত্তি নেই পুলিশকর্মীদেরও। বরং তাঁরা রীতিমতো উপভোগ করছেন ওই খুদের কাণ্ডকারখানা। পুলিশকর্মীদের দাবি, কর্মক্লান্ত দিনের শেষে ওই খুদেই তাঁদের স্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। অপরাধ জগতের অন্ধকারে আলো ফোটাচ্ছে ওই খুদের হাসি। তাই আপাতত তাকে নিয়েই মেতে রয়েছে গোটা থানা। তবে ইতিমধ্যেই শিশুকল্যাণ দপ্তরে খবর দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে ওই খুদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়দেরও। মনে করা হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই তাদের কারও জিম্মায় রেখে আসা হবে খুদেকে। তবে তার আগে অবধি খুদের দুষ্টুমিতেই মজে থাকতে চান পুলিশকর্মীরা।