এই গ্রামের নাম শুনলেই আত্মারাম খাঁচা হয় অনেকের। অথচ মানচিত্রে এর কোনও অস্তিত্বই নেই। লোকশ্রুতি আর প্রবাদের উপর ভর করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই ভূতুড়ে গ্রাম। কথিত আছে, একবার কেউ যদি এই গ্রামে গিয়ে হাজির হন, তাহলে ফিরে আসার কিন্তু কোনও উপায় নেই। আর লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে এই গ্রামকে কেন্দ্র করে? আসুন শুনে নিই।
ভূতের গল্প অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু বাস্তবে যদি ভূতের সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়, তাহলে কতজন এগিয়ে আসবেন সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সাহস করে কেউ যদি এগিয়েও আসেন, তাহলে বিপদ কিন্তু অনিবার্য। অন্তত জাপানের এই গ্রামে গেলে তো বটেই। মানচিত্রে এর উল্লেখ পর্যন্ত নেই। অথচ এর নাম শুনলে পিলে চমকে ওঠে অনেকেরই।
আরও শুনুন: জনমানবহীন, শূন্য কবরও, ‘মৃতদের গ্রাম’ থেকে রাতারাতি উধাও হয়েছিল সবকিছু
কথা বলছি জাপানের ইনুনাকি গ্রাম সম্পর্কে। সে দেশের অনেকেই এই গ্রাম সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সজ্ঞানে তাঁদের কেউই এখানে যাওয়ার সাহস দেখান না। গেলেই যে মৃত্যু। একাধিকবার তেমনটা ঘটেওছে। তাই চরম অবিশ্বাসীও প্রাণের ভয়ে এই গ্রামের নাম মুখে আনেন না। জাপানের মানচিত্রে এর উল্লেখ নেই। কথিত আছে, এর একদিকে পাহাড় আরেকদিকে নদী। সেই দুটির নামানুসারেই গ্রামের নাম ইনুনাকি। তবে জনশ্রুতি বলে, এই গ্রামের বাসিন্দারা জাপানের সংবিধান মানেন না। তাই এখানে গেলে ওই গ্রামের নিয়ম মেনেই থাকতে হবে। তবে গ্রামটি খুঁজে পেতে গেলে ধরতে হবে ইনুনাকি সুড়ঙ্গের রাস্তা। গ্রামের যাবতীয় ভূতুড়ে কিংবিদন্তির মূলে রয়েছে ওই সুড়ঙ্গটিই। একসময় এই সুড়ঙ্গে এক শ্রমিককে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর আত্মাই নাকি ওই সুড়ঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। ইনুনাকি গ্রামে যাওয়ার পথে সবার আগে এই আত্মার দৌলতেই ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার শুরু হয়। তবে সুড়ঙ্গের পথ বেয়ে ঠিক কতদূর গেলে ওই গ্রামের দেখা মিলবে তা আজ অবধি কেউ জানেন না। যারাই সাহস করে খুঁজতে গিয়েছেন, বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা বা ড্রোনের সাহায্যেও সেই গ্রামের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তা অনেকেই একপ্রকার ধরে নিয়েছেন এই ভূতুড়ে গ্রামের কাহিনি সবটাই মেকি। কিন্তু তাহলে এত মানুষ কেন প্রাণ হারালেন? এই প্রশ্নেরই কোনও সঠিক উত্তর নেই। এমনটাও জনশ্রুতি রয়েছে, জাপানের এক জনমানবহীন অঞ্চলেএকটি টেলিফোন বুথ রয়েছে। সেখানে প্রতিরাতে অজানা নাম্বার থেকে অন্তত একবার টেলিফোন আসে। মনে করা হয়, ওই টেলিফোন আসে অদৃশ্য ইনুনাকি গ্রাম থেকে। কিন্তু টেলিফোনের কোনও উত্তর করলে চলবে না। তাহলেই মারাত্মক বিপদ। সেই ব্যক্তি সরাসরি হাজির হবে ইনুনাকি গ্রামে। সেইসঙ্গে নিজের উপর যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ হারাবেন তিনি। এখানেই শেষ নয়। গ্রামের খোঁজ যাওয়া যেসব ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের সকলকে ঘিরে তৈরি হয়েছে একটা করে লোকশ্রুতি। যার সত্যি মিথ্যে যাচাই করেন না কেউই। কিন্তু তাতে যে যথেষ্টই রোমাঞ্চ রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
আরও শুনুন: শহর জুড়ে বাড়িঘর, অথচ চিহ্ন নেই মানুষের! কী রহস্য এই মৃত নগরীর নেপথ্যে?
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এককালে এই নামে সত্যিই এক গ্রামের অস্তিত্ব ছিল। যদিও তাকে জনপদ বললেই ঠিক বলা হয়। ইতিহাস বলে, বার বার অন্য জনপদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ায় ইনুনাকি তার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারায়। গ্রামবাসীরাও একাধিকবার নিজেদের ঠিকানা বদলাতে বাধ্য হন। আর এভাবেই ইতিহাসের পাতা থেকে চিরতরে মুছে যায় ইনুনাকি। যদিও লোকশ্রুতির জোরে এই গ্রাম দিব্য টিকে রয়েছে। এই গ্রাম নিয়ে সিনেমাও নেহাত কম হয়নি। অস্তিত্ব থাকুক বা নাই থাকুক, এই গ্রাম ঘিরে প্রচলিত কাহিনীগুলি জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন উপন্যাস, টিভি সিরিজ কিংবা সিনেমার। স্রেফ জাপানে নয়, বিশ্বের দরবারে এই গ্রাম ঘিরে তৈরি হওয়া সিনেমা বিশেষ প্রশংসা পেয়েছে। সবটাই যদিও ভৌতিক। কিন্তু তাতে কি! বিশ্বজুড়ে ভূতুড়ে সিনেমার দর্শক যে নেহাতই কম নয়। তাঁদের সকলের কাছেই বরাবরের পছন্দ এই ইনুনাকি গ্রাম ও তার রহস্যের কাহিনি।