চাকরি কিংবা ব্যবসা নয়। বিগত ১৩ বছর ধরে, অন্দরমহলের যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছেন মহিলা। প্রতিদিন নিয়ম করে বাড়ির সব কাজ করেছেন। আর নিজের সিভিতে সেই কথাই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। সাধারণত সিভিতে বাইরের পেশাকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, ঘর সামলানোকে সেখানে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেন না কেউই। তাই এই মহিলার সিভি দেখে বেশ অবাক হয়েছেন অনেকেই। আসুন শুনে নিই।
বাইরে চাকরি করতে গেলেই সেটা কাজ। কিংবা নিদেনপক্ষে ব্যবসা। অন্তত কিছু একটা উপার্জন না হলে, সে কাজের কোনও মানে হয় না। এই ধারণা কোনও একজনের নয়, সমাজের সিংহভাগ মানুষ এমনটাই মনে করেন। তাই যারা বাড়িতে থাকেন, অর্থাৎ ঘরের যাবতীয় দায়িত্ব সামলান, তাঁদের আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ এই সমাজের অনেকেই। এমনকি যাঁদের কথা বলছি, সেই গৃহবধূদেরও অনেকেই মনে করেন না, তাঁরা বিশেষ কোনও কাজ করছেন।
আরও শুনুন: ভরপেট খেয়ে আয়েশে ঘুম! বিছানা পেতে খাদ্যরসিকদের জন্য অভিনব ব্যবস্থা রেস্তরাঁয়
ব্যতিক্রম এই মহিলা। ঘর সামলানোর কাজও যে ফেলনা নয়, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় জীবনলিপি বা বায়োডাটা জমা দিতে হয়। সেখানে যাবতীয় কেজো অভিজ্ঞতার কথা স্পষ্ট করে লিখতে হয়। কবে থেকে কাজ শুরু করেছেন, কিংবা কোন সংস্থায় কতদিন কাজ করেছেন তা তারিখ অনুযায়ী লিখে রাখতে হয়। অভিজ্ঞতার বিচারে অনেকসময় চাকরি পাওয়া বা না পাওয়া নির্ভর করে। তাই দীর্ঘদিনের কর্মবিরতির কথা বায়ডাটায় উল্লেখ করেন না কেউই। কিছু না হলে, নিজের কোনও শখের কথা সেখানে লিখে রাখেন কেউ কেউ। কিন্তু এই মহিলা তেমনটা করেননি। ২০০৯ সালে বিভিন্ন কারণে চাকরি থেকে বিরতি নেন তিনি। তারপর দীর্ঘ ১৩ বছর নতুন কোনও চাকরিতে যোগ দেননি। ব্যবসাও করেননি। আলাদাভাবে উপার্জন ছিল না বললেই চলে।
তাহলে এতদিন তিনি করেছেন কী?
আরও শুনুন: শ্রাবণমাসে ‘হালাল’ চা দেওয়া হয়েছে বন্দে ভারতে! রেলযাত্রীর অভিযোগে ব্যাপক শোরগোল
ঘরের দায়িত্ব সামলেছেন। বাড়ির যাবতীয় যা কাজ সব এতদিন ধরে তিনিই করেছেন। প্রায় সকলের বাড়িতেই এমন একজন মানুষ সহজে খুঁজে পাওয়া যায়, যিনি নিজে উপার্জনের তাগিদে বাড়ির বাইরে পা রাখেন না। কিন্তু তাঁকে ছাড়া অন্য কারও বাড়ির বাইরে পা রাখার উপায় নেই। সকলের খাবারের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় খুঁটিনাটি কাজ, সবই তিনি সামলান। অথচ এঁদের আলাদাভাবে কোনও স্বীকৃতি দিতে চান না সমাজের একটা বড় অংশ। এই মহিলা সেই সম্মানটাই যেন ছিনিয়ে নিতে চেয়েছেন। নিজের সিভিতে স্পষ্ট করে লিখেছেন, বিগত ১৩ বছর ঘরের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সকলের খাবারের ব্যবস্থা করা, ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠানো, বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের খেয়াল রাখা সবকিছুই একা হাতে সামলেছেন তিনি। ঠিক যেমনভাবে, কোনও সংস্থায় কী কী কাজ করা হয়েছে তার হিসেব দেওয়া হয় সিভিতে, এই মহিলাও তেমনভাবেই ঘরের ভিতর তাঁকে ঠিক কী কী করতে হত তার হিসাব দিয়েছেন। আর এমন সিভি দেখেই বেজায় অবাক সকলে। প্রথমে অবশ্য এই সিভি চোখে পড়ে, যে সংস্থায় কাজের জন্য মহিলা আবেদন করেছিলেন তার কর্ণধারের। তিনিই এই অভিনব সিভিটির ছবি নেটদুনিয়ায় পোস্ট করেন। সেখানে প্রায় সকলেই মহিলাকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন। সকলেই অবাক হয়েছেন মহিলার সৎ সাহস দেখে। প্রতিযোগিতার বাজারে অনেকেই আরও ভাল চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। সেক্ষেত্রে সিভি তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। কেউ কেউ টাকা দিয়েও সুদৃশ্য প্রফেশনাল সিভি বানিয়ে থাকেন। সেখানে এমনভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কর্মঅভিজ্ঞতার কথা লেখা থাকে, যে তা সকলেরই চোখে পড়তে বাধ্য। কিন্তু তেমন কিছু না করেই এই মহিলার সিভি ঘিরে এমন চর্চা শুরু হয়েছে। নেটদুনিয়ার অনেকেই মনে করছেন, নিজের প্রতি সৎ থাকা এবং কোনও কাজকেই ছোট করে না দেখার জোরে এই সম্মান পেয়েছেন ওই মহিলা।