বহু দিন ধরে স্বপ্নটা দেখেছিলেন তিনি। এক কিংবদন্তি তারকার সেই স্বপ্ন পূরণের গল্প লিখলেন আরেক কিংবদন্তি। হ্যাঁ, এমন কথাই হয়তো এখন ভাবছেন ডেভিড বেকহ্যাম। ইংল্যান্ডের প্রবাদপ্রতিম প্রাক্তন ফুটবলার। তাঁর সেই বহুদিনের স্বপ্ন যে এভাবে পূরণ হবে তা কি তিনি নিজেও ভেবেছিলেন? কী ছিল তাঁর সেই স্বপ্ন? কীভাবেই বা তা পূরণ হল ? আসুন শুনে নিই।
সালটা ২০০৭। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে মেজর লিগ সকারের ক্লাব এল এ গ্যালাক্সিতে যোগ দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম। মেজর লিগ সকারের প্রথম ম্যাচ তিনি খেলেছিলেন ওই বছরের ২১শে জুলাই। সময়ের কী অদ্ভুত সমাপতন, ঠিক ১৬ বছর বাদে ২০২৩-এর ২১শে জুলাই ফুটবল জাদুকর মেসির পা পড়ল সেই মেজর লিগ সকারে। আর এই অসাধ্য সাধনের মূল কারিগর আর কেউ নন, স্বয়ং বেকহ্যাম।
আরও শুনুন: জোকারের নির্লিপ্তি ভেঙে অশ্রু ঝরালেন আলকারাজ, উইম্বলডনে অভিষেক নতুন নায়কের
বেকহ্যাম এখন আর প্রফেশনাল ফুটবলার নন। তিনি এখন মেজর লিগ সকারের একটি ক্লাব, ইন্টার মিয়ামির মালিক। যদিও মেসির দৌলতে সেকথা এখন সকলেরই জানা। তবে বেকহ্যামের জন্য কিন্তু শুরুটা সহজ ছিল না। ২০১৮ সালে যখন অফিশিয়ালি মিয়ামি মেজর লিগে খেলার ছাড়পত্র পায়, তখন লোকাল সাপোর্ট থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম, কোনও কিছুই ছিল না সেই ক্লাবের। তবুও বেকহ্যাম স্বপ্ন দেখেছিলেন। মনে করেছিলেন যে একদিন তাঁর দলে তিনি বিশ্বসেরা ফুটবলারদের নিয়ে আসবেন। নিজের দলকে পরিয়ে দেবেন তারার মুকুট। আর আজ ৫ বছর পর, সেই তাঁর দলেই কিনা যোগ দিয়েছেন বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের একজন, যাঁর নাম লিও মেসি?
গল্পটা ঠিক যেন রূপকথার মতো, তাই না? সত্যি বলতে, বেকহ্যাম অনেক বছর অপেক্ষা করেছেন মেসিকে তাঁর দলে সই করানোর জন্য। আদ্যোপান্ত মেসি অনুরাগী তিনি। কিন্তু ইন্টার মিয়ামি জার্সিতে বহুপ্রতীক্ষিত প্রথম ম্যাচে যেভাবে মেসি বেকহ্যামের স্বপ্ন পূরণ করলেন, তাতে এটা বলা যায় যে স্বয়ং বেকহ্যামকে এই স্ক্রিপ্ট লিখতে দিলে তিনিও এর থেকে ভালো স্ক্রিপ্ট লিখতে পারতেন না। জুলাই মাসের শেষে পিএসজির সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার পর মেসি অফিশিয়ালি মিয়ামি-তে যোগ দিয়েছেন। মেসিকে দলে নিয়েই ইন্টার মিয়ামি মুখোমুখি হয়েছিল ক্রুজ আজুলের বিরুদ্ধে, তাদেরই মাঠে। বলাই বাহুল্য এই ম্যাচের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। মেসিকে একবার স্বচক্ষে দেখার জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। যদিও সবাই জানতেন পুরো ম্যাচ খেলবেন না মেসি, তাও একটিবার তাকে দেখে জীবন সার্থক করার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে প্রস্তুত ছিলেন মেসির অগণিত ভক্তরা।
আরও শুনুন: শুধুই কি আনন্দ দেওয়ার যন্ত্র! নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই রক্তমাংসের মেসির?
প্রত্যাশামতোই মেসিকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখেই দল সাজান কোচ টাটা মার্টিনো। কথা ছিল তাঁকে মিনিট ৩০ খেলানোর। কিন্তু বিপক্ষ দল যে ক্রমাগত চাপ তৈরি করছিল, সেটা দেখেই কোচ সিদ্ধান্ত নেন মেসিকে আগে নামানোর। ৫০ মিনিটের মাথায় মাঠে নামেন জাদুকর। কিন্তু কে ভেবেছিল, প্রথম ম্যাচেই তাঁর অগণিত ভক্ত, তাঁর নতুন ক্লাবের সমর্থক, ক্লাব মালিকদের এত বড় উপহার দেবেন তিনি? যে ইন্টার মিয়ামি টানা ১১ ম্যাচ জয়ের মুখ দেখেনি, সেই দলকেই অতিরিক্ত সময়ে ফ্রি-কিক থেকে গোল করে জয়ের রাস্তায় ফেরালেন সেই এলএম-১০।
গোল করে আনন্দে ভাসলেন মেসি ও তার সতীর্থরা। মেসি তাঁর পরিবারের সঙ্গেও সেলিব্রেশন করলেন মাঠের পাশেই। তবে মাঠের বাইরে আরও একজন সেই সময়ে ভেসে যাচ্ছিলেন তাঁর স্বপ্ন পূরণের আনন্দে। তিনি আর কেউ নন, ডেভিড বেকহ্যাম। আনন্দে চিৎকার করলেন, লাফালেন, হাসলেন, উচ্ছ্বাসে জড়িয়ে ধরলেন স্ত্রী ভিক্টোরিয়াকে, যেন তিনি স্বচক্ষে যা দেখছেন তা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। এই জয় যতটা মেসির, যতটা ইন্টার মিয়ামির, তার থেকেও বোধহয় অনেকটা বেশি তাঁর। কিংবা এ জয় এক অর্থে ফুটবলেরও। বিশ্ব ফুটবল এখন এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যেখানে আরবের টাকার সামনে মাথা নত করছেন অনেক ফুটবলারই। মেসির কাছেও ছিল ফুটবলের ইতিহাসের সবথেকে বড় চুক্তির প্রস্তাব। কিন্তু শেষে সব উপেক্ষা করে মেসি যে ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দিয়েছেন এর সম্পূর্ণ কৃতিত্বটাই যে তাঁর! একমাত্র ডেভিড বেকহ্যামের।