মোট কত মানুষকে যে সে খুন করেছে, তার হিসেব ছিল না পুলিশের কাছেও। তীব্র বিষ সায়ানাইড-ই হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার খুন করার হাতিয়ার। চরণামৃতে সেই বিষ মিশিয়েই একের পর এক মেয়েকে খুন করত সায়ানাইড মল্লিকা নামে কুখ্যাত এই মহিলা সিরিয়াল কিলার। শুনে নেওয়া যাক সেই হাড় হিম করা কাহিনি।
বেছে বেছে মহিলাদেরই খুন করত এই মহিলা সিরিয়াল কিলার। তারপর মৃতদেহের থেকেই লুঠ করত টাকা আর গয়না। আর এই উপায়েই দরিদ্র জীবন ছেড়ে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল সে। হ্যাঁ, স্রেফ লোভের বশেই সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠেছিল কেডি কেম্পাম্মা। অপরাধ দুনিয়ায় যার পরিচয় সায়ানাইড মল্লিকা।
আরও শুনুন: পুলিশের ঘুম ছুটিয়েছিল কলকাতার প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার
আসলে ছোটখাট অপরাধ দিয়েই প্রথমে হাত পাকাতে শুরু করেছিল এই মহিলা। কর্ণাটকের দরিদ্র পরিবারের মেয়েটির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল অল্প বয়সেই। স্বামী পেশায় দরজি। ফলে অভাব সেখানেও পিছু ছাড়েনি। সংসার চালানোর জন্য পরিচারিকা হিসেবে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতে শুরু করে কেম্পাম্মা। কিন্তু গোল বাধে সেখানেই। পরিচারিকা রাখতে পারার মতো সামর্থ্য ছিল যেসব পরিবারে, সেই পরিবারগুলি যে মোটামুটি সম্পন্ন এ কথা বলাই যায়। আর তাদের জীবনযাপনই কেম্পাম্মাকে লোভের হাতছানি দিয়েছিল। তাদের মতো করেই নিজের ভাঙাচোরা জীবনকে সাজাতে চেয়েছিল সে। আর তাই, যেসব বাড়িতে সে পরিচারিকার কাজ করত, সেই বাড়িগুলিতেই ছোটখাটো চুরি করা শুরু করে এই মহিলা। কিন্তু একসময় ধরা পড়ে যায় সে। যেতে হয় শ্রীঘরে। জেল থেকে ফিরেও আর স্বামীর কাছে ঠাঁই হয়নি তার। আর এরপরেই অপরাধের কালো দুনিয়ায় নিজের আশ্রয় খুঁজে নেয় কেডি কেম্পাম্মা। ধনী হওয়ার নেশায় আর ছোটখাট ছিঁচকে চুরি নয়, সরাসরি খুনের পথে পা বাড়ায় এই মহিলা। বেছে বেছে ধনী মহিলাদেরই নিশানা করত সে। বিশেষ করে সেইসব মহিলা, যাদের অর্থ সম্পত্তি থাকলেও মানসিক শান্তি ছিল না, ধর্মের ছুতোয় তাদের হাত করে ফেলত সে। আর ধর্মকে হাতিয়ার করেই খুন করার জন্য নিজস্ব এক অস্ত্রও বানিয়ে নিয়েছিল সে। তা আর কিছুই নয়, স্রেফ চরণামৃত। তাতেই তীব্র বিষ সায়ানাইড মিশিয়ে একের পর এক মেয়েকে খুন করত এই মহিলা। এই অভিনব পদ্ধতির কারণেই ধরা পড়ার পর পুলিশের খাতায় তার নাম হয়ে যায় সায়ানাইড মল্লিকা।
আরও শুনুন: কিশোরীদের রক্তে স্নান, ৬০০ জনকে খুন, কুখ্যাত মহিলা সিরিয়াল কিলারের রুদ্ধশ্বাস গল্প
পরবর্তী কালে পুলিশ জানিয়েছিল, কার বিয়ে হচ্ছে না, কে নিঃসন্তান, কার স্বামী অন্য সম্পর্কে জড়িত, এমন সব সাংসারিক সমস্যায় জড়িয়ে থাকা মহিলাদের খুঁজে নিত কেম্পাম্মা। আর এখনও যেভাবে বশীকরণের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, প্রায় সেরকমই কায়দায় টোপ দিত সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার। এই অছিলায় ওই মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াত কেম্পাম্মা। তারপর পুজোর ছল করে কোনও নির্জন স্থানে ডেকে পাঠাত ওই মহিলাকে। সেখানেই বিষ মেশানো ওই চরণামৃত পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন অসহায় মহিলাটি। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বেঙ্গালুরুর বাইরে মমতা রাজন নামে এক মহিলাকে খুন করেছিল কেম্পাম্মা। সেবার অবশ্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল বিষ। ২০০৬ সালে এক মহিলাকে খুন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় সে। কিন্তু পুলিশের নজর পড়ে তার উপরে। ফের জেলে যেতে হয় তাকে। আর ছাড়া পেয়েই নিজের কাজের ধরন বদলে ফেলে কেম্পাম্মা। শুরু হয় মারণ চরণামৃত দিয়ে একের পর এক খুন। খুনের এই বিশেষ ধরনটি পুলিশের নজর আকর্ষণ করেছিল। আর সেই সূত্র ধরে তদন্ত করতে করতেই কেম্পাম্মার কাছাকাছি পৌঁছে যান তাঁরা। অবশেষে ২০০৮ সালে আরও একটি হত্যার পর পালানোর সময় তাকে বমাল গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শেষ হয় সায়ানাইড মল্লিকার সিরিয়াল কিলিং-এর ধারা।